দারিদ্র বিমোচনে গ্রাম সমবায় সমিতি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে

58

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও দারিদ্র্যবিমোচনের গতি কমেছে। সেইসাথে বেকারত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক মাসে কর্মসংস্থান তুলনামূলক হয়নি বললেই চলে। এছাড়া এ সময়ে বিদেশ ফেরত অনেক প্রবাসী ভিসা, টিকিট ও আকামা জটিলতায় পরে কর্মদেশে যেতে না পারায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। গ্রামীণ ও নগরের হতদরিদ্র মানুষ কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বলাই বাহুল্য। এ প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের হতদরিদ্র মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব না হলে তা দেশের সার্বিক উন্নয়নে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এটা পরীক্ষিত যে, গ্রাম সমবায় সমিতির কার্যক্রম বেগবান করা হলে দারিদ্র্যবিমোচনে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূলে বহুমুখী গ্রাম সমবায় সমিতি গড়ে তোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুরুত্ব প্রদানের বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। শনিবার ৪৯তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২০ উদযাপন এবং জাতীয় সমবায় পুরস্কার-২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কেবল একা খাব তা নয়, সবাইকে নিয়ে, সবাইকে দিয়ে খাব, সবাইকে নিয়েই কাজ করব; সেই চিন্তা-ভাবনাটাই সমবায়ে সব থেকে বেশি প্রয়োজন। আপনারা সেটাই করবেন- সেটাই আমরা চাই। তিনি আরো বলেন, ‘এটা পরীক্ষিত যে, বহুমুখী গ্রাম সমবায় যদি আমরা গড়ে তুলতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে কোন দারিদ্র্য থাকবে না। দারিদ্র্যটা সম্পূর্ণ নির্মূল হবে। সেটা আমরা করতে পারবো।’ একইসঙ্গে তিনি সমবায়ের ক্ষেত্রে নারীদেরকে আরো বেশি করে এগিয়ে আসার এবং সমবায়ীদের আরো আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। সংবিধানে জাতির পিতা সমবায়ের কথা বলে গেছেন এবং তিনি বাধ্যতামূলক বহুমুখী সমবায়ের কথাও বলেছেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা জানতেন ‘কিভাবে বাংলাদেশের উন্নতি হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় সমবায় সমিতি এবং সমবায়ীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এবং বর্তমানে সমিতির সংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৩৪টি এবং এর সদস্য সংখ্যা ১ কোটি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৪৭ জনে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে সমবায়ের মোট সদস্যের মধ্যে মাত্র ২৩ শতাংশ নারী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সমবায় কার্যক্রমে মহিলাদের সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি করার আহবান জানান’। সমবায়ীদের আন্তরিকতার সঙ্গে কর্তব্য পালনের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমবায়ের মাধ্যমেই দেশকে উন্নত করতে জাতির পিতার নীতিতেই আমরা বিশ^াসী।’
বলার অবকাশ নেই যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন, গ্রাম সমবায় সমিতির কার্যক্রমে গুরুত্ব প্রদান করা হলে এর মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরও সরাসরি উপকৃত হওয়ার সুযোগ বাড়ে। কাজেই গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ যাতে দ্রæত ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ পায়, সমবায় সমিতির কার্যক্রমে তেমন পদক্ষেপ নিতে হবে। আশার কথা, সরকারের প্রচেষ্টায় সমবায় সমিতি এবং সমবায়ীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ কৃষক তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য মৌসুমেই বিক্রি করতে বাধ্য হন। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে গুরুত্বারোপ করা হলে মৌসুমের পরও সেসব পণ্য বিক্রি করা যাবে। এতে কৃষক লাভবান হবে। এ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্বারোপ করা হলে আমাদের দেশের বিভিন্ন ফল মৌসুমের পরও রফতানি করা যাবে।
দেশের কৃষক ও স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্টসহিষ্ণু মানসিকতা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রান্তিক কৃষকও যাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়াতে পারে, সেজন্য প্রযুক্তি সহজলভ্য করা দরকার। কুটির শিল্প, দুগ্ধ শিল্প, ডেইরি, পল্ট্রি ও সেবাখাতসহ গ্রামীণ জনপদের সব সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হলে দেশের দারিদ্র্য সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব। তবে শেষ কথাটি হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী যা বলতে চেয়েছেন, সমবায়ের সাথে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বের সাথে কাজ করতে হবে। নারীদের আরো অধিক সম্পৃক্ত করতে হবে।