দিল্লির মসনদে আবার মোদী

62

আবার নরেন্দ্র মোদীর হাতেই দেশের ভার দিল ভারতের জনগণ। ভোটগণনায় স্পষ্ট, দ্বিতীয়বারের জন্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠন করছে টিম মোদী। আর সেই সঙ্গেই ইতিহাসে ঢুকে পড়লেন মোদী। দেশের ইতিহাসে মোদীই হতে চলেছেন তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পর পর দু’বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী হলেন। অর্থাৎ কোনও জোট বা শরিক দলের সাহায্য ছাড়াই সরকার গঠনের জন্য ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে গেল কোনও দল। এর আগে জওহরলাল নেহরু পর পর তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন কংগ্রেসের হয়ে। ১৯৬৭ এবং ১৯৭২ সালে পর পর দু’বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। এই দু’বারও একাই ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস।
ভারত জুড়ে ফের গেরুয়া ঝড়। আর সেই ঝড়ে বেসামাল হিন্দি বলয় থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার-ওড়িশা, এমনকি উত্তর-পূর্ব। একক ভাবে বিজেপি আগের বারের ২৮২ টপকে গেছে। উল্টো দিকে বিরোধী শিবিরে শুধুই হতাশা। চন্দ্রবাবু নায়ডু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়বতী-অখিলেশরা যে জোট গড়ার চেষ্টায় ছিলেন, নিজেদের রাজ্যেই শোচনীয় ফল তাদের। পশ্চিমবঙ্গে এক ধাক্কায় আসন বাড়ল বিজেপির। ।
এদিকে সাত ধাপের দীর্ঘ ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার পর বুথ ফেরত জরিপের ফলাফলকে বিরোধীরা পাত্তা না দিলেও সেটাই সত্যি হয়েছে; ভারতের মসনদে নরেন্দ্র মোদী এবং আরও শক্তিশালী হয়ে।
বিতর্কিত নানা অধ্যায় ছাপিয়ে নিজেকে ‘চায়েওয়ালা’ পরিচয় দিয়ে পাঁচ বছর আগে ভোটের লড়াইয়ে জিতে দিল্লির মসনদে বসেছিলেন মোদী; এবার ভোটের আগে শাসক পরিচয়ের পরিবর্তে নিজেকে ‘চৌকিদার’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোট গণনায় দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেস পরিবারের প্রতিনিধি অভিজাত রাহুল গান্ধীর পরিবর্তে ‘চৌকিদার’ মোদীতেই ভরসা খুঁজেছেন ভারতের প্রায় ৯০ কোটি ভোটার।
প্রাথমিক ফল দেখে উচ্ছ¡সিত মোদী বলেছেন, ফকিরের ঝোলা ভর্তি করে দিয়েছেন দেশবাসী, বললেন মোদী। আবারও জিতল ভারত। আমরা বেড়ে উঠেছি একসঙ্গে, সমৃদ্ধি এনেছি একসঙ্গে, এক সঙ্গে থেকেই আমরা শক্তিশালী ভারত গড়ব, যা হবে সবার জন্য। ভারত আবারও জিতে গেল, টুইট লিখেছেন তিনি।
ভোটের ফল দেখে সোশাল মিডিয়ায় নিজের একাউন্ট থেকে ‘চৌকিদার’ শব্দটি ছেঁটে ফেললেও টুইটারে তিনি লিখেছেন, এটা এখন তার অন্তরে স্থান নিয়েছে।
ভোটের পুরোটা সময় কংগ্রেস এবং আঞ্চলিক দলগুলো মোদীবিরোধী জোয়ার তৈরির চেষ্টা করলেও তা যে কাজে আসেনি তা দেখা যাচ্ছে ফলাফলে।
ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে তামিলনাড়ুর একটি বাদে সবকটি আসনে এবার নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে সরকার গঠনের জন্য কোনো দল বা জোটকে পেতে হবে ২৭২টি আসন।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ৩৪৯ আসনে জিতেছে এনডিএ জোট; ২০১৪ সালের চেয়ে বেশি আসন পেয়েছে তারা। গতবার শুধু বিজেপির আসন ছিল ২৮২টি, এবার তাদের পদ্মফুল ৩০২ আসনে জয়ী হয়েছে, জোটের আসন ৩৪৯।
এবার কংগ্রেস নেতৃত্বধীন জোট ইউপিএ ৮৭টি আসনে এবং ১০৬টি আসনে অন্যান্য দল জয় পেয়েছে। ২০১৪ সালের চেয়ে কংগ্রেসের আসন বাড়লেও তা মোদীকে হটানোর মতো নয় কোনোভাবেই।
২০১৪ সালে কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৪টি আসন, যা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরনো দলটির ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে পরাজয়।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে মোদীকে হারাতে একাট্টা হয়েছিল বিভিন্ন আঞ্চলিক দল, কংগ্রেস তো ছিলই। বিশেষ করে ভোটের প্রচারে রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মোদীর কথার লড়াই বেশ জমে উঠেছিল।
কিন্তু সব বাক্যবাণকে পেছনে ফেলে শেষতক মোদী ম্যাজিকেই বাজিমাত। কয়েকটি আসনে হারলেও তার বিজেপি এবং জোট এনডিএই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ।
বিশ্লেষকরা বলছে, এই ফলাফলের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, বিজেপির পক্ষে ভোট টানতে মোদী একাই যথেষ্ট।
যদিও সমালোচকরা বলছেন, মোদী অর্থনীতির যে ব্যাপক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন তা কখনোই পূরণ করা সম্ভব তো হবেই না, পাশাপাশি তার নেতৃত্বে ভারতে আরও বেশি ধর্মভিত্তিক মেরুকরণ ঘটবে।
দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় রাজনীতিতে পারিবারিক প্রভাব দূর করার ক্লান্তিকর লড়াই চালিয়ে আসা কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীই এবারের লোকসভা নির্বাচনে মোদীর মূল প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন। কিন্তু তার দলের যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সম্ভব ছিল না, সে বিষয়ে আগেই আভাস দিয়ে রেখেছিলেন বিশ্লেষকরা।
যার সঙ্গে মোদীর বাকযুদ্ধ এবার সবচেয়ে বেশি আলোচনার খোরাক হয়েছিল, সেই মমতার পশ্চিমবঙ্গেও এবার গতবারের তুলনায় বলতে গেলে অভাবনীয় ফল এসেছে বিজেপির। মমতার তৃণমূল আর কংগ্রেসের আসনে এবার ভাগ বসাতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি।
এ রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ২০১৪ সালে বিজেপির ছিল দুটি, এবার সেখানে ১৮টি আসন পেয়েছে। বিপরীতে মমতার তৃণমূলের আসন কমে আসছে ২২টি, গেলবার ছিল ৩৪টি। আর এবার কংগ্রেসের আসন তিনটি কমে একটি হচ্ছে। এ রাজ্যে প্রায় তিন দশক ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্ট ২০১৪ সালে ২টি আসনে জিতলেও এবার ফিরেছে শূন্য হাতে।
বিবিসির সাংবাদিক সৌতিক বিশ্বাসের দৃষ্টিতে, প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্যারিশমা এই ফলাফলের মধ্যে দিয়ে অটুট রইল।
