দুর্দিনে রক্তের অক্ষরে লেখা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

133

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া বলেছেন, ‘বেছে বেছে বন্ধুত্ব করা যায় কিন্তু প্রতিবেশী বদলানো যায় না।’ এ কথার সূত্র ধরে আমি বলি চাইলে নিজের স্ত্রীকেও বদলানো যায় কিন্তু প্রতিবেশী বদলানো যায় না। ভারতীয় হাই কমিশনার বর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলে গেছেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি গ্রহণ। (সূত্র: ১৩ আগস্ট ২০১৮ সালে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কলেজে দেওয়া প্রদত্ত বক্তব্য)। ভারত বাংলাদেশের সাধারণ প্রতিবেশী নন, দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা একই কবি। অর্ধশত নদী দুই দেশের মধ্যে বহমান। সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য দুই দেশের অংশীদার। নদীর স্রোত আগে ভারতে সৃষ্টি হয় তারপর বাংলাদেশে। সূর্য আগে আমাদের আলোকিত করে তারপর ভারতকে। দুই দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা এক। দুই দেশই দুনিয়ার বুকে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা অধিষ্ঠিত করতে রক্ত দেয় ( আসামে ১৯৬০ সালে অহমিয়া ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার বিল পাস করার পরে ১৯৬১ সালের ১৯ মে বাংলা ভাষার দাবিতে হরতাল পালন কালে ১১ জন বাঙালি মারা যায়।) প্রতিবেশী প্রদেশের সাথে আমাদের এক গান, এক প্রাণ, ভাষা এক, সাহিত্য এক, সংস্কৃতিক এক, ভৌগোলিক এক কিন্তু মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া দুই দেশের মানুষের হৃদয়কে পৃথক করা যাবে না।
কবি অন্নদা শঙ্কর রায়ের কবিতার পংক্তি স্মরণযোগ্য: ভুল হয়ে গেছে সবকিছু/ ভুল হয়ে গেছে বিলকুল/ সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে/ ভাগ হয় নি কো নজরুল/ সে ভুলটুকু থেকে যাক/ বাঙালি বলে তার দুর্গতি মুছে যাক’/ রবীন্দ্র-নজরুল, শরৎ, বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগরকে ভাগ করা যায় না। তাঁরা দুই বাংলারই সম্পদ।
বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ক‚টনৈতিক ক‚টচালে গড়ে উঠেনি, নিবিড় রক্তে লেখায় বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সম্পর্ক। ক‚টনৈতিক সম্পর্ক অনেক দেশের সাথে আছে, পাকিস্তানের সাথেও আছে। কিন্তু চরম দুর্দিনে রক্তের অক্ষরে লেখা গড়ে উঠা বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের সাথে নেই। রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক দুঃখের নয়, সুখের। দুঃখের দিনের বন্ধুত্বের কথা মানুষ ভুলতে পারে না। বাংলাদেশÑভারতের বন্ধুত্বের সম্পর্ক চরম দুর্দিনের, ত্যাগের। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১২ হাজার ভারতীয় সেনা স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
১৯৭১ সালে দুই দেশের শহীদদের রক্তধারা একই নদীর স্রোতের মধ্যদিয়ে এই সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে উঠে। এই বীরত্বের রক্ত প্রবাহিত হবে অনন্তকাল। এই বীরত্বের ইতিহাস কোন দিন মুছা যাবে না। ইতিহাসের পাতা ছেড়া যায় মুছা যায় না। জোর করে ইতিহাসকে পাল্টানো যায় না। অস্বীকার করা যায় না। ইতিহাস মানে ‘সময়’। অতীতে যা ঘটে তা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। ঘড়ির কাঁটা জোর করে বন্ধ করলে সময় থেকে থাকে না, ঘড়ি বিকল হয়ে যায়।
একাত্তরের মত মুক্তিযুদ্ধ আর হবে না, ভারতের মত বন্ধুত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ নেই আর কোন দেশের। ভারত একাত্তরে বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থী আশ্রয় প্রদান করেন। ভারতে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে বিশাল জনসভায় কাঁদতে কাঁদতে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা দেখে মনে হয়েছে মমতাময়ী মা যেন বিপদগ্রস্থ সন্তানের জন্য কান্না করছেন। এত বেশী কান্না কখনো করেছেন কীনা তা কারো জানা নেই। ত্রিপুরা রাজ্যটিতে বাংলাদেশি শরণার্থীর সংখ্যা পুরো রাজ্যের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি হয়ে পড়ছিল। পাকিস্তানি গণহত্যা বন্ধ ও বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষায় বিশ্বের ৩৪ দেশ সফর করেন শ্রীমতি গান্ধী। জীবনে মদ স্পর্শ করবে না শ্রীমতি গান্ধী শপথ নিয়েছিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সাথে বসতে হলে মদের আসরেই বসতে হবে। শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা আলোচনা করতে মেডাম গান্ধী শপথ ভঙ্গ করে মদ পান করেন।
