দেশাত্মবোধক গান, কবিতা ও কবিতার গানে সৃজামির একুশ স্মরণ

374

আবহমান বাংলা সংগীতে চিরকালই সমৃদ্ধ। যে-কোন আন্দোলন সংগ্রামে, স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয়ে গণমানুষের গান, গণসংগীত বাঙালির আন্দোলন সংগ্রামে বরাবরই প্রেরণা যুগিয়েছে। সৃজামি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গণমানুষের গানের মধ্য দিয়েই তাঁদের চর্চা এবং পরিবেশনার ধারাটি অব্যাহত রেখেছে।
একুশে ফেব্রæয়ারি চেরাগি পাহাড় চত্ত¡রে সন্ধ্যা ৭টায় আয়োজিত ভাষা শহীদদের স্মরণে সৃজামির এবারের আয়োজন উৎসর্গ করা হয়েছে খ্যাতিমান গণসংগীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রয়াত অশোক সেনগুপ্ত এবং দেশের সংগীতাঙ্গনের নক্ষত্র, মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার ও সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের স্মৃতির উদ্দেশে।
সৃজামির এবারের আয়োজন ছিল তিনটি পর্বে বিভক্ত : ১ম পর্বের আলোচনা সভার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সৃজামির দলপ্রধান সুজিত চক্রবর্ত্তী এবং আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন কবি ও সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়মী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও সৃজামির উপদেষ্টা দেবাশীষ গুহ বুলবুল এবং নাট্যনির্দেশক ও অভিনেতা আহমেদ ইকবাল হায়দার।
২য় পর্বে ছিল গণসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান। সংগীতানুষ্ঠানের শুরুতে খ্যাতিমান গণসংগীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রয়াত অশোক সেনগুপ্ত এবং দেশের সংগীতাঙ্গনের নক্ষত্র, মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার ও সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের স্মৃতির উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং ভাষা শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিবেশিত হয় ‘মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা’ সমবেত সংগীতের মাধ্যমে । এর পরে সৃজামির শিল্পীবৃন্দ দলীয় সংগীত পরিবেশন করে প্রয়াত অশোক সেনগুপ্তের রচনা ও সুরে ‘অ-আ, ও আমার বর্ণমালা, রক্তে সিনান করে পরিয়েছি মালা’ এবং গীতিকার ও সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের রচনা ও সুরে ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না, আমি গাইব গাইব বিজয়েরই গান’। শিল্পী রিয়া চৌধুরী ও রশ্মি দেব পবিবেশন করেন দ্বৈত সংগীত ‘বল ভুলতে কী পারি, সাথিদের খুনে রাঙা পথ’, শিল্পী সংগীতা চক্রবর্ত্তী ও সঞ্চিতা চক্রবর্ত্তী পরিবেশন করেন ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে, বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলো যারা’ এবং শিল্পী পূজা চক্রবর্ত্তী ও নিতু মহাজনের ‘সেই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথ পাড়ে দাঁড়িয়ে’ এই দ্বৈত সংগীত পরিবেশনায় শেষ হয় ২য় পর্বের গণসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান।
এর পর মঞ্চে বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন বোধন আবৃত্তি পরিষদ, চট্টগ্রাম এবং একক কবিতা পাঠ করেন ভারতের কবি অচ্যুত ভট্টচার্য (ভারত)।
৩য় পর্বে ছিল অভিনেতা ও গণসংগীত শিল্পী সুজিত চক্রবর্ত্তীর সুরে কবিতা ও কবিতার গান। উল্লেখ্য, বর্তমানের বাংলাদেশের গণসঙ্গীত চর্চাকারী সংগঠনসমূহের মধ্যে সৃজামি কবিতা থেকে গানের রূপান্তরের যে নিরীক্ষা করছে ইতোমধ্যে তাদের সুরারোপিত কিছু পরিবেশিত গান দর্শকনন্দিত হয়েছে। সৃজামির শিল্পীরা একে একে সাত জন বরেণ্য কবি হুমায়ুন আজাদের কবিতা ‘ভালো থেকো’, নাট্যকার প্রদীপ দেওয়ানজীর ‘ফুটপাত’, কবি হেলাল হাফিজের ‘ফেরিওয়ালা’, ছড়াকার সুকুমার বড়–য়ার ‘টাকা তুমি’, কবি নির্মলেন্দু গুনের ‘কোন কোন দিন’, কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদৃল্লার ‘সাত পুরুষের ভাঙা নৌকো’ এবং সবশেষে কবি কার্ত্তিক ঘোষের ‘ভাল মেয়ে ঠিক কাকে বলে জানো’ গানগুলো পরিবেশন করে।
সংগীতে অংশগ্রহণ করেছেন অবন্তী দাশ, রিয়া চৌধুরী, রশ্মি দেব, নিতু মহাজন, রীতাময়ী চৌধুরী দোলা, পূজা চক্রবর্তী, সুমা দাশ, অনুশি সেন গুপ্তা, সঞ্জিতা রায় মুহুরি, সংগীতা চক্রবর্তী, সঞ্চিতা চক্রবর্তী, সুজিত চক্রবর্তী, মনোজিত দাশ বর্মন (কাঞ্চন), কার্তিক দেব, আমিত্য দাশ, অমিত চক্রবর্তী, বিজয় বোস, ময়ূখ দাশ বর্মণ, অর্পিতা দাশ (অর্পা), নবনিতা গুহ (লোচন), অরিভা সেন গুপ্তা, ঐশ্বর্য নাহা রাই, রনি দত্ত। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন তবলা : প্রীতম আচার্য, কী-বোর্ড : সৃজন রায়, বাঁশি : বাদল দাশ, দোতারা : সুনীল কুমার দাশ, অক্টোপ্যাড : নন্দন নন্দী।