দেশের স্বার্থে আপস নাই

92

‘জয় বাংলা’ আমাদের। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৪৮ সালে। সেই থেকে ১৯৭১ সাল অবধি, অর্থাৎ ২৩টি বছর যৌথ পরিবারের আদলে তাদের সঙ্গে খুব তেতো-মিঠা পরিস্থিতিকে হজম করে অবস্থান করে আসছিলাম। তারপরও পাকিস্তানকে জিন্দাবাদের বিশেষণে বিশেষায়িত করেছি, যদিও পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের লোকেরা সার্বক্ষণিক আমরা পূর্বাংশের প্রতি বক্রদৃষ্টিতে দেখতো। পাকিস্তান সৃষ্টিতে এ অঞ্চলের (বাংলাদেশের) লোকদের অবদান কোন অংশে কম ছিলোন। ১৯৪৮ সালে ১৪ই আগস্ট ভারত বর্ষে পাকিস্তান নামক এক অদ্ভুদ রাষ্ট্র সৃষ্টি কয়েছিলো। এর দুটো অংশের দূরত্ব এক হাজার মাইলের অধিক। দুটো অংশের আচার আচরণ লোকদের দৈহিক গঠন, ভাষাগত পার্থক্য সত্ত¡¡ও কেবল মুসলিম সংখ্যা আধিক্যতাকে আমলে এনে পৃথিবীর অষ্টম আশ্বর্যের দেশের উদ্ভব হয়। তারপরও আমরা অবহেলিত নির্যাতিত বাঙালিরা পাকিস্তান জিন্দাবাদ কইতে কইতে মুখের ফেনা উড়িয়ে দিয়েছিলাম। ওদের সাথে সুর মিলিয়ে গেয়ে যাচ্ছিলাম পাক সারজামিন নামক জাতিয় সঙ্গিত আমাদের বাংলাতে লেখা ‘ পাকিস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ,… পুরবো বাংলা শ্যামলিময় পঞ্চন দীতি হয়নি বয় ‘তিস্তা-বিধস্তার মিলন গাহি দুনীয়া করিল আযাদ, এ বিকল্প বাংলা জাতীয় সঙ্গীত গেয়েও তাদের চিত্তে শান্তি আনয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। তাই বাঙ্গালী নেতা মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন ‘ তোমাদের সঙ্গে আর আপোষ নয়। লাকুম দ্বীনুকুম ওলিয়াদ্বীন’। চট্টগ্রামের জাঁদরেল নেতা এম এ আজিজ সাহেবের কনে ধ্বনিত হয় একদফার সংগ্রাম। অর্থাৎ বাংলাদেশ স্বাধীন করা। তিনি লালদিঘীর মধ্যে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন আর পাকিস্তান জিন্দাবাদ নয় এবার থেকে ‘জয় বাংলা ’। তিনি কৌতুক করে বলেন ‘এখন শিশুবাচ্চার ঘুম থেকে উঠে জয় বাংলা কয়। সেই থেকে জয়বাংলা আমাদের। আমরা শ্রদ্ধাভাজন বর্ষীয়ান নেতা মৌলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানী লালদিঘীর ময়দানের জন সভায় ঘোষণা করেন ‘তোমাদের সঙ্গে আর নয়, লাকুম দ্বীনুকুম ওলেয়াদ্বীন। লালদিঘীর ময়দানে পাকিস্তানের জাতীয় পাতাকায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব সাফল্য পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির টনক নেড়ে দেয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১টি ছাড়া বাকী সব আসনে জয়ী হলেও পক্ষান্তরে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেবিন। সাংবিধানিক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ট দলের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করবে যা কিনা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠির চক্ষুশুলের কারণ হয়ে পড়ে। যার কারণে আলোচনার নামে এদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পূর্ণ ব্লেকমেইলিং করে অপারেশন চার্জ লাইটের মাধ্যমে বাঙ্গালি নিধনের পথ অনুসরণ করতে থাকে। এ ব্যাপারে দায়িত্ব বর্তায় কুখ্যাত মেজর জেনারের টিক্কা খানের স্কন্ধে। ঐ হিটলার মার্কা লোকটি বলেছিলো হাম আদমী নেহি চাইরি হোমজারা মাট্টি চাইয়ি। শেষমেশ সকল বাঙ্গলি নিধন করা সম্ভব হয়নি। বাঙালি কিন্তু বীরের জাতিরূপে পরিচয় দিয়ে বাংলার জয় ছিনিয়ে এনেছে। ঐ যে গান ‘ জয় বাংলা বাংলার জয় হবে হবে হবে-হবে নিশ্চবয়… জয় বাংলা শ্লোগান আমাদের জাতির শ্লোগান। ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্টের পর যারা ক্ষমতাসীন হয়েছিলো তারা জাতির শ্লোগান ‘জয় বাংলাকে নির্বাসনে প্রেরণ করে’। বাংলাদেশ বেতার হয়ে গেলো রেডিও বাংলাদেশ। কেই কেউ বৃহত্তর বাংলার শ্লোগানে রাজনীতির মাঠ গরম করতে সচেষ্ট হয়। সেখান থেকে জাতিকে বিভক্তি করার হীন প্রয়াস শুরু হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী পশ্চিম বঙ্গের নতুন নামকরণ করে বঙ্গপ্রদেশ রাখেন যা ছিলো সম্পূর্ণভাবে ভারতের অভ্যন্তরিন স্পৃহা। এতে আমাদের কিছু যায় আসেনা বিজেপি সরকার বঙ্গপ্রদেশটির নতুন নামকরণ করেন ‘বাংলা’ ‘বাংলা’ নামক রাজ্যের গদিসীন সমতা ব্যানার্জি। গত লোক সভার নির্বাচনে এক নির্বাচনি সভাফ তিনি ‘ জয় বালা’ বলে বক্তব্য সমাপ্ত করেন এতে আমাদের কেই কেই উৎফুল্লবোধ করলেও আমার কাছে দৃষ্টিকটু এবং আপত্তির প্রতীয়মান হয়। ‘জয় হিন্দ’ বলা তাঁর জন্য রীতিসম্মত। আমার সোনার বাংলা এ গীত একান্তে আমাদের। আর জয় বাংলা শ্লোগান আমাদের জাতীয় শ্লোগান। মমতা ব্যানার্জি তা নিয়ে টানাহিচড়ে করাটার অর্থটাই হচ্ছে আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে টানাহিচড়ে করার নামান্তর। কিন্দুস্তানের জাতিয় শ্লোগান জয়হিন্দ এবং জাতিয় সঙ্গিত বন্দে মা তারাম। বাংলাদেশ হচ্ছে বড় নেতার অত্যন্ত ক্ষুদ্রদেশ। আমরা প্রত্যেক দেশের সার্বভৌমত্ব এবং জাতিসত্তাকে শ্রদ্ধা করে আসছি। আমাদের নেতার আদর্শ ছিলো সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রæতা নয়। তিনি বাংলাদেশকে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। আমরা প্রত্যেক দেশের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আসছি স্বাধীনতা প্রাপ্তি থেকে আজ অবধি। পশ্চিম বাংলা বঙ্গপ্রদেশ হউক আর বাংলা হউক ৮২০০০ বর্গকিলোমিটারের। এ রাজ্য ভারতের ৩২টি রাজ্যের একটি অঙ্গরাজ্য তা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা ছিলোনা এবং ভবিষতেও থাকবেন তারপরও অসাম্প্রদায়িক ভারত রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক দল বিজিপি থেকে নির্বাচিত লোকসভার সদস্য নির্বাচনউত্তর মোশন অব থ্যাংস পর্বে বক্তৃতা দিতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ এক মনগড়া অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেণ। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিব্যক্তি বাঞ্চনীয়তো নয় তা বরং দৃষ্টিকটু বলে প্রতীয়মান হয় বলেলে অত্যুক্তি হবে না। তিনি বলেছেন বাংলাদেশ থেকে নাকি হরহামেশা ভারতে অসংখ্য অনুপ্রবেশ ঘটেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা নাকি নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ প্রসঙ্গে তাকে জানিয়ে দিতে চাই হিন্দু সম্প্রদায় পূর্ণ নাগরিক সুবিধা প্রাপ্ত। তারা স্থায়ীভাবে এদেশে বসবাসরত। তারা জাতিয় পরিচয় প্রাপ্ত, তারা ভোট প্রদান করতে পারেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের সার্বিক যোগ্যতা রাখেন তারা পূজা-পার্বণ নিদ্ধিধায় পালন করে আসছেন। অর্থাৎ তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে আঘাত আসতে পারে এমন কাজে কাহাকেও উৎসাহিত করা হয়না। শিক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন বস্ত্র, ব্যবসা বাণিজ্যে সার্বিক সুবিধা প্রাপ্ত হিন্দু সম্প্রদায়। তারা শ্রী কৃষ্ণের জন্ম অষ্টমী পালন করলে কিংবা রথ যাত্রা বা দূর্গাউৎসব করলে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃজন করেনা। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আঁকড়ে ধরে প্রত্যেক সম্প্রদায় শান্তিতে বসবাস করে আসছি। এক্ষেত্রে যদি শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকতো বিশ্বে বাংলাদেশ নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত হতো নির্ঘাতভাবে।
