দুর্নীতিমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের পূর্বশর্ত : ভূমিমন্ত্রী

45

দুর্নীতিমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের পূর্বশত। দুর্নীতিমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা গড়তে অর্থনীতির ছাত্র-শিক্ষক, বিশেষজ্ঞদের সাথে অন্যান্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। তবে সংশ্লিষ্ট সকলকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমালোচনা করতে হবে।
গতকাল শনিবার সকালে থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে অর্থনীতি সমিতি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের ৪র্থ দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এসব কথা বলেন।
অর্থনীতি সমিতির চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি ড. ইরশাদ কামালের সভাপতিত্বে ও এটিএম কামরুদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে মন্ত্রী আরো বলেন, অর্থনীতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সততা ও স্বচ্ছতা শতভাগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের জিডিপি বর্তমানে ৭ শতাংশের উপরে। এটাকে দ্বিগুণ করতে হবে।
তিনি বলেন, কর্ণফুলী চট্টগ্রামের প্রাণ এবং জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিন্ড। আমাদের দলের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী প্রতিটি গ্রাম নগরের সুযোগ-সুবিধা পাবে। এর অর্থ গ্রাম কৃষিভূমি হারাবে না, বিকশিত প্রযুক্তির সুবিধা পাবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিদ্যুতের অভাবনীয় উৎপাদন হয়েছে। যার সুফল সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যে ভোগ করছে। আমাদের দেশে দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। তাই ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের উপর জোর দিতে হবে।
চট্টগ্রামের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে পাঁচ তারকা মানের হোটেল, ইকোনোমিক জোন, ইপিজেডসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। অসংখ্য শিল্পকারখানা রয়েছে চট্টগ্রামে। দেশের বৃহৎ সমুদ্র বন্দর ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে চট্টগ্রামে। বর্তমানে দেশের একমাত্র বঙ্গবন্ধু ট্যানেল চট্টগ্রামে তৈরি করছে বর্তমান সরকার।
সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারাকাত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক একেএম ইছমাইল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমদ ও সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. আবুল বারাকাত বলেন, ‘চারটি ‘জ’ এর উপর বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন নির্ভর করছে। জল, জঙ্গল, জনসাধারণ ও জমি। এগুলোর সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের উন্নয়ন না হলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাস্তবে উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠীর কেউ জমির মালিক নয়। জমির মালিক অন্যজন। বঞ্চিত সেইসব জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত করেই দেশের উন্নয়ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন।’
দ্বিতীয় অধিবেশনে আয়োজিত সেমিনারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল-‘গ্রেটার চট্টগ্রাম এন্ড ক্রিটিকাল ইস্যুজ অব সোশ্যিও-ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ।’
প্রথম পর্বে অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আতাউল করিম চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম, জাহিদ সরওয়ার আকন্দ ও জায়েদা রওশন আরা। পরে উপস্থাপিত প্রবন্ধের উপর অর্থনীতি সমিতির সহ-সভাপতি ড. আবুল হোসাইন ও সহ-সভাপতি এ জেড এম সালেহ বক্তব্য রাখেন।
ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ হলে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। কিন্তু সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে আমরা আন্তঃদেশিয় ভূ-রাজনীতির শিকার হয়েছি। তারপরেও চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে এখনো হল্যান্ড, আবুধাবি ও মালয়েশিয়া বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন পরনির্ভরশীল নয়। তারপরেও বিদেশি বিনিয়োগকে অনাগ্রহ দেখানো সমীচিন হবে না। কিন্তু যাচাইবাছাই করেই বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নে গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘শিক্ষা ও ভোকেশনাল শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ভিয়েতনাম অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তারা রপ্তানি নির্ভর হয়ে উঠেছে। আমাদের পরে এসে দেশটি বর্তমানে ২৮২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করছে, যেখানে আমাদের রপ্তানি এখনো ৩৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়নি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গরীব জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বক্ষেত্রে ধনী-গরীরের বৈষম্য কমিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।’
বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণ আর উপকার বয়ে আনবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকেই ক্ষুদ্র ঋণের উৎপত্তি হয়েছিল। কিছু মানুষ ক্ষুদ্র ঋণের উপকার ভোগ করলেও এ ব্যবস্থা এখন সামাজিক উন্নয়ন বাদ দিয়ে ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। এতে বর্তমানে মানুষ ঋণের যাতাকলে বন্দি হয়ে পড়ছে। সুদূর অতীতে আমাদের দেশে ‘ঋণ সালিশী বোর্ড’ ছিল। এখন ক্ষুদ্র ঋণের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে আগামীতে ক্ষুদ্র ঋণের সমস্যা সমাধান করতে হয়তো পুনরায় সেই ‘ঋণ সালিশী বোর্ড’ ফিরিয়ে আনতে হতে পারে।’
দ্বিতীয় পর্বে ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্তের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. জামাল উদ্দিন আহমদ, ড. এস এম আবু জাকের ও আশিকুর রহমান। এসব প্রবন্ধের উপর বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ ও ড. হান্নানা বেগম।
শেষ পর্বে আয়োজিত সাধারণ সভায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এতে ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্তকে সভাপতি ও এ টি এম কামরুদ্দিন চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।