দারোয়ানের নামে চাঁদা আদায়, ক্ষুব্ধ চালকরা

52

নগরীতে সিএনজি চালিত ট্যাক্সির গ্যারেজগুলোতে দারোয়ানের নামে চালকদের কাছ থেকে অবৈধ চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। মালিককে দৈনিক প্রাপ্য প্রদানের পাশাপাশি অতিরিক্ত ২০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে চালকদের। এতে ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের সকল চালক ও শ্রমিক ইউনিয়ন। এ নিয়ে চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন নগর পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগও দিয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল রবিবার একাধিক চালক জানান, সারাদিন ট্যাক্সি চালিয়ে একজন চালক ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা আয় করেন। তার মধ্যে গাড়ির মালিককে দৈনিক প্রদান করতে হয় ৯০০ টাকা। এছাড়া জ্বালানি গ্যাস ৩০০ টাকা, চালকের খাবার ২০০ টাকা ধরা হলে চালকের হাতে থাকে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এরপর গাড়ির দারোয়ানির নামে ২০ থেকে ৫০ টাকা চাঁদা দিতে হলে আমাদের পরিবার চলবে কেমনে?
জানা যায়, নগরীতে ১৩ হাজার ট্যাক্সি চলাচল করে। আর গ্যারেজ রয়েছে ১৭৮টি। এরমধ্যে কমপক্ষে ১১ হাজার ট্যাক্সি চালকের কাছ থেকে প্রতিদিন সর্বনিম্ন ২০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করলে দৈনিক হয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, এক মাসেই চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৬ লাখ টাকা এবং এক বছরে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
সিএনজি ট্যাক্সি চালক শরীফ হোসেন জানান, সারাদিন গাড়ি চালানোর পর আমরা মালিকের টাকা দিয়ে দিই। এখন মালিকের দায়িত্ব হচ্ছে তার গাড়ি কোথায় রাখবে, না রাখবে। এখানে আমাদেরকে কেন দারোয়ানের টাকা দিতে হবে? এভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে গ্যারেজ মালিকগণ। আমরা সামান্য আয় করে ঘর-সংসার চালাই। আমাদের উপর অতিরিক্ত এ অত্যাচার বন্ধ করা হোক।
চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ বলেন, নগরীতে সিএনজি অটোরিকশা গ্যারেজ মালিকগণ অনৈতিকভাবে অটোরিকশা শ্রমিকদের কাছ থেকে দারোয়ানের টাকার নামে চাঁদাবাজি করছে। এটা ওপেন সিক্রেট। আমরা পুলিশ কমিশনার মহোদয়সহ নগরীর প্রত্যেকটি থানায় অভিযোগ দিয়েছি। উনারা আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন, এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সিএনজি ট্যাক্সি চালকরা আগে দৈনিক ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করতেন। এখন অ্যাপসের দৌরাত্মের কারণে ৫০০ টাকা আয় করতে কষ্ট হয়। এছাড়া গাড়ির মালিক ও গ্যাস বাবদ টাকা বাদ দিলে তেমন টাকা তারা ঘরে নিয়ে যেতে পারেন না। গ্যারেজ ও গাড়ির মালিকরা চালকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে, এটি অন্যায়।
বার কোয়ার্টার এলাকার গ্যারেজ মালিক সালাউদ্দিন জানান, আমরা প্রত্যেক গাড়ির মালিক থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে নিই। ফলে আমরা গাড়িগুলোর টুকিটাকি মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করি। চালকদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নেওয়ার কারণ হচ্ছে- ট্যাক্সিটি গ্যারেজে রেখে চালক দায়সারা হয়ে চলে গেলে তার গুরুত্বপূর্ণ কাগজ চুরি হতে পারে। ট্যাক্সি চালক গাড়ির প্রতি দায়বদ্ধ থাকার কারণে ২০ টাকা আদায় করা হয়।
টাকাটা গাড়ির মালিক থেকে নেওয়া হয় না কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মালিকরা চালকের কাছ থেকে টাকার হিসেব নিয়ে চলে যান, কিন্তু গাড়ি নিজ দায়িত্বে রাখেন না। তাই চালকের কাছ থেকে ওই টাকাটা আদায় করে দারোয়ানকে প্রদান করতে হয়। এতে গাড়িটিও নিরাপদে থাকে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান পূর্বদেশকে বলেন, যদি কোন সিএনজি ট্যাক্সির চালক থেকে নিয়ম বহির্ভূত অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়, তাহলে বলবো সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করার জন্য। আমি আমার প্রত্যেক থানাকে মামলা নিতে বলে দিয়েছি।
তিনি বলেন, অন্যায় কখনো মেনে নেয়া হবে না। স্ট্যান্ডার্ড টাকা তারা তো দিচ্ছেনই, তাহলে অতিরিক্ত টাকা নিবে কেন? অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।