দুর্যোগকালীন বাজেট স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে

34

আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈশ্বিক মহামারীর এক করুণ পরিস্থিতিতে এবারের বাজেট অন্য যেকোন বাজেটের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯ এর কারণে রাষ্ট্রের ব্যয়ভার বেড়ে যাওয়ায় গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বাজেটের আকার বড় হচ্ছে- এটি মোটামোটি অনুমান করা যায়। দেশের জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ১১ জুন বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, যে বাজেট তিনি উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন, তার আকার প্রায় পাঁচ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। এবার এমন এক সময়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হচ্ছে, যখন কোভিড এর কারণে দেশের সকলধরনের অর্থনীতির চাকা স্তবির হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক আমদানি-রপ্তানি থেকে শুরু করে রেমিটেন্স এর প্রবাহও কমে গেছে। ফলে গতিও আশঙ্কাজনক হ্রাস পেয়েছে। একদিকে জীবন ও জীবিকা রক্ষার রাষ্ট্রীয় দায় অপরদিকে অর্থনীতির সøথগতির ফলে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। এরমধ্যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে জীবন ও জীবিকা রক্ষায় সুচিস্তিত বাজেট দিতে হবে অর্থমন্ত্রীকে।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বাজেট হচ্ছে সরকারের এক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব। রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি উন্নয়ন-অনুন্নয়ন খাতসহ রাষ্ট্রের নাগরিকরা যে সেবা ও উন্নয়ন পেতে চায় বা রাষ্ট্র যে সেবা নিশ্চিত করতে চায়, তা এই বাজেটের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়। বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তার ওপর নির্ভর করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড। শুধু অবকাঠামোগত নয়, সব ধরনের উন্নয়নই বাজেটের ওপর নির্ভরশীল। দেশের শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তাসহ সব খাতেই বরাদ্দ থাকে বাজেটে। স্বাভাবিকভাবেই এবারের বাজেট কেমন হবে বা হতে পারে, তা নিয়েই আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন অর্থনীতি সচল করার পথে যাত্রা শুরু অপরদিকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষকরে, প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় থাকা উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আমাদের প্রিয় এ বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্ক এখনো পাওয়া যায়নি। পরিকল্পনামন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে দেশ। প্রবৃদ্ধির হার ২.৫ শতাংশে নেমে আসার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি। করোনাভাইরাস সংকটের ধাক্কায় চলতি বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার ৩.৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে আইএমএফ। যদিও উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানিসহ অর্থনীতির সবখাত ঠিক হতে কতটা সময় লাগবে, তা কেউ বলতে পারছে না।
আমাদের এ দেশে আগে থেকেই রয়েছে, বিশাল একটি কর্মক্ষম বেকার যুবসমাজ। এরমধ্যেই করোনা পরিস্থিতির কারণে এ সংখ্যা আরো বেডে গেছে বিদেশফেরত চার লক্ষাধিক শ্রমিক ঠাই করে নিয়েছে এ তালিকায়। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকায় বেকার সংকট আরো বেড়ে যাবে। যা রাষ্ট্রের জন্য বড় বোঝাতো বটেই। এর পাশাপাশি অবকাঠামো, জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে দেশে বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত গতি পাচ্ছে না। প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় জাতীয় সংসদে যে বাজেট প্রস্তাব করা হবে, আমরা আশা করি, তাতে সরকার চেষ্টা করবে জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে। সরকারকে এটি করতেই হবে। বিশেষকরে, খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য বড় বাজেট প্রয়োজন। তবে এর সাথে সুশাসন ও স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহীতার বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া বাঞ্চনীয়।