তিনিই বিজেপির পক্ষে তিনিই যে ভোট টানেন সেটা আবারও প্রমাণ হলো। বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানেই তাকে ভোট দেওয়া- মোদীর এই মন্তব্য কার্যকর হয়েছে, তা ভোটের ফলাফলেই প্রমাণিত।
দ্বিতীয়ত, সাংগঠনিক দক্ষতা, যোগাযোগের সব ধরনের আধুনিক প্রক্রিয়া ব্যবহারসহ বিভিন্নভাবে বিজেপি দল হিসেবে শক্তি অর্জন করেছে, তা এখন অতিক্রম করা যে খুবই কঠিন, যার প্রমাণ ভোটের প্রচারে মিলেছে বলে সৌতিকের মত ।
তিনি বলেন, ভোটের প্রচারে বিজেপি যেভাবে অত্যন্ত কৌশলীভাবে জাতীয়তাবাদ, উন্নয়ন এবং ধর্মীয় মেরুকরণ নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে, তার বিপরীতে বিরোধী দলগুলো কার্যকর বক্তব্য হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিজেপির শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে কংগ্রেসকে এখন নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে। এজন্য শত বছরের প্রচীন দলটিকে এখন কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি আঞ্চলিক পর্যায়ে দক্ষ নেতা এবং তুণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।
শহর ও গ্রামে কর্মসংস্থানের যে সঙ্কট, সেটা কখনোই ভোটে জেতার জন্য শক্তিশালী বার্তা হতে পারে না, যেখানে মোদী ‘জাতীয়াবাদের’ মতো ভাষা দিয়ে বাজিমাত করেছেন।
কৃষির সঙ্কট, বাড়তে থাকা বেকারত্ব আর অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ভারতের ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়ার শঙ্কা- সব মিলিয়ে সম্ভবত অর্থনীতিই হয়ে দাঁড়াবে মূল চ্যালেঞ্জ।
একদিকে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন অন্যদিকে পণ্যৌর দাম কমে যাওয়া- এই দ্ুেয় ভারতের কৃষি খাতে বিরাজ করছে এক ধরনের স্থবিরতা। বিপুল পরিমাণ ঋণে জড়িয়ে দিশেহারা বহু কৃষক।
মোদীর শাসনামলে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি কিছু ক্ষেত্রে গতিহীন হয়ে পড়েছে। প্রবৃদ্ধি আটকে আছে সাত শতাংশে। তাছাড়া এবছরই সরকারের ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি পতিবেদনে দেখা গেছে, ১৯৭০ এর পর দেশে বেকারত্বের হার বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এবারের নিরবাচনকে অনেকেই দেখেছেন ভারতের নিজস্ব পরিচয় এবং সংখ্যালঘুদের জন্য লড়াই হিসেবে। মোদীর গেল পাঁচ বছরে হিন্দু জাতীয়তাবাদই মূল ধারা হয়ে উঠেছে। এ সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা গরু পাচারের অভিযোগ তুলে বহু মুসলিমকে পিটিয়ে মারার ঘটনাও ঘটেছে।
গত ফেব্রæয়ারিতে ভারতশাসিত কাশ্মিরে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গ্রুপের আত্মঘাতী হামলায় আধাসামরিক বাহিনীর ৪০ সদস্য নিহত হওয়ার পর জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


ভারতে আবার মোদী সরকার
কী প্রত্যাশা
করতে পারে
বাংলাদেশ?
