দেশজুড়ে শীতের তীব্রতা

31

বছর শেষে শীতের দ্বিতীয় ইনিংসে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভর করে দেশজুড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আভাস ছিল। তাতে খানিকটা হেরফের হয়েছে বটে। প্রকৃতিতে বিরাজমান আবহাওয়ায় উল্টো মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের ঘাড়েই সওয়ার হয়েছে শীতকালীন বৃষ্টি। দুটোরই ক্রমশ বিস্তার ঘটছে দেশজুড়ে। দুয়ে মিলে এবার শীতের কামড় ভালোভাবেই টের পেতে শুরু করেছে দেশের মানুষ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে এরইমধ্যে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি আরও কয়েকটি এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে। নতুন সপ্তাহের প্রথমদিন অর্থাৎ আগামীকাল শনিবার থেকে তাপমাত্রার পারদ আরও কিছুটা নেমে শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা বাড়তে পারে। চলমান মৌসুমের দ্বিতীয় শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার যশোরে পাঁচ মিলিমিটার এবং গোপালগঞ্জে এক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, ফরিদপুর, মোংলা এবং চুয়াডাঙ্গায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। আজ শুক্রবার ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী সূত্রগুলো জানিয়েছে, দেশের পশ্চিমে নতুন করে মেঘ তৈরি হচ্ছে। এই মেঘের গতিপথ মূলত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে। যার ফলে আজ শুক্রবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশকিছু স্থানে, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের অল্প কিছু স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির প্রভাবমুক্ত থাকতে পারে রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ। সবমিলিয়ে শীতের দাপট আপাতত কমার কোনও লক্ষণ নেই। বরং বছরের শেষ কয়েকদিন কাটাতে হবে শৈত্যপ্রবাহে কাবু থাকতে হবে। আগামীকাল শনিবার থেকে ধীরে ধীরে মেঘ কেটে যেতে পারে। আর মেঘ কেটে যাওয়ার মানে শীতের দাপট আরও বেড়ে যাওয়া। উত্তরে-পশ্চিমের সীমানা পেরিয়ে দক্ষিণ-পূর্বেও শীতের দাপট বাড়বে আগামী সপ্তাহজুড়ে।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক পূর্বদেশকে বলেন, ‘যেসব অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে সেসব এলাকার আকাশ কিন্তু পরিষ্কার বা মেঘমুক্ত। আকাশে ভাসতে থাকা মেঘ যতই কাটবে ততই রাতের তাপমাত্রাও কমতে থাকবে। তখন শীতের তীব্রতাও বেড়ে যাবে। বছরের শেষ পর্যন্ত চলমান শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে’।
অধিদপ্তরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তুরে হাওয়ায় ডিসেম্বরের শুরু থেকেই তাপমাত্রার পারদের পতন শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ডিসেম্বর চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে। ওইদিন দেশের সর্বউত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরদিন আরও এক ডিগ্রি কমে তা আটের ঘরে নামে। কিন্তু এরপর থেকেই পারদের উর্ধ্বমুখী পথচলা শুরু হয়। টানা চারদিনে তিন ডিগ্রিরও বেশি চড়ার পর ফের পতন ঘটে পারদের। পারদের এই পতনমুখী প্রবণতার মধ্যেই আবহাওয়াবিদরা সারাদেশে শীত জেঁকে বসার আলামত দেখতে পান। এর জেরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বইতে শুরু করে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনিম্ম তাপমাত্রা নেমে আসে চুয়াডাঙ্গায় সাত দশমিক নয় ডিগ্রিতে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার উত্তর সীমান্তবর্তী হিমালয়ের সবচেয়ে কাছের জনপদ তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন পাঁচ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল পূর্ব সীমান্তের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন ১২ দশমিক তিন ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল রাঙামাটিতে। বিভাগের বাকি এলাকাগুলোতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৬ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই উঠানামা করেছে।
এর আগে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে জানানো হয়, চলতি ডিসেম্বরের শেষদিকে এবং নতুন বছরের অর্থাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ) মাসে দেশের ওপর দিয়ে দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং দু’টি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এমনিতেই জানুয়ারি দেশের শীতলতম মাস। তাই মেয়াদকালের দৈর্ঘ্য কমবেশি হলেও শীতের দাপট কিংবা হাঁড়কাপানো শীতের কামড় অনুভূত হবে জানুয়ারি মাসেই। ফেব্রূয়ারির মাঝামাঝি গিয়ে শেষ হয় বাংলা বর্ষপঞ্জির মাঘ মাস। কাগজে-কলমে বিদায় নেয় শীতকাল। তবে, এবার তুলনামূলকভাবে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের স্থায়িত্বকালই বেশি হতে পারে। যাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু কম-বেশি হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী ৫০ বছরের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রূয়ারি। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং আট ডিগ্রির চেয়ে বেশি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।