দুর্নীতির লোভের জিহবা কেটে ফেলা হবে

65

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং লোভের জিহবা কেটে ফেলা হবে। তিনি বলেন, দুদক হয়তো কাক্সিক্ষত মাত্রায় দুর্নীতি কমাতে পারেনি এবং একক কোনও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দুর্নীতি দমনও সম্ভব নয়। দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।
‘দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌশলপত্র-২০১৯’-এর ওপর মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের জন্য দেশের ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। গতকাল রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুদক চেয়ারম্যানের সূচনা বক্তব্যের পর মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থী তামান্না রিফাত বলেন, দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন কোনও পদ্ধতি নেই, যার সাহায্যে দুর্নীতি করার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান বলেন, অপরাধীদের দ্রুত বিচার করা না গেলে অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। তিনি দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিরা রহমান বলেন, ‘খাদ্যে ভেজাল দুর্নীতি। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা এই দুর্নীতি করছে এবং তারাই নিরাপদ খাদ্যের জন্য হুমকি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ফারুক হোসেন বলেন, কৃষি ভর্তুকির অর্থ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর আগেই বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি সংঘটিত হয়।
আর্মডফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান মিয়া বলেন, আমরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি কিনা, এটি বড় প্রশ্ন। দুর্নীতিকে একটি ‘চেইন অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, নিচের দিকে কর্মরত কর্মকর্তারা জানেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও দুর্নীতিপরায়ণ। তাই দুর্নীতি করলে কিছু হবে না।
পদ্ধতিগত কারণেই দুর্নীতি অপ্রতিরোধ্য বলে মত দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শম্পা গুহ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামস আসিফ চৌধুরী বলেন, দুদক স্কুল পর্যায়ে সততা সংঘ গঠন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ধরনের কোনও সংগঠন নেই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এথিকস ক্লাব গঠনের আহŸান জানান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পিতা মহাজন বলেন, আইনি সংস্কার এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং তাৎক্ষণিক ফল চাই।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টোটন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, দুর্নীতি যারা করেন তাদের ভয় ও লজ্জার ব্যবস্থা করতে হবে।
পরে শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, একসময় বলা হতো অর্থই অনর্থের মূল, কিন্তু সবসময় অনর্থের মূল নয়। অনেক সময় অর্থই অর্থের মূল। অর্থ মানেই ক্ষমতা। অনেক সময় মানুষ অর্থের পেছনে ছোটে। এটাতে তারা এখন আর লজ্জা পায় না, তাই দুর্নীতিবাজদের লজ্জা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা। মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা এবং মূল্যবোধসম্পন্ন উন্নয়নের প্রয়োজন। তিনি বলেন, দুদককে ভয় পায় না এমন লোক হয়তো সমাজে নেই। তবে ভয় দিয়ে সবকিছু জয় করা যায় না।
দুর্নীতিবাজদের হুঁশিয়ারি দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে এবং লোভের জিহবা কেটে ফেলা হবে।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, সব দুর্নীতিই দুদকের ম্যান্ডেটভুক্ত নয়। দন্ডবিধির কয়েকটি ধারা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জন দুদকের তফসিলভুক্ত। দুর্নীতির উৎস বন্ধেও সরকারের কাছে সুপারিশ করার আইনি দায়িত্ব দুদকের রয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং জনহয়রানি রোধে বিভিন্ন সুপারিশমালা সরকারের কাছে পাঠানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়, বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলো অনুধাবন করেই তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে দুর্নীতি দমনের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এক দিন বা এক বছরেই দুর্নীতি থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) সারোয়ার মাহমুদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখত, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, মহাপরিচালক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।