বিবিসি বাংলা
দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুই দেশের রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। ভারতে এ সময়ে প্রথমে কংগ্রেস এবং পরে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও দুই দেশের সম্পর্কে কোনো হেরফের ঘটেনি। এই সময়ে দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়, ভারতকে সড়কপথে ট্রানজিট দেওয়া, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে সাধারণ মানুষের আসা যাওয়াও আগের চেয়ে বেড়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করেন, এখন ভারতে নতুন সরকার গঠন হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাত্রায় তেমন পরিবর্তন আসবে না। বাংলাদেশকে এখন ভাবতে হবে কিভাবে সে সম্পর্কে আরো গতি আনা যায়
এখানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যখন সরকার গঠন হলো, তখন কংগ্রেস ক্ষমতায়, সে সময় যে বিষয়গুলো নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল, বিজেপির আমলে তার ফলাফল দেখতে পেয়েছি আমরা।
এখন বিজেপি পুনরায় সরকার গঠন করলে, দুই দেশের মধ্যে যেসব দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে সহযোগিতা চলমান আছে, তার ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে বলে মনে করেন তিনি।
তবে, তিনি মনে করেন বাংলাদেশের কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে অর্থনৈতিক বিষয়গুলো, যেমন বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়গুলো। গত মেয়াদে অর্থনৈতিক সহযোগিতার কথা বললেও মোদী সরকার ততটা অগ্রগতি করতে পারে নাই।’
হয়ত এবারে নতুন দফায় সেদিকে অগ্রগতি হবে, সে আশা করা যায়। এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ বলেন, আর বাণিজ্য বৃদ্ধি বলেন, আমাদের দেখতে হবে কিভাবে সেটা বাড়ানো যায়। খবর বিবিসি বাংলার
গত এক দশকে নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের যেসব উদ্বেগের জায়গা ছিল, বাংলাদেশ সেসব ইস্যু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করেছে, সেটা দুই দেশের সম্পর্কে আস্থা বাড়িয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত কবির বলছেন, সে আস্থা আর সুসম্পর্ক থেকে উভয় দেশই লাভবান হচ্ছে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে দুই দেশকে। কিন্তু গত এক দশকে দুই দেশের সম্পর্কে অনেক অগ্রগতি হবার পরেও তিস্তাসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি বণ্টনসহ দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। দিল্লি সব সময় বলে এসেছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তিতেই মূলত তিস্তা চুক্তি আটকে আছে।
এবার নরেন্দ্র মোদী তার প্রথম দফার চেয়ে বড় ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন, এবং পশ্চিমবঙ্গেও তার দল সাফল্যের দেখা পেয়েছে। তাহলে কী তিস্তা নিয়ে এবার আশাবাদী হতে পারে বাংলাদেশ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, এখনি সে আশা করা হলে ভুল হবে। মনে রাখতে হবে তিস্তা ইস্যু ভারতের জন্য একটা দরকষাকষির বিষয়। ফলে খুব শীঘ্রই এটা সমাধান হয়ে যাবে সে আশা করা ভুল হবে। এই তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির আরেকটা রূপ দেখা যাবে কয়েক মাসের মধ্যেই। তখন বোঝা যাবে এজন্য মমতা ব্যানার্জীর আপত্তিই একমাত্র কারণ কিনা।
তবে, অধ্যাপক ইয়াসমিন মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের সম্পর্কে অগ্রগতির পেছনে সেইটি প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে বলে তিনি মনে করেন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেশ বড়। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৪ লাখ কোটি টাকার বেশি।
এর বাইরেও দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন ইস্যু রয়েছে, সম্পর্কে আস্থা ধরে রাখার জন্য যেগুলোতে মনোযোগ দিতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা, বলছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
ভারত বাংলাদেশকে যে লাইন অব ক্রেডিট দেয়, সেটা ছাড় করায় দীর্ঘসূত্রিতা থাকে, প্রকল্প পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে। আবার এর শর্ত থাকে তাদের দেশ থেকে কাঁচামাল কিনতে হবে, সেটা অনেক সময় আমাদের জন্য সুবিধাজনক হয় না।
এর বাইরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতিও অনেক। এসব বিষয় আগের মেয়াদে কোন সমাধান আসেনি, এবার মোদী সরকার সে বিষয়ে নজর দেবে সেটাই হবে বাংলাদেশের প্রত্যাশা।
যদিও ভারতের বাজারে বাংলাদেশের প্রায় ৯৮% পণ্য বিনা শুল্কে প্রবেশের অধিকার লাভ করেছে। কিন্তু নানা রকম অশুল্ক বাধার কারণে সে সুবিধা বাংলাদেশ পুরোপুরি নিতে পারছে না। ফলে সামনের দিনে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য আলোচনার মাধ্যমে অমীমাংসিত বিষয় সমাধানের দিকে যেতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।