দেশে চার লেনে উন্নীত মহাসড়ক ৬টি, দৈর্ঘ্য ৪৭০ কিলোমিটার

133

গত ১০ বছরে (২০০৯ থেকে জুন ২০১৮ পর্যন্ত) সড়ক ও জনপথ অধিদফতর উন্নয়ন খাতের আওতায় দেশের ৪ হাজার ৩৩১ কিলোমিটার মহাসড়ক মজবুত করা হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের ৫ হাজার ১৭১ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪১৭ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক কোথাও চার লেন আবার কোথাও তার বেশি লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এর বাইরেও আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া-পাচ্চচর-ভাঙ্গা মহাসড়ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ এগিয়ে চলেছে। এটি হবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় প্রায় ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। কুমিল্লা বিশ্বরোড থেকে লাকসাম হয়ে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, সারাদেশে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন মোট ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক, ৪ হাজার ৪০৪টি সেতু এবং ১৪ হাজার ৮৯৪টি কালভার্ট রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। খবরবাংলা ট্রিবিউনের
প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের অনুন্নয়ন খাতের আওতায় দেশের ৪ হাজার ৮৬৯ কিলোমিটার মহাসড়ক কার্পেটিং ও সিলকোট করা হয়েছে। এক হাজার ৮৯২ কিলোমিটার ডিবিএসটি এবং ৮ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার ওভারলেপিং করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দেশের চার লেনে উন্নীত হওয়া ৬টি মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৪৭০ কিলোমিটার। এর মধ্যে অর্থনীতির লাইফ-লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘের পরিমাণ ১৯০ কিলোমিটার। যা চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। গুরুত্বের দিক থেকে এরপরেই রয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। যা গত বছরই চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। একই সময়ে রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক ও চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়ক ডিভাইডারসহ চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন এই ১০ বছরেই নির্মিত হয়েছে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ। যা দেশি -বিদেশি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
সরকারের গত ১০ বছরেই দেশে আট লেনের মহাসড়কে উন্নীত করা হয়েছে যাত্রাবাড়ি-কাঁচপুর সড়ক। এটি দেশের প্রথম আট লেনের মহাসড়ক। সূত্র আরও জানায়, গত দশ বছরে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ২৭৬টি প্রকল্প শেষ করেছে। একই সঙ্গে ৩৪১টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বর্তমানে ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে ১৩৯টি প্রকল্প চলমান রয়েছে।
সরকারের করা গত ১০ বছরের উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবদনে জানা গেছে, এ সময়কালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯টি ফ্লাইওভার বা ওভারপাস এবং ৭টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর মহীপালে ছয় লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় ফেনীর ফতেহপুর, কুমিল্লার পদুয়ার বাজার, ইলিয়টগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কালুশাহ মাজার এলাকায় তিনটি রেলওয়ে ওভারপাস, কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নির্মিত হয়েছে মাওনা ফ্লাইওভার। একইসঙ্গে ঢাকা মহানগরীতে বনানী রেলওয়ে ওভারপাস, মিরপুর থেকে এয়ারপোর্ট রোড পর্যন্ত মো. জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, কুমিল্লা শহরে শাসনগাছা ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসান উল্যাহ মাস্টার ফ্লাইওভার ও চট্টগ্রাম বন্দর সংযোগ ফ্লাইওভারগুলো উল্লেখযোগ্য।
প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা গেছে, এ সময়ে ৯১৪টি সেতু ও ৩ হাজার ৯৭৭টি কালভার্ট কোথাও নির্মাণ আবার কোথাও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতুসহ সুলতানা কামাল, শেখ লুৎফর রহমান, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সোনতলা, এলাসিন, কাজির বাজার, আচমত আলী খান, শাহ আমানত, ওয়াজেদ মিয়া, থানচি, রুমা, তিস্তা, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবত, বড়দহ, সানন্দবাড়ি, বিরুলিয়া, চৌফলদন্ডী ও শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি সেতু উল্লেখযোগ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন,সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ঢাকা-আরিচা জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা করা হয়েছে। এছাড়া, সারাদেশের মহাসড়কে ১৪৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ বাঁক চিহ্নিত করে ১৩০টি বাক জটলতা নিরসন করা হয়েছে।
তিনি জানান, ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ও পরিবেশ উন্নয়নে উত্তরা ৩য় পর্ব হতে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৬ স্টেশন বিশিষ্ট উভয়দিকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেল-এর নির্মাণকাজ সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী পুরোদমে এগিয়ে চলছে। যা ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। মন্ত্রী জানান, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ ইতোমধ্যেই প্রণীত হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, সরকারের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন ১৩৯টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে উত্তরা ৩য় পর্ব হতে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ভায়াডাক্ট নির্মাণ দৃশ্যমান হয়েছে। মেট্রোরেল নির্মিত হলে উভয়দিকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে। এছাড়া মেট্রোরেল রুট-১ ও রুট-৫ এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।
একইসঙ্গে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ঢাকা-মাওয়া-পাচ্চচর-ভাঙ্গা মহাসড়ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ এগিয়ে চলেছে। এটি হবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। একইসঙ্গে ভারতীয় ঋণ কর্মসূচির আওতায় আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর পৃথক সার্ভিসলেনসহ চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে এবং বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। দরপত্র আহবান শেষে মূল্যায়নের কাজ চলছে।
এডিবি’র অর্থায়নে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে তেইশটি সেতু নির্মাণ এবং প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এলেঙ্গা হতে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়ক সার্ভিসলেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ কাজও শুরু হয়েছে। গাজীপুর চৌরাস্তা হতে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত দ্রুতগতির বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি রুট নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। বরিশাল-পটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কাংশে পায়রা নদীর ওপর চার লেন বিশিষ্ট পায়রা সেতু, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুসহ বেশকিছু সেতুর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ক্রস-বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ই¤প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (বাংলাদেশ) এর আওতায় কালনা সেতুসহ ১৭টি সেতুর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। চট্টগ্রামে শাহ আমানত সেতুর চট্টগ্রাম প্রান্তে ধীরগতির লেনসহ ছয় লেন এবং কক্সবাজার প্রান্তের সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শীঘ্রই শেষ হতে যাচ্ছে।
জাইকা’র অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে চার লেন বিশিষ্ট দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতুর নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ৮২টি সেতুর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। দেশের পর্যটনের তীর্থস্থান কক্সবাজারের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ উন্নত করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। দু’পাশে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের পৃথক লেনসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণকাজ এগিয়ে চলেছে। শুরু হতে যাচ্ছে সিলেট-জৈন্তাপুর সড়ক উন্নয়ন কাজ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় প্রায় ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। কুমিল্লা বিশ্বরোড থেকে লাকসাম হয়ে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শুরু হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সিলেট-জাফলং সড়ক চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে একটি ইউলুপ নির্মাণ এবং নোয়াখালীর ব্যবসাকেন্দ্র চৌমুহনীতে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের তিন পার্বত্য জেলায় ৩১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এডিবি’র অর্থায়নে দেশের প্রধান প্রধান মহাসড়কগুলোর প্রায় ১ হাজার ৭৫২ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ধাপে ধাপে মহাসড়কগুলো দুই পাশে ধীরগতির লেনসহ চার লেনে উন্নীত করা হবে বলেও জানান তিনি।