দুই বছরের মধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ পঞ্চাশে আসবে চট্টগ্রাম বন্দর

46

আগামী দুই বছরে বিশ্বের সমুদ্র বন্দরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান শীর্ষ পঞ্চাশে নিয়ে আসতে কাজ করছে সরকার। চলতি বছর ৭০তম অবস্থান থেকে ৬ ধাপ এগিয়ে উঠে এসেছে ৬৪ নম্বরে। ১০ বছর আগে রুটিন ওয়ার্কে চলতো চট্টগ্রাম বন্দর। কিন্তু বর্তমানে বিশেষায়িত দৃষ্টিভঙ্গিতে রয়েছে। নভেম্বর মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হবে। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় বন্দর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সেমিনার হলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নবগঠিত উপদেষ্টা কমিটির প্রথম সভায় কমিটির সভাপতি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বন্দরকে আরও আধুনিক করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। তার উন্নয়ন পরিকল্পনায় চট্টগ্রাম বন্দরও সম্পৃক্ত রয়েছে। সময়ের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বেড়েছে। এ অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল সেক্টরকে একসাথে কাজ করতে হবে।
সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর সবার আলোচনায় উঠে এসেছে বে-টার্মিনাল যেন দ্রুত হয়। এছাড়া বে-টার্মিনাল সরকার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। যে কোনো মুহূর্তে আমরা এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। যত শীঘ্রই টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু করা যায় সে ব্যাপারে স্টেক হোল্ডারদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পূর্বের উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত কেন বাস্তবায়ন হয়নি, যদি বাস্তবায়নই করতে না পারি তাহলে সিদ্ধান্ত নিলাম কেন আমরা। ভবিষ্যতে এগুলো খুব সর্তকর্তার সাথে দেখা হবে। আর অবৈধভাবে চলাচলকারী বাল্কহেড বন্ধে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
এসময় পূর্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন উপদেষ্টা কমিটির সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
কর্ণফুলী ড্রেজিং কবে নাগাদ শেষ হবে এবং ড্রেজিংয়ে প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী আমাদের লাইফলাইন। এটাকে ব্যবহার উপযোগী রাখতে যে সকল পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা আমরা নিচ্ছি। যে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা দরকার তা আমরা করছি। ড্রেজিং এমন একটা জিনিস, সিলটেশন হয়। এটা চলমান প্রক্রিয়া, থেমে থাকবে না।
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বহির্নোঙরে এখনো নাভিঃশ্বাস হয়নি। আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। নানা কারণে বন্দরে কনজেশন হচ্ছে। এই সেক্টরটা অনেক সময় প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতি অনেক সময় বাধা হয়ে থাকে। জটিলতা তৈরি হয়। এছাড়া নিলামযোগ্য কন্টেইনার সরানো আরো স্মুদ করা দরকার। স্ক্যানার সরকার অনুমোদন করে দিয়েছে। এগুলো চলে আসলে আরো গতিশীল হবে বলে যোগ করেন মন্ত্রী।
বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ‘অলস’ অর্থ সরকারি তহবিলে নেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অলস অর্থ তো অলসই। অলস অর্থকে সচল করতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সভা শেষে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বে -টার্মিনালের কাজ যত দ্রুত সম্ভব শুরুর কথা বলেছি। আগে যেন ট্রাক টার্মিনালটির কাজ শুরু করে সেজন্য প্রস্তাব দিয়েছি। প্রতিমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। উপদেষ্টা কমিটির সভায় যে সমস্ত সিদ্ধান্ত হয় সেগুলো বাস্তবায়ন হয় না কেন, সেটা আমরা বলেছি। আজ (বুধবার) যে সিদ্ধাস্ত হয়েছে সেগুলো তিনমাসের মধ্যে বাস্তবায়ন চাই।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ওয়াসিকা আয়েশা খাঁন, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ, কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, শেখ হাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, সহ-সভাপতি ও সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন, বাফা’র বন্দর কাস্টম বিষয়ক পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, বিজিএমইএর নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আকতার হোসেন, বিকেএমইএর পরিচালক শওকত ওসমান, শিপার্স কাউন্সিলর অমিয় শঙ্কর বর্মন, নুরুল হক, বারভিডার সভাপতি আবদুল হক প্রমুখ।