দেশে তৈরি চ্যাটবট ব্যবহার হচ্ছে বিদেশে

31

দেশের বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট, ফেসবুক মেসেঞ্জারে এখন লাইভ চ্যাট করে প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া যাচ্ছে। বেশিরভাগেরই ধারণা, অপর প্রান্তে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনও কর্মী হয়তো গ্রাহকের প্রশ্ন জেনে উত্তর দিচ্ছেন। কিছুদিন আগ পর্যন্ত এমন ধারণা ঠিক ছিল। কিন্তু হালে এই ধারণার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির (এআই) ব্যবহার। এই প্রযুক্তি সহায়তায় সংশ্লিষ্ট সাইটগুলো যেসব উত্তর দিয়ে থাকে তা আসলে কোনও মানুষ দেয় না, দেয় যন্ত্র। যাকে ডাকা হচ্ছে চ্যাটবট নামে।
এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে চ্যাটবট। এর আদুরে নাম ‘বট’। এই বটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে মেসেঞ্জারে চ্যাটবট ব্যবহার করেছন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অন্তত ৭ থেকে ৮টি প্রতিষ্ঠান চ্যাটবট তৈরি করছে। একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি চ্যাটবট আবার দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পৌঁছে গেছে। ভুটানের একটি ব্যাংক ব্যবহার করছে ওই চ্যাটবট। ভারতের একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মও এটি ব্যবহার করছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
চ্যাটবট হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং যা কেবল আপনার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবে এবং এর মধ্যে আগে থেকে যা সেট করে রাখা থাকে সেটিই প্রদর্শন করে। আগে থেকে দিয়ে রাখা তথ্য আপনাকে জানাবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সাবেক পরিচালক ও চ্যাটবটের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমসিসি লিমেটেডের প্রধান নির্বাহী আশ্রাফ আবীর বলেন, চ্যাটবট নিয়ে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমরা ১১টি প্রতিষ্ঠানের জন্য চ্যাটবট তৈরি করেছি। তিনি বলেন, চ্যাটবট একটা মিডিয়া। এটা হতে পারে ফেসবুক মেসেঞ্জারের চ্যাটবট বা অন্য কোনোটার। মূলত মানুষের হয়ে যন্ত্র কাজ করছে।
আশ্রাফ আবীর আরও বলেন, আমাদের চ্যাটবট তৈরির একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যার নাম ফক্স এআই। এটা চ্যাটবট তৈরির একটি ইঞ্জিন। চ্যাটবটের সুবিধা হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কোনও ‘হিউম্যান এজেন্ট’ (কর্মী) ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বাড়ানো যায়।
তিনি জানান, ইউনিলিভারের পিউর-ইটের জন্য তারা ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি বট তৈরি করেছন। ওই বটের মাধ্যমে বেশ ভালো কাজ হচ্ছে। সফলতার হারও ভালো।
দেশে কিছুদিন হলো চ্যাটবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এখনও সবার কাছে বিষয়টি ততোটা পরিচিত নয়। ফলে চ্যাটবট সার্বজনীনভাবে এখনও তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। তাই জানা যায়নি চ্যাটবটের বাজার আকার কতো। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর তেমন কোনও ধারণাও নেই।
তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চ্যাটবটের প্রবৃদ্ধির হার বেশ ভালো, ১০ শতাংশের বেশি। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এর ব্যবহার দ্রæত বাড়ার ফলে প্রবৃদ্ধি ভালো।
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষক ও প্রেনিউর ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আরিফ নিজামি বলেন, মোবাইল ব্যবহারকারীরা টেক্সট (মেসেজ) পাঠানোতেও বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। তাই অনেককেই আজকাল কোথাও ফোন না করে টেক্সট পাঠিয়ে কাজ সারতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই গতিপথটা চলে গেছে টেক্সটের দিকে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী (কলসেন্টার ও কাস্টমার কেয়ার) রাখার পাশাপাশি চ্যাটবটও ব্যবহার করছেন। চ্যাটবট যেখানে আটকে যাচ্ছে বা তার তথ্যের স্টক শেষ করে ফেলছে সে তখন কল সেন্টার বা কাস্টমার কেয়ারের হিউম্যান এজেন্টকে কল বা চ্যাটবক্সটা ট্রান্সফার করে।
আরিফ নিজামি আরও বলেন, আমাদের তৈরি চ্যাটবট ডেইলি স্টার, মোবাইল ফোন অপারেটর রবি, বাংলালিংক, ব্র্যাক, আইডিএলসি ব্যবহার করছে। চ্যাটবটের ব্যবহার প্রতিষ্ঠানের কাজে গতি আনে, সময় ও খরচ বাঁচায়। ফলে আগামীতে এর ব্যবহার আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
দেশে চ্যাটবটের বাজার আকার জানা না গেলেও ‘গ্লোবাল মার্কেট ইনসাইটস’ বলছে, ২০২৪ সালে চ্যাটবটের বাজার হবে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারের। ২০১৭ সালে যা ছিল ২৫০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ এই বাজার ধরার পথেই এগোচ্ছে।
চ্যাটবট তৈরি করছে দেশিয় প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেমস। প্রতিষ্ঠানটির তৈরি রিভ চ্যাট এখন দেশের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে। এরমধ্যে সরকারের একটি প্রকল্পেও ব্যবহার হচ্ছে বটটি। অন্যদিকে রিভ চ্যাটবট ব্যবহার করছে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ। এই চ্যাটবট ভুটানের একটি ব্যাংক ব্যবহার করছে। ব্যবহার করছে ভারতের একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মও। এই চ্যাটবট ব্যবহার করতে চায় কমার্শিয়াল ব্যাংক অব কুয়েতও।
রিভ চ্যাটের বিক্রয় বিভাগের প্রধান তাওহীদুর রহমান বলেন, আমাদের চ্যাটবট অনেক কিছুই গ্রাহককে জানাতে পারে। গ্রাহক কোনও কিছু জানার জন্য যেকোনও ধরনের প্রশ্ন করুক (ইনপুট দেওয়া) না কেন রিভের চ্যাটবট প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করে একটা উত্তর দেবে। একেবারে না পারলে হিউম্যান এজেন্টদের কাছে ট্রান্সফার করবে।
তিনি আরও বলেন, কল সেন্টার বা কাস্টমার কেয়ারের কোনও কর্মী একসঙ্গে একাধিক লোককে সেবা দিতে পারেন না। একজনেরটা শেষ করে আরেকজনকে দেয়। চ্যাটবট একসঙ্গে একাধিক লোককে সেবা দিতে পারে। একসঙ্গে এক হাজার গ্রাহক লগইন করলেও চ্যাটবটের কোনও সমস্যা হয় না উত্তর দিতে। রিভ চ্যাটবট বাংলাও বুঝতে পারে। বাংলায় প্রশ্ন করা হলে উত্তর বাংলায় আসে বলে জানান তিনি।