দাম বেড়েছে ত্রাণ দেওয়ার পণ্যের

104

সারাদেশে করোনা আতঙ্কের ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকায় বেড়েছে ভারতীয় ও চীনা পণ্যের দাম। অন্যদিকে ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যবহৃত সকল পণ্যের দাম কিছুটা বাড়লেও বাকিগুলো স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, সীতাকুÐ স্কেলের কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ রাখলে সাধারণ জনগণ এবং ব্যবসায়ীরা উপকৃত হতো এবং অনেক পণ্যের দাম কমে আসত।
আবার নগরীর দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজার মনিটরিং করছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম। এরইমধ্যে বড় বড় বাজারে অভিযান পরিচালনা করে কয়েকটি দোকানকে জরিমানার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বাজারে সবকিছু আছে তবে লকডাউন থাকাতে কেউ বাজারমুখী হচ্ছেন না। আমরা দোকান খোলা রেখেছি যাতে সবাই সাধ্যমত পণ্য নিয়ে যেতে পারেন। রমজানসহ বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী খুচরা ব্যবসায়ীদের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছি। গতকাল শনিবার খাতুনগঞ্জ বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে খাতুনগঞ্জে চিনির দাম মণপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। সে অনুযায়ী সিটি চিনি পাইকারিতে কেজি ৫৮.৪১ টাকায় এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। পাম তেলের দাম পাইকারিতে গত সপ্তাহের মতই রয়েছে। সে অনুযায়ী পাইকারিতে পাম অয়েল কেজি ৬৪.৩০ টাকা এবং খুচরায় ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইকারিতে সয়াবিন তেল কেজিতে ৮৮.৯৬ টাকা এবং খুচরায় ১০০ থেকে ১০৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
পেঁয়াজ রসুনের বাজার ঘুরে জানা যায়, পাইকারিতে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৫ টাকা কমে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় এবং খুচরাতে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়। রসুন পাইকারিতে কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরাতে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি।
পাইকারিতে চীনের আদা কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৪০ টাকায় এবং খুচরাতে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইকারিতে দারচিনি অপরিবর্তিত থেকে কেজিতে ৩৩০ টাকায় এবং খুচরাতে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পাইকারি বাজারে ডালের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। পাইকারিতে মোটা মশুর ডাল ৭ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা কেজি, খুচরাতে ৮০ টাকায়। পাইকারিতে চিকন মশুর ডাল ৮ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা কেজি, খুচরাতে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়, মটর ডাল পাইকারিতে ৩৪ টাকায়, খুচরাতে ৪০ টাকায়, মুগডাল পাইকারিতে ১৩২ টাকায়, খুচরাতে ১৪০ টাকায়, পাইকারিতে ছোলা কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ৬২ টাকায়, খুচরাতে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কেজি, চনার ডাল পাইকারিতে ৬৩ টাকায়, খুচরাতে ৮০ টাকায়, পাইকারিতে বাদাম ৫ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় এবং খুচরাতে ১৩৫ টাকায়, পাইকারিতে কিছমিছ কেজি ২৩৫ টাকা আর খুচরাতে ২৮০ টাকা, বাংলা সেমাই পাইকারিতে ৩৭ টাকা আর খুচরায় ৪৫ টাকা, পাইকারিতে চিড়া ৪০ টাকা আর খুচরায় ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে ভারতীয় হলুদ ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে কেজি ১০৮ টাকা, খুচরাতে ১৪০ টাকা, পাইকারিতে জিরা ৩০ টাকা বেড়ে কেজি ৩৩০ টাকা, খুচরাতে ৩৮০ টাকায়, লবঙ্গ কেজি পাইকারিতে ৭৫০ টাকা, খুচরাতে ৯০০ টাকায়, পাইকারিতে যত্রিক কেজি ৩ হাজার ১২০ টাকায়, খুচরাতে ৩৩০০ টাকায় এবং পাইকারিতে এলাচির দাম মানভেদে ৩১৫০ টাকায়, খুচরাতে ৩ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
পাইকারিতে শুকনো মরিচের দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। যার মধ্যে পাইকারিতে দেশি শুকনো মরিচ (পঞ্চগড়ের) ১০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা কেজি, খুচরাতে ৩৪০ টাকায়, পাইকারিতে ভারতীয় মোটা শুকনো মরিচ ২২০ টাকা কেজি, খুচরাতে ২৪০ টাকা কেজি এবং পাইকারিতে চিকন ২৫০ টাকা, খুচরাতে ২৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ী মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সামনের রমজানকে মাথায় রেখে কিছু মুদি পণ্য কিনছি। যাতে সামনে কিছুটা সামাল দিতে পারি।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান বাদশা বলেন, পুরো খাতুনগঞ্জ বাজারে ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির। আমদানি-রপ্তানি সচল না হলে রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্কের ফলে সারাদেশের পাশাপাশি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও অর্থনীতি থমথমে রয়েছে। বাজারে এখন পণ্য উঠানামার শ্রমিক সংকট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার কারণে ব্যাংক টাইম ঘোষণা করা হয়েছে মাত্র ২ ঘণ্টা, সেটি আমাদের জন্য খুবই কম সময়ের। আমরা চাইবো ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে যাতে সরকার তিন ঘণ্টা ব্যাংক টাইম করেন। তাছাড়া সীতাকুন্ডের স্কেলটা নিয়েও সরকারের ভাবা উচিত। রমজান মাসকে মাথায় রেখে অন্তত স্কেলটা বন্ধ রাখা উচিত। আর এতে করে ভোক্তারা ৪-৫ টাকা কমে পণ্য হাতে পাবেন।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের মাঝে কিছু ব্যবসায়ীরা আবার নতুন আতঙ্কের নাম। মানুষকে জিম্মি করে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট কাটছে। জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, খাদ্য অফিস বাজার তদারকি যথাযথভাবে না করে ব্যবসায়ীদেরকে পকেট কাটার সুযোগ করে দিচ্ছে। দেশের সিংহভাগ ভোগ্যপণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়। ফলে চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির হলে পুরো দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে যাবে।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জনসাধারণ করোনা আতঙ্কে প্রথমদিকে বেশি পণ্য কিনে রাখলেও এখন তেমন ক্রেতা নেই। অতীব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। আবার বাজার মনিটরিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, আমরা করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি ভোগ্যপণ্য এবং অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের বাজারে নজরদারি করছি। যাতে সুযোগ পেয়ে কোন সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে না উঠে। প্রতিদিন আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম বের হচ্ছে এবং অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছেন।