হালদা নদীতে গতকাল মঙ্গলবার অভিযান পরিচালনা করেন হাটহাজারীর ইউএনও রুহুল আমীন। এ সময় বালুবাহী দু’টি নৌকার ইঞ্জিন ধ্বংস করা হয়। এছাড়া প্রায় ৩ হাজার মিটার ঘেরা জালও জব্দ করে ধ্বংস করা হয় বলে জানান তিনি।
ইউএনও রুহুল আমীন জানান, প্রসাশনের চোখ ফাঁকি দিতে ভোর রাত ৪টায় মৎস্যদস্যুরা হালদায় জাল পেতে মা-মাছ শিকার করছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রাম পুলিশের সহায়তায় সাত্তারঘাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্পটে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ৩ হাজার মিটার ভাসা ও ঘেরা জাল জব্দ করা হয়। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হালদায় চলাচল করায় বালুবাহী দুইটি নৌকার ইঞ্জিনও ধ্বংস করা হয়।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন এককভাবে নদীতে প্রায় ছোট-বড় অর্ধশতাধিক অভিযান চালিয়েছে। এতে দেড় লাক্ষাধিক মিটার জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করেছে। এছাড়া বালু উত্তোলনের ১২টি ইঞ্জিন, ১০টি নৌযান ধ্বংস ও দু’জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছে।
এদিকে হালদা নদী থেকে রুই জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মাছের ডিম সরাসরি সংগ্রহ করা হয়। হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীতে প্রতি বছর বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসে ডিম ছাড়ে মা-মাছ।
গত ৫ মে হালদায় রুই জাতীয় মা-মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে মেঘের গর্জন ও বর্ষণে নদীতে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট স্রোতে হালদায় ডিম ছাড়তে পারে মা-মাছ। তাই মা-মাছের নিষিক্ত ডিম ছাড়াকে কেন্দ্র করে নদীর পাড়ে এখন উৎসবের আমেজ। জাল, নৌকা ও বালতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে সহস্রাধিক জেলে ডিম সংগ্রহের জন্য প্রহর গুনছেন।
তবে চলতি মাসের ৭ মে থেকে শুরু হওয়া রমজান মাসে ভোর রাতে যখন সেহেরি খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, ঠিক ওই সময় হালদা নদীতে বেপরোয়া হয়ে উঠে মৎস্যদস্যুরা। প্রসাশনের চোখ ফাঁকি দিতে ভোর ৪টায় মাছ শিকারিরা হালদায় জাল পাতে। অথচ হালদার নাজিরহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাকে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে সরকার। এ অভয়াশ্রমে সারাবছর যে কোনো উপায়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এমনকি প্রজননের মৌসুম মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচলেও রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। তাই এসব কিছু নজরদারির জন্য নদীর বিশাল এ অংশে শুধুমাত্র দু’জন আনসার সদস্যকে নিয়োগ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
প্রশাসনিক এ দুর্বলতা ও রমজান মাসকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন উপায়ে মা-মাছ নিধন, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল করে নদীকে দূষিত করার পাশাপাশি মাছের অবাধ বিচরণকে বাঁধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
নিভরযোগ্য সূত্র জানায়, হালদার পাড়ের গড়দুয়ারা, ছিপাতলী, মেখল উত্তর মাদার্শা, নাঙ্গলমোড়া ও ফরহাদাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় মৎস্যদস্যুরা মা-মাছ নিধন করছে। এতে জনমনে প্রশ্নের সঞ্চার হচ্ছে। হালদা কি মা-মাছের অভায়াশ্রম, নাকি মৎস্যদস্যুদের নিরাপদ স্থান?
হালদায় প্রতিদিন মৎস্য নিধন অব্যাহত রয়েছে- এমন দাবি করে হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদায় মা মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এতে মাছের আকালসহ নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হালদা হারাবে তার ঐতিহ্য। তাই হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের মতো ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলা প্রশাসন একযোগে কাজ করলে নদীতে বালুবাহী যান্ত্রিক নৌযান ও মৎস্যদস্যুদের তৎপরতা বন্ধ হবে।