দিনভর টেম্পুর দখলে সড়ক সন্ধ্যায় বসে ‘চাঁদার বাজার’ প্রতিদিন তীব্র যানজট, চরম ভোগান্তি

136

নগরীর কয়েকটি ব্যস্ততম মোড়ের অন্যতম মুরাদপুর। যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাত দখল, অবৈধ টেম্পুর স্ট্যান্ড যেন মোড়টিকে গিলে খেয়েছে। জ্যামে আটকা পড়ে গাড়ির যাত্রী গাড়িতে, ফুটপাতের পথচারী রাস্তায় আর চলন্ত গাড়ি ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সড়কের মধ্যখানে। মোড়ের এই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে। দিনজুড়ে শুধু গাড়ির অত্যাচার নয়, সন্ধ্যার পর রাস্তাজুড়ে বসে বাজার। তখন যানজটের পরিমাণ আরও তীব্র হয়ে যায়। ফলে কর্মঘণ্টা যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ভোগান্তি ছাড়িয়েছে নগরবাসীর সহ্যের সীমাকে।
মুরাদপুর মোড়ের প্রবাসী বেকারির সামনের ফুটপাতে চলছে ফলের ব্যবসা। পুরো ফুটপাট দখল করে বসানো হয়েছে এসব দোকান। তারই পাশে রাস্তার উপর স্থাপন করা হয়েছে ট্রাফিক পুলিশ বক্স। সে পুলিশ বক্সের সাথে তালমিলিয়ে আরেক দফা রাস্তা দখল করেছে ভ্রাম্যমাণ হকাররা। দৈনিক চাঁদা ও মাসোয়ারা দিয়ে রাস্তা ও ফুটপাতের উপর চলে এসব ব্যবসা। ফলে রাস্তা হয়ে উঠেছে সংকীর্ণ আর সৃষ্টি হচ্ছে গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন।
মোড়ের আরেক পাশ দিয়ে উত্তর চট্টগ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী গাড়িগুলো চলাচল করে। রাস্তার উপর সারি করে দাঁড়িয়ে আছে সিএনজি টেম্পু, যেগুলো স্থানীয়দের কাছে টিকটিকি নামেই বেশি পরিচিত। একদফা রাস্তা দখল করার পর বাকি জায়গায় চলে যাত্রী তোলার অসুস্থ প্রতিযোগিতা। সিএনজি টেম্পুগুলোর বেশিরভাগই অবৈধ, মাসিক দুই হাজার টাকা মাসোয়ারা এবং দৈনিক বিশ টাকা করে দিতে হয় প্রতিটি গাড়িকে। আলম নামের লাইনম্যান এ টাকাগুলো সংগ্রহ করে বলে জানিয়েছেন চালকরা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যার পর মুরাদপুর মোড়ের ভোগান্তি আরও ভয়াবহ হয়। কেননা সন্ধ্যার পর থেকে রাস্তার উপর বসে বাজার। সে বাজারে দখল হয়ে যায় রাস্তার অধিকাংশ। তখন যানজটের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। সময় চলে যায়, কিন্তু মুরাদপুর মোড়ের ভোগান্তি যেন দিন দিন বাড়ছেই।
স্থানীয় বাসিন্দা আকবর পূর্বদেশকে বলেন, এটা হচ্ছে মুরাদপুর মোড়, যেখানে যাচ্ছেতাইভাবে গাড়ি দাঁড়াতে পারে। রাস্তার মাঝখানে হলেও কোনো সমস্যা নেই। হাঁটার জন্য ফুটপাট কখন খোলা ছিল, সেটা মানুষের জানা নেই। শুধু গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা মাসিক টাকা তোলে আর পুলিশকে ম্যানেজ করে অন্ধ করে রাখে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা নাগরিক, তাই দুর্ভোগ আমাদের অধিকার।
শুধু সিএনজি টেম্পু নয়, রাস্তার উপর ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে লোকাল ও হাটহাজারির বাসগুলো। মোড়েই দাঁড়িয়েই যাত্রী তোলা তাদের প্রতিদিনকার অভ্যেস। কিছুক্ষণ পর ট্রাফিক পুলিশ এসে কয়েকটি গাড়ি সরিয়ে ক্ষান্ত হয়ে পড়েন। এতে যেন তাদের দায়িত্বের সবটুকু পালন হয়ে যায়। গত বুধবার নগরীর মুরাদপুর মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে এমনটা দেখা গিয়েছে।
ওইদিন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট আজিজুল। তিনি বলেন, ফুটপাতে দোকানপাট দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের না। এগুলো উচ্ছেদের দায়িত্ব থানার। তবে আমরা চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে সেগুলো সরিয়ে দিই। তবে মজার বিষয় হল, পুরো শহরের সবগুলো মোড় থেকে কম যানজট হয় মুরাদপুরে। তিনি আরও বলেন, পত্রিকায় যা যানজট বলে লিখা হয়, তা মূলত যানজট নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় যদি দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, সেগুলোকে যানজট বলা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী পূর্বদেশকে বলেছেন, পুরো শহরের সবদিকে যানজট কমলেও মুরাদপুর মোড়ে দিনদিন বাড়ছে। দিনে রাস্তাজুড়ে টেম্পু আর বাস দখল করে থাকে। আবার সন্ধ্যার পর রাস্তাজুড়ে বসে কাঁচাবাজার। ফলে আমার ওয়ার্ডসহ লাখো নগরবাসীর প্রতিদিন দুর্ভোগ সইতে হচ্ছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের গাফিলতির কারণে এমনটা হচ্ছে বলে দাবি করেন এ কাউন্সিলর।
তিনি আরও বলেন, বাজারটিকে সরিয়ে পাশের বিবিরহাট বাজারে নিয়ে আসা প্রয়োজন। এজন্য আমি সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় মেয়র মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এছাড়াও রাস্তায় একসাথে এতগুলো টেম্পু দাঁড়ানোর কোনো যৌক্তিকথা নেই। এগুলোকে রানিংয়ে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। মুরাদপুরকে যানজটমুক্ত করছে আমি পাঁচলাইশ থানার ওপেন হাউজ ডে’র সভায় বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেছি। তারপরও কোনো উল্লেখযোগ্য সারা পাইনি।