দারিদ্র্যতা বিমোচনে আমাদের করণীয়

132

দারিদ্র্যতা এক প্রকার অভিশাপ। দারিদ্র্যতা কারো জন্য সুখকর নয়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র হতে দারিদ্র্যতাকে বিতাড়িত করতে পারলেই অর্থনৈতিক মুক্তি। দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বিজয় আনতে পারলেই সে ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সফল হতে বেশি সময় লাগে না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুশাসন থাকতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্তভাবে পরিচালিত হতে হবে। রাষ্ট্রের সমস্ত বাজেট সুষমভাবে বণ্টন হতে হবে। সবগুলো মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থ সুষমভাবে পরিচালিত হতে হবে। অর্থ প্রাপ্তি ও ব্যয় কোনো অবস্থায় অপচয় করা যাবে না। অপচয় বন্ধ করে রাষ্ট্রীয় অর্থ জনগণের সঠিক কর্মপন্থায় ব্যয় করতে হবে। সমাজে এখনো অসংখ্য মানুষ, পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সাফল্য তাদের নাগালে পৌঁছায় নি। এখনো দারিদ্র্যতার কারণে শিক্ষা থেকে বিপুলসংখ্যক শিশু বাইরে রয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে বিপুল সংখ্যক শিশু স্কুল থেকে বিমুখ। পারিবারিক দারিদ্র্যতার কারণে শিশু স্কুলে না গিয়ে শ্রম কাজে গিয়ে রোজগার করছে। অনুন্নত গ্রামকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এনে শিক্ষার পরিধি বাড়াতে হবে। শহর নগরের যে সকল দরিদ্র্য পরিবারের শিশুরা দারিদ্র্যতার কারণে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত তাদেরকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষায় সুশাসন, সমবন্টন দেশব্যাপি বিস্তার করতে হবে। দেশের সার্বিক উন্নয়নের সাথে দারিদ্র্য জনগণের উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। শতভাগ শিশু যেনো স্কুলমুখী হয় সে সুশাসন রাষ্ট্রকে কঠোরভাবে দেখতে হবে। সু-শিক্ষা এবং সুশাসন ছাড়া কখনো দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। শিক্ষা, সুশাসন দুটোই সমানভাবে এগিয়ে নিতে হবে। শিক্ষা ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। প্রতিটি নাগরিক ও পরিবারের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মোচন ঘটাতে হবে। শিক্ষা পাওয়া নাগরিক অধিকার। সাংবিধানিকভাবে জাতিকে সু-শিক্ষায়, সুশাসনে প্রতিষ্ঠা করার কথা আছে। জাতিকে শিক্ষা ও শাসনে পিছিয়ে রেখে কখনো শতভাগ উন্নয়ন অগ্রগতি সম্ভব নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কুশাসন থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে অবশ্যই শিক্ষা এবং সুশাসন ত্বরান্বিত করতে হবে। স্বাধীনতার ৪৮ বছরের বাংলাদেশ এখনো দারিদ্র্যতার সাথে সংগ্রাম করছে। অর্ধ শতকের বাংলাদেশ নানাভাবে এগিয়ে থাকলেও দরিদ্র্যতার অভিশাপ এখনো জাতির উপর চেপে আছে। ১৫% মানুষের নিকট দেশের সিংহভাগ সম্পদ কুক্ষিগত। ন্যায়-অন্যায়ভাবে অর্জিত অর্থের দাপটে তারাই দেশের নানাভাবে ঘুরে ফিরে রাষ্ট্রীয় মালিক হয়ে যায়। অর্থের জোরে সংসদীয় আসনের প্রার্থী হয়ে যায়। কালো টাকার দাপটে তাদের হাতে আদর্শিক নেতৃত্ব পর্যুদস্ত হয়। এখনো সমাজের সিংহভাগ অশিক্ষিত মানুষ অর্থের কাছে মূল্যবান ভোট বিক্রি করতে দ্বিধাবোধ করে না। শিক্ষিত সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিরা সরকারি পদ-পদবি গ্রহণ করে সাধারণ জনগণকে উৎকোচের জন্য হয়রানি করা বন্ধ হয় নি। সবগুলো সরকারি সেক্টরে উৎকোচ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। দারিদ্র্য জনগোষ্ঠী অথবা অন্য যেকোনো শ্রেণী পেশার মানুষ সেবা নিতে গেলেই তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। বাংলাদেশের প্রশাসনে এটা এক প্রকার ক্যান্সারের মতো বিস্তার ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নতুন সরকারের নতুন মন্ত্রী পরিষদ শপথ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রীগণ তাদের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই বক্তব্য রেখেছেন। দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব সেবামুখী মন্ত্রণালয় গঠনের কথা শুনতে পাচ্ছি। বাস্তবে কতটুকু দুর্নীতিমুক্ত মন্ত্রণালয় জনগণ দেখবে সেটায় অপেক্ষার সময়। বিগত সরকার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের সুযোগ সুবিধা কোনো অংশেই বাকি রাখে নি। ন্যায্য ও প্রয়োজনীয় সমস্ত দাবিদাওয়া তাদের পূরণ করা হয়েছে। বাস্তবে সে পরিমাণ প্রশাসনকে এখনো পযর্ন্ত রাষ্ট্র জনবান্ধব করতে পারে নি। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ঘুষ দুর্নীতির চিত্র জনগণ দেখছে। দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে শোষণের মাধ্যমে একশ্রেণীর প্রশাসনের কর্মকর্তা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। তাদের গাড়ি বাড়ির অভাব নেই। দেশের টাকা দেশের বাইরে পাচার করে সেখানে ব্যবসা করছে। বাংলাদেশের টাকায় বিদেশে বাড়িঘর। তাদের ছেলে সন্তান এদেশের অর্থে বিদেশে লেখাপড়া করে। এসব এদেশ এবং জনগণের সম্পদ। দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারিদের কঠোরভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে। তাদের বাৎসরিক আয় ব্যয় হিসাব দেখতে হবে। চাকরীর আয় এবং অতিরিক্ত আয় কী পরিমাণ তার কঠোর হিসাব জনগণের দাবি রাষ্ট্রকে দেখতে হবে। মন্ত্রী পরিষদকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারিদের ঘুষ দুর্নীতির হিসেব কড়ায় গÐায় নিতে হবে। স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দীতে বাংলাদেশের যে পরিমাণ উন্নতি অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এ সময়কালে দেশের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে যারা কালো টাকার পাহাড় গড়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এখনি। স্বাধীনতার পক্ষের সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করছে, করবে সেটায় জনতার প্রত্যাশা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুশাসন, সুশিক্ষায় জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে নতুন সরকার এমনটি ভাবছে জাতি।

লেখক : কলামিস্ট