দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখতে হবে

67

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি কিছুটা দৃশ্যমান হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন প্রথমদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি তাদের দৃষ্টি দিলেও আদালত ছোট ছোট বিষয়ে সময়ক্ষেপণ না করে দুদককে বড় রাঘববোয়ালদের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার পরামর্শ দেন গত ৭ ফেব্রুয়ারি। এসময় স্কুল শিক্ষকদের কোচিং নিয়ে সরকারের করা নীতিমালা বিষয়ে রিটের শুনানিতে একপর্যায়ে হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকলাপে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে; আর শিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক। আদালত বলেছেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালদের ধরে এনে ছেড়ে দেয় দুদক। দুদক নিয়ে উচ্চ আদালতের এ ধরনের মন্তব্যে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতনরা। এরপর থেকে দুদক বড় দুর্নীতিবাজদের আস্তানায় হানা দিতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এবার শুধু দুর্নীতিবাজ নয়, তাদের সহায়-সম্পদ হেফাজতকারী স্ত্রী-সন্তান এবং স্বজনরাও বিপাকে পড়েছেন। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। গত ৬ মাসে দুর্নীতিবাজের ৩০ জন স্বজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনুসন্ধানী এ প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন হাজারীর বিরুদ্ধে তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীকেও অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়েছে। তার কাছেও মিলেছে অবৈধ সম্পদ। তারা দুইজনই বর্তমানে জেলে রয়েছেন। এর আগে অপর এক কাস্টমস কর্মকর্তাকে স্ত্রীসহ জেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে মামলা করা হবে।
একই অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী আবজাল হোসেন। তাঁর দুর্নীতি তদন্ত করতে গিয়ে দুদক কর্মকর্তারা হতবাক। প্রাথমিকভাবে তার কাছে সম্পদ মিলেছে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকার। অনুসন্ধানে তা আরো বেশি হতে পারে বলে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দুদকের তথ্য অনুযায়ী মাসিক ৩০ হাজার টাকা বেতন পেলেও ঢাকার উত্তরায় তার ও স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। একটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। আমেরিকা- কানাডায়ও তার বাড়ি রয়েছে। আর রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ বহু সম্পদ। বর্তমানে এসব সম্পদের বাজার মূল্য চার হাজার কোটি টাকারও বেশি বলে জানায় দুদক। এভাবে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের কর্মচারি,বিভিন্ন জেলা ও থানা পুলিশ অফিসার এমনকি ফেনী পৌরসভার সুইপারের দুর্নীতির খতিয়ান দেখলে আৎকে উঠার মত পরিস্থিতি। আমরা দুদকের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। প্রভাবশালী এবং শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ও তাদের স্বজনদের ধরলেই দুর্নীতির চিত্র অনেকটা পাল্টে যাবে বলে মনে করছি। এখন দেখার বিষয় প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের দমনে দুদক কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে। দুদকের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে এবং দেশে অনিয়ম-দুর্নীতি হ্রাস পাবে। আমরা জানি, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার ছিল। যার অন্যতম ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ।
আমরা চাই, দুদক একটি মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমনে সুষ্ঠু ভূমিকা পালন করুক। এ ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যম ও নাগরিক সমাজকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সব পক্ষ আন্তরিক হলে দেশকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত করা কঠিন হতে পারে না। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তরা যেন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে পার পাওয়ার চেষ্টা না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।