দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ বোর্ডের

41

চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের বিএমএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ নিয়োগসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী দশ কর্মদিবসের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে আলাদা অনুলিপি দেওয়া হয়।
জানা যায়, উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের বিএমএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের অবৈধ নিয়োগসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে বছরের শুরুতে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে একটি অভিযোগ দাখিল করেন বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও সাহারবিল ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা জুনাইদুল হক। অভিযোগটি আমলে নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক এ ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সহকারী সচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দীনকে নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন।
প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ বাস্তবায়ন পূর্বক আগামী দশ কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনার গুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের নিয়োগ বিধি সম্মত না হওয়ায় তার নিয়োগ বাতিল পূর্বক কেন বিধি মোতাবেক একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হবেনা তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। অডিট ফার্মের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের বিগত ৫ বছরের আয় ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ হিসাব দাখিলের পাশাপাশি সঠিক প্রক্রিয়ায় হিসাব সংরক্ষণের প্রদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গিকার নামা দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া ভাউচার বিহীন কোন ধরনের লেনদেন সম্পন্ন না করা, বিধির বাইরে হাতে নগদ অর্থ না রাখা এবং ব্যাংকের মাধ্যমে সকল লেনদেন সম্পন্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গিকারনামা দাখিলেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে সাহারবিল বিএমএস উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কতৃক প্রেরিত কোন পত্র আমার কাছে আসনি। পত্র হাতে পেলে শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে প্রধান শিক্ষকের অবৈধ নিয়োগ ও নানা অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেওয়ায় পর বিদ্যালয়ে নিয়মিত দুই শিক্ষার্থীকে পুন:ভর্তি না করা এবং সরকার নির্ধারিত বই না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক জুনাইদুল হক। তিনি বলেন আমার দুই সন্তান ওই বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে গত বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমার সন্তানদের স্কুলে ভর্তি না করায় আমি গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে একটি অভিযোগ দাখিল করি। এ অভিযোগের একটি অনুলিপি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও প্রেরণ করা হয়।
জানা যায়, এ অনুলিপির কপি পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ২৭ জানুয়ারি বিএমএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে ভোক্তভোগী জুনাইদুল হকের দুই সন্তানের ব্যাপারে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে জানানোর জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ পত্র পাওয়ার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ওই দুই শিক্ষার্থী বই প্রদান করেন। বই পেয়ে নিয়মিত ক্লাসও শুরু করেন ওই দুই শিক্ষার্থী।
জুনাইদুল হক বলেন, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুলে ভর্তির শেষ সময় হিসেবে সরকারী নির্দেশনা ছিল। কিন্ত ওই তারিখ পর্যন্ত আমার দুই সন্তানকে স্কুলে ভর্তি না করিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমার এক সন্তানকে বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন প্রধান শিক্ষক। ফলে অন্য সন্তানও এখন বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তীতে আইনি প্রদক্ষেপ নিবেন বলেও জানান জুনাইদুল হক।