এরপর মোদ্দা কথায় আসা যাউক। আমাদের পেটের ছুরি ‘প্রিয়া সাহা’ কিভাবে পেট কেটেছ আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করে। প্রিয়া সাহা মহিলাটা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পঙ্গেত্তর উদ্যোগে তিনদিনব্যাপী ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করতে। এ ভদ্রমহিলা যেহেতু বাংলাদেশর পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সেহেতু তাতর উচিত ছিলো বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে তথায় যরময ষরমযঃ করা। যেহেতু বাংলাদেশের আলো বাতাসে বাংলাদেশকে আঁকড়িয়ে ধরে তিনি এতোটুকু বড়ো হয়েছেন। তিনি আবার হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সম্মানিত সাংগঠনিক সম্পাদিকাও বটে। তথায় তিনি যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দপ্তরে দস্তুরমতো মুখোমুখি নালিশটুকু আসলেন বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এ মহিলা এ ও অভিযোগ করেন প্রায় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান নাকি নিখোঁজ হয়েছে। এধরনের ঢাহা মিথ্যা অভিযোগের দৃষ্টান্ত এ প্রথম এ মহিলা উপস্থাপন করতে সাহসী হয়েছে। এতো ধৃষ্টতা এতো স্পর্ধার উৎসস্থল কোথায় তা আবিষ্কার করা আবশ্যক। স্বীয়জন্মভূমির বিরুদ্ধাচরণ করা জঘন্য অন্যায়। এ মাতৃভূমিতে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে একটা দায়িত্বশীল সংগঠনের পদবীতে অবস্থান করে এতো বড়ো বদনাম মার্কিনমুলুকের প্রেসিডেন্টের সামনে উপস্থাপন করা মোটেই শোভনীয় নয়। এ সম্পর্কে মন্তব্য চাওয়া হয় বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানাদাশগুপ্ত সাহেবের কাছে তাঁর সাফ জবাব এ বক্তব্য সংগঠনের নয় এটা একান্তভাবে ঐ মহিলা প্রিয়া সাহার। অর্থাৎ বক্তব্যটার সারকটা হচ্ছে তাদের সংগঠনের সভাপতির কাছে বক্তব্যটা গ্রহণযোগ্যতা পাইনি। তিনি তা দৃঢ়চিত্তে প্রত্যাখান করেছেন। সঙ্গত কারণে রানাদাশগুপ্তকে দেশের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। সংখ্যালঘুর অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে বাংলাদেশ অত্যাধিক আন্তরিক। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মোট জনসংখ্যার ১২% হলেও সরকারি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ২৫%। খোদ প্রিয়া সাহার স্বামী দুদকের একজন কর্মকর্তা অর্থাৎ সরকারি চাকুরীজীবী। সংখ্যালঘু ৩ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ যদি নিখোঁজ হয়েও থাকে এখানে একজন সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের লোক অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। অথচ প্রিয়া সাহার স্বামী বাংলাদেশে দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত। তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী একজন মহিলা। হয়তঃ এমনও এক উদ্দেশ্য পশ্চাতে কাজ করেছে তিনি মার্কিন গ্রীন কার্ডধারী হতে অথবা রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের প্রত্যাশায় এমন উদ্ভট একটা খোড়া ও বানোয়াট কল্পিত ডাটা উপস্থাপন করে বলেছেন ৩ কোটি ৭০ লক্ষ সংখ্যালঘু নিখোঁজ। তার অনুসারি যুক্তরাষ্ট্রের ঐক্য পরিষদের একটি অংশ বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপার্সন অশোক কর্মকার বলেন, প্রিয়া সাহার অভিযোগটাকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে না নিয়ে যে শঙ্কা বিরাজিত তা সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। অর্থাৎ প্রকারন্তে অশোক বাবুও এ উক্তিকে সমর্থন জ্ঞাপন করেছে বলে মনে করা যায়। এদেশ কিভাবে চলবে এ ব্যাপারে ওখান থেকে বসে কল্পনা প্রসুত হয়ে কারো কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজন আছে একথা কিঞ্চিত ও মনে আনবার প্রয়াস নেই। আসল বেয়ারামটা হচ্ছে বাংলাদেশ আল্লাহর রহমতে অনেকদূর এগিয়ে এসেছে। তবে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর এবং মোসতাকদের অভাব নেই। তারা আবারও সক্রিয়। আল্লাহ আমাদের সহায় হউক। স্বাধীনতা সমুন্নত থাকুক এ প্রত্যাশা করছি।

লেখক : কলামিস্ট