দায়িত্ব পালনে সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকতে হবে

46

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ এবং শৃঙ্খলাকে সৈনিক জীবনের পাথেয় আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নবীন সৈনিকদের দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ব্রতী হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ থেকে আপনাদের ওপর ন্যস্ত হচ্ছে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আপনাদের সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে ‘৭৬তম বাফা কোর্স’ এবং ‘ডিই-২০১৮’ কোর্স সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০১৯’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
১০৪ জন অফিসার ক্যাডেট এদিন কমিশন লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশমাতৃকার প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার জন্য বিমান বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহŸান জানান।
তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আপনারা শপথ গ্রহণ করেছেন। কাজেই এটা হবে আপনাদের জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান ও প্রথম ব্রত।’
‘নিঃস্বার্থভাবে জনগণের পাশে থাকবেন এবং দেশের সেবা করবেন এটাই সকলের প্রত্যাশা, যোগ করেন তিনি।
উন্নত চরিত্র এবং মানসিক শক্তি একজন বিমান সৈনিককে আদর্শ সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড বজায় রাখবেন, অধস্তনদের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন। তাহলেই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’
শেখ হাসিনা এ সময় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ‘পাসিং আউট’ ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেই বক্তব্যের কিছু অংশের উদ্ধৃদ করে তাদের দায়িত্ব বোধ সম্পর্কে সকলকে সজাগ করেন।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসেবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেকো, মাতৃভূমিকে ভালো বাইসো। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবা, গুরুজনকে মেনো, সৎ পথে থেকো, শৃঙ্খলা রেখো, তা হলে জীবনে মানুষ হতে পারবা।’
জাতির পিতার এ নির্দেশনা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালনের জন্যও নবীন কর্মকর্তাদের আহŸান জানিয়ে বলেন, ‘আমি আশা করব, একথা আপনারা সবসময় স্মরণ রাখবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবেন- সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, অকৃত্রিম দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে এবং সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার যে শপথ আজ আপনারা নিলেন- তার বাস্তবায়ন আপনারা সবসময় করে যাবেন।’
‘নব প্রজন্মের উদীয়মান কর্মকর্তা হিসেবে আজকের বিমান বাহিনীকে আপনারা নিয়ে যাবেন সফলতার শিখরে- এই আমার প্রত্যাশা’, যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিধি ও সম্ভাবনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে জাতির পিতা একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও পেশাদার বিমান বাহিনী গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
তিনি বলেন,জাতির পিতার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে স্বাধীনতার পরপরই বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয় সে সময়কার অত্যাধুনিক ‘মিগ-২১’ সুপারসনিক ফাইটার বিমানসহ পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স রাডার।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিমান বাহিনীকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে এর উত্তরোত্তর উন্নতি সাধন করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আমরা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করি-যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন ধরনের বিমান, রাডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহোলিং এর লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার।
তিনি বলেন, দেশের এভিয়েশন সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিজস্ব জনবল, প্রযুক্তি ও কারিগরি দক্ষতা ব্যবহার করে ফাইটার বিমানের ওভারহলিং করতে সক্ষম।
আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় বিমান বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধাদির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের উপর গুরুত্ব প্রদান করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ক্যাডেটদের মৌলিক প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মেয়াদকাল বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল ককপিট সম্বলিত কমব্যাট প্রশিক্ষণ বিমান এবং পরিবহন প্রশিক্ষণ বিমানসহ হেলিকপ্টার সিমুলেটর স্থাপন করা হয়েছে। খবর বাসস’র
বিমান বাহিনী একাডেমির জন্য অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি প্রশিক্ষিত ও আধুনিক বিমান বাহিনী গঠনে এ উদ্যোগ যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা রাখি।’
কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের আজকের সাফল্যের পেছনে অভিভাবকদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বিশেষ দিনে আপনাদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দোয়া করবেন আপনাদের সন্তানেরা যেন জাতির সামনে দেশপ্রেম ও বীরত্বের আদর্শের উদাহরণ হয়ে ওঠতে পারে।’
দেশের আর্থসামাজিব উন্নয়নের তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ভাবে আজ আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছি।
তিনি বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে জাতির পিতা যেখানে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁরই আদর্শের পথ ধরে আমরা বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করতে পেরেছি। কেননা, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নীতিমালা গ্রহণ করে তার ভিত্তিতেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করবো, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা পালন করবো। কাজেই এই অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যদিয়ে আমাদের স্বাধীনতার পতাকা আরো সমুজ্জ্বল হবে।
শেখ হাসিনা দৃঢ় কন্ঠে বলেন, ‘বিশ্বের দরবারে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব-এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ক্যাডেটদের মাঝে ফ্লাইং ব্যাজ, বিভিন্ন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ট্রফি এবং সম্মানসূচক তরবারি প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী ৭৬ তম বাফা কোর্সে সার্বিকভাবে শীর্ষস্থান অর্জনকারি সার্জেন্ট মাহিম সালিককে সোর্ড অব অনার প্রদান করেন।
তিনি মনমুগ্ধকর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। তিনি বিমান বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের ‘অ্যাপলেট পরিধান’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি এ উপলক্ষে একটি কেকও কাটেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদসবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।