৪ নভেম্বর ১৯৭১ সাল। হোয়াইট হাউসে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাথে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। আলোচনা চলে ২ ঘন্টা। প্রসঙ্গ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি। আলোচনা ব্যর্থ হয়। মার্কিনরা বুঝলেন ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশ প্রশ্নে একচুলও সরানো যাবে না। পাকিস্তানিরা প্রহসনমূলক গোপন বিচারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার যখন চক্রান্ত চলে তখন ১১ আগস্ট ২৪ জন শীর্ষ রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট ব্যক্তিগত আবেদন প্রেরণ করেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। বঙ্গবন্ধুকে প্রাণদÐ দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল না করতে পাকিস্তানকে সোভিয়েত ইউনিয়ন শক্ত ভাষায় সতর্ক করেন তার পিছনে ছিল ভারতে হতে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পক্ষ এবং বিপক্ষের কেউ জানতো ৯ মাসে এদেশ স্বাধীন হবে। এটি সম্ভব হয়েছিল ভারতের সহযোগিতার কারণে। স্বাধীনতায় সহযোগিতা ছিল ভারতের প্রথম উপহার, মিত্র বাহিনীর সৈন্য কয়েক মাসের মধ্যে ফেরত নেওয়া ছিল ভারতের দ্বিতীয় উপহার। এটি দুনিয়ার বুকে বিরল ঘটনা। প্রায় ৬০ বছর আগে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হলেও ইউরোপ ও জাপানে এখনো মিত্র শক্তির সেনাবাহিনী অবস্থান করছে। পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমারে অন্যায় ভাবে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নিচ্ছে না। আমরা শত চেষ্টায় ফেরত পাঠানোর জন্য বাধ্য করতে পারছি না। তারা বছরের পর বছর বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এখন চিন্তা করুন শক্তিশালী দেশ ১৯৭১ সালে সাহায্য করতে আসা ভারতীয় সৈন্য অল্প সময়ে ফেরত নেওয়াটা কোন ছোট সাহায্য ছিল না।
বর্তমান বাংলাদেশের ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিপোজিট বিশাল। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভ করার পর বাংলাদেশের একাউন্টে এক ডলারও ছিল না। ভারতের দেওয়া কিছু ডলার দিয়ে আমরা তখন আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ একাউন্ট খুলেছিলেন। ভারতের দেওয়া উড়োজাহাজ দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ বিমানের যাত্রা শুরু করি। সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ (১৯৭১-৭৫ সালে) ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে হজ্বব্রত পালন করার সুযোগের মত শত উপায়ে ভারত আমাদের সহযোগিতা করেছিল।
কলকাতা শহরে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে দুই সড়কের নামকরণ করা হলেও আমরা মহাত্মা গান্ধী-ইন্দিরা গান্ধীর নামে কোন সড়কের নামকরণ করতে পারি নি। উল্টো ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছিলেন, যেখানে পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসম্পর্ণ করেছিলেন, যে ময়দানে ইন্দিরা গান্ধী ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছিলেন সেখানে ‘ইন্দিরা মঞ্চ’ স্থাপন করা হয়েছিল। ভারত বিরোধিতার নামে সে মঞ্চ ভেঙে ফেলা হয়েছিল। যারা ইতিহাস মুছতে কাজটি করেছিল, তারা একদিন ইতিহাসের পাতা হতে মুছে যাবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় আমরা উপকৃত হলাম কী না? যদি বলি হ্যাঁ। তাহলে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া প্রয়োজন ছিল কী না? আমরা কী কৃতজ্ঞ হয়েছি ?
৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রামে একবার পাকিস্তানকে পরাজিত করেছি, দ্বিতীয় বার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তির সংগ্রামে পরাজিত করেছি। ৭১ সালে বড় বড় অর্থনীতিবিদরা ফতোয়া দিয়েছিল, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দেউলে হয়ে যাবে, এই রাষ্ট্র দাঁড়ালে পৃথিবীর যেকোন রাষ্ট্র দাঁড়াতে পারবে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি। সেদিন তারা বলেছিল ভারত-বাংলাদেশের নওজোয়ানদের রক্ত বৃথা যাবে। ৭১’র চেতনার মৃত্যু হবে। এসব মন্তব্যের কারণ ছিল, পাকিস্তানিরা আমাদের পাওনা ফেরত দেয়নি, মুক্তিযুদ্ধে সোনার বাংলা শ্মশানে পরিণত, সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, খনিজ সম্পদ নেই, এক রাতের জলোচ্ছ¡াসে লক্ষ মানুষ মারা যায় এমন দেশ খুঁজে পাওয়া কঠিন, বন্যার সময় বন্যায়, ভাটির দেশ হিসেবে খরার সময় খরায় মরে এমন দেশের উন্নতি অর্থনৈতিক উন্নতি গ্রামের মিলে না। অর্থনৈতিক গ্রামার ভঙ্গ করে আজ বাংলাদেশ পাকিস্তানকে মুক্তির সংগ্রামে দ্বিতীয়বার পরাজিত করে। দুনিয়ার বুকে পাকিস্তানি মুদ্রার চেয়ে বাংলাদেশি মুদ্রার দাম বেশি, মানব উন্নয়নের পুরো ৮টি সূচকে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পরাজিত করে। পৃথিবীর সবাই আজ স্বীকার করে বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, উপছেপড়া ঝুড়ি, উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা বড় বড় পÐিতদের মন্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত করেছি। ভারত-বাংলাদেশের নওজোয়ানদের রক্ত বৃথা যায়নি। বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশ, একদিন উন্নত দেশ হবে। বাংলাদেশ বিজয়ী হলে একাত্তর বিজয়ী হবে। ভারত বাংলাদেশ বিজয়ী হবে। যে দল দেশের উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য কোন অবদান রাখতে পারেনি, তারা কী বলে জনগণের ভোট চাইবে। তাদের দাদারা বলতো দেশ ভারত হয়ে যাবে, ধর্ম চলে যাবে। একই কথা তাদের বাবারা বলেছিল, এখন তারা বলে। দেশ ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের দেশ, ভারত হলো, ৬ দফা আন্দোলনে ভারত হলো, ৬৯’র নির্বাচনের সময়, ৭১’র স্বাধীনতার সময় ভারত হলো, স্বাধীনতার পর অনেকবার দেশ ভারতের নিকট বিক্রি হলো। একটি দেশ কতবার বিক্রি হয়।
২০১০ সাল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তখন সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী। তিনি এক বক্তব্যে বললেন, ‘সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে এদেশ একটি অধীনস্থ প্রদেশে পরিণত হয়েছে।’ একজন দায়িত্বশীল নেত্রী হয়ে তিনি চিন্তা করলেন না, দেশ ‘অধীনস্থ প্রদেশ’ হলে তিনি তো স্বাধীন দেশের সংসদের বিরোধী দলের নেত্রী থাকেন না। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করলো তখন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের এক দশমাংশ এলাকা বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যাবে। ফেনীর ওপারে ভারতীয় পতাকা উড়বে।’ ২২ বছর পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন হয় নি, ভারতীয় পতাকাও উড়েনি। এই চুক্তির পর খালেদা জিয়া পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ভারতের প্রদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ?
পাকিস্তান আমলে একবার মুসলিম লীগ ক্ষমতা হতে বিদায় নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রধান শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টির সহায়তায় সরকার গঠিত হয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিদেশে সফরে গেলে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবুল মনসুর আহমদ। তিনি দিল্লী সফরে আমন্ত্রিত হয়ে যাওয়ার সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের জন্য সুন্দরবনের এক কৌটা খাঁটি মধু নিয়ে যান। সাথে সাথে মুসলিম নেতা ও তাদের পত্রিকা সমালোচনা করে বলতে থাকেন ‘শত্রæ দেশের রাষ্ট্রপতিকে মধু তোষামোদ কেন? ভারতের কাছে পাকিস্তানের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র রুখতে হবে।’ তারপরও আবুল মনসুর আহমদ রাজেন্দ্রপ্রসাদের হাতে মধু অর্পণ করে আলোচনা শুরু করে। রাজেন্দ্রপ্রসাদ বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যদি প্রকৃত মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠতো তাহলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক শুভ কল্যাণধর্মী শক্তির উদ্ভব হতো।’
দিল্লী সফর শেষে আবুল মনসুর আহমদ পাকিস্তানের করাচি বিমান বন্দরে অবতরণ করলেন, তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ! দেশে মধু নিয়ে যে হৈ চৈ, সমালোচনা তারপরও কী ভারতের রাষ্ট্রপতি আপনার মধু গ্রহণ করেছেন ? তিনি জানালেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমার মধু গ্রহণ করেছেন, কিন্তু দিল্লী যাওয়ার পথে মধুর সব মিষ্টত্ব হারিয়ে।’
এত যুগ পরও আমাদের দেশের কিছু লোক এমন কাজ করে ফলে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠা কাজগুলোর মিষ্টত্ব নষ্ট হয়। দুই দেশের মিষ্টত্ব হারানোর কাজ তো কোন দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে না। যে ইউরোপ এক সময় যুদ্ধে মেতে থাকতো সে ইউরোপ আজ অনেক বিষয়ে একীভ‚ত। তারা বুঝছে, যুদ্ধ কারো জন্য কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না। দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো যদি সম্মিলিত ভাবে অনেক বিষয়ে ঐক্যমতের পথে এগিয়ে আসতো, তাহলে সবদেশের কল্যাণ বয়ে আনতো।
লেখক : কলামিস্ট, রাজনীতিক