দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে

32

দেশে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে বলে সবাইকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রবিবার গণভবনে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ভোলার বোরহানউদ্দিনে সংঘাতময় ঘটনাটি উল্লেখ করে দেওয়া বক্তব্যে এই সতর্কবার্তা দেন তিনি। বোরহানউদ্দিনে এক হিন্দু তরুণের ফেইসবুক আইডি ‘হ্যাক করে ‘অবমাননাকর’ বক্তব্য ছড়ানোর পর ‘মুসলিম তাওহিদী জনতা’র ব্যানারে সমাবেশ থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে নিহত হন চারজন, পুলিশসহ শতাধিক আহত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো যে আইডটা হ্যাকিং হল আর তারপরে এই ধরনের ঘটনা ঘটাল, আর সেটাকে কেন্দ্র করে পুলিশের উপর আক্রমণ করা হল। তাদের উদ্দেশ্যটা কী ছিল, সেটাই বড় কথা। এর পরবর্তীতে দেখা যায়, ফেইসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার সব জায়গায় ছড়ানো হচ্ছে, অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।” খবর বিডিনিউজের
দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সকলেই জানেন, দেশটা একটু ভালোভাবে চলছে, অগ্রগতি হচ্ছে। তখনই একটা শ্রেণি আছে, নানাভাবে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। কাজেই এটা যেন তারা না করতে পারে, আমি এজন্য সাধারণ মানুষের কাছে সহযোগিতা চাই।”
বোরহানউদ্দিনের ওই হিন্দু যুবকের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করার অভিযোগে দুই মুসলমান যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মুসলমান হয়ে মহানবী (সা.) কে নিয়ে যারা অবমাননাকর মন্তব্য করেন, তাদের কাজকে ‘জঘন্য’ আখ্যায়িত করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “একটা মুসলমান হয়ে কিভাবে নবী করিম (সা.) সম্পর্কে বাজে কথা লিখে আরেকজনকে জড়াবার চেষ্টা করতে পারে। কেউ যদি আমাদের নবী করিম (সা.) সম্পর্কে সত্যিই কিছু লিখে থাকে, নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যের ক্ষতি করার জন্য, অন্যকে ফাঁসানোর জন্য যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটাবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।”
বোরহানউদ্দিনের ঘটনার সঙ্গে কক্সবাজারের রামুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনার মিল পাওয়া যাচ্ছে। ফেইসবুক ধর্ম অবমাননান গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামু উপজেলায় হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ১২টি বৌদ্ধ মন্দির ও ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ নামে এক হিন্দু মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে লোকজনকে খেপিয়ে তুলে ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়।
অপরাধ দমনে প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন টেকনোলজি যেমন আমরা ব্যবহার করতে পারি, আবার সেই টেকনোলজিও আছে, যে কেউ অপরাধ করলে সেটাও ধরা পড়তে পারে। কাজেই সেটাও ধরা পড়বে। সে যদি ফেইসবুকে টাকাটা না চাইত, তাহলে হয়ত তাকে খুঁজে বের করা মুশকিল হত। সে অপরাধ করে আবার টাকা চাইছে! এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব। ইতোমধ্যে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে। আর যারা আছে, আমরা তাদের গ্রেপ্তার করবো। আমরা ফেইসবুক অথরিটির সাথে যোগাযোগ করেছি। দুই-একদিনের মধ্যে আরও অপরাধীদের ধরতে পারব।”
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ভোলা পুলিশ জানায়, ওই হিন্দু যুবকের ফেইসুবক আইডি হ্যাকের পর তা ফেরতের বিনিময়ে অর্থ চেয়েছিলেন মুসলমান এক যুবক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “যে আইডিটা হ্যাক করেছে.. হ্যাক করে আবার তাকে ফোন করে ২০ হাজার টাকা চেয়েছে। এই কথাটা শোনার পর পরই ওই হিন্দু ছেলেটা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে একটা জিডি করেছে। জিডি করা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে সেখানে রেখে দিয়েছে। যে টেলিফোনটা করেছিল তাকেও পাওয়া গেছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেছে। একজন পীর সাহেব আছেন, তিনি এবং বেশ কিছু লোককে তিনি জড়ো করেন। যখন পুলিশ তাদের বোঝাচ্ছে আপনারা এগুলো করিয়েন না, আমরা তো গ্রেপ্তার করেছি। তখন পুলিশের উপরও তারা চড়াও হয়। পুলিশ নিজেদের বাঁচাতে একটা ঘরে আশ্রয় নেয়। সে ঘরের দরজা ভাঙে এবং এমনকি একজন এসআইয়ের পায়ে গুলিও লাগে।”
প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমের কাছে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করার পাশাপাশি অপরাধীদের তথ্য প্রকাশেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “মিডিয়াকেও আমি বলব, সব সময় সব জিনিস এমনভাবে প্রচার করবেন না যে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যারা সত্যিকার অপরাধী, তাদেরকে দেখান।”
দেশবাসীকেও গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। মানুষ সুফল যেমন ভোগ করছে, তেমনি মাঝে মাঝে এর কুফলও সমাজকে নানা রকম বিপদে ফেলে দেয়।”
বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য না। যার যার ধর্ম তার তার কাছে। সব ধর্মের মানুষ এদেশে বাস করবে। সেভাবেই আমরা দেশটাকে গড়ে তুলতে চাই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখব। এক্ষেত্রে যারাই অপরাধী হবে, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা যখন দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। খুব স্বাভাবিকভাবে কিছু মানুষের ভেতরে একটা লোভের সৃষ্টি হয়। যার ফলাফল আমাদের সমাজটাকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এ কারণে অন্যায়-অবিচার কখনও বরদাশত করা হবে না।”