দাম্পত্য কলহের বলি দুই শিশু

39

স্বামী-স্ত্রীর বিবাদের জেরে দুই সন্তানকে হত্যার পর মা আখতারুন্নেসা পপি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন ধরেই চলছে পুলিশের তদন্ত। গতকাল শনিবার সকালে ঢাকার খিলগাঁওