দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হোক

45

রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার জন্য এলওসিসহ বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে ৯টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চীনের গ্রেট হল অব পিপলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। দুই দেশের উন্নয়ন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পারস্পরিক স্বার্থরক্ষায় একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে সম্মত করতে চীন চেষ্টা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। আমরাও আশাবাদী হতে চাই, কারণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের পাশাপাশি চীনের ভ‚মিকা স্পষ্ট হলে এটি সমাধান সম্ভব বলে মনে করছি।
৯টি চুক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সাহায্য সংক্রান্ত এলওসি এর আওতায় মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য চীন ২ হাজার ৫০০ টন চাল সরবরাহ করবে; সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা; ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদের তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা; ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স¤প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট; বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি; ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ওয়ার্কিং গ্রæপ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতা স্মারক। চুক্তিগুলো সময়োপযোগী বলা যায়। প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ইস্যুটি বারবার আলোচিত হয়েছে। বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।
গত মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জু রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সুষ্ঠু পরিবেশে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তার দেশ। এ ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। চীন বাংলাদেশের অকৃত্রিম ও পরীক্ষিত বন্ধু।
বর্তমানে চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বৃহত্তম অংশীদার। চীনের বিনিয়োগ ও সহযোগিতায় বেশকিছু সর্বাধুনিক নির্মাণকাজ বাংলাদেশে হয়েছে। চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখানে পরিবহন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি খাতে কাজ করছে। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রভৃতি খাতেও সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে। চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন। এই লক্ষ্যেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কানেকটিভিটি বাড়ানোর জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।
আমরা আশা করব, চীন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাবে। বিশেষ করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পূরণে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরো প্রসারিত হবে- এমন প্রত্যাশা রাখছি। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডবিøউইএফ) বার্ষিক সম্মলনে অংশগ্রহণ করতে চীন সফরে যান। বুধবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নমূলক বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাঁচটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের ডালিয়ানে চলমান ওই সভায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় সহযোগী দেশগুলোকে আরও সহযোগিতার আহব্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিক হল- আমরা মাঝেমধ্যে শুধু কয়েকটি বৃহৎ অর্থনীতির সক্ষমতা কিংবা তাদের প্রয়োজনের আঙ্গিকেই সবকিছু দেখি। কিন্তু টেকসই বিশ্বের জন্য আমাদের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীসমূহের অথবা দুর্বল অর্থনীতিগুলোর মূল উদ্বেগ নিরসনের উপায়ও বের করতে হবে। নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে প্রধানমন্ত্রীর করা উক্তিটি বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আহব্বানে সাড়া দিয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলো এগিয়ে এলে গোটা বিশ্বের জন্যই তা কল্যাণকর হবে।
প্রধানমন্ত্রী যে পাঁচটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন তা হল- দেশগুলোর মধ্যে পরস্পর শান্তি-স¤প্রীতি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি, টেকসই উন্নয়নের সবদিকে দৃষ্টি দেয়া, দেশগুলোর পারস্পরিক স্বার্থে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলা, সবার জন্য সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে সার্বিক উন্নয়ন করা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা।
দেখার বিষয়, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও সব দেশের স্বার্থ, অর্থনৈতিক মুক্তি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার সুমধুর বাণী তুলে ধরেছেন শেখ হাসিনা। কর্তৃপক্ষ তো বটেই, বর্তমানে হানাহানি ও প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব বেড়ে যাওয়ার যুগে তার বক্তব্য আমলে নেয়ার বিকল্প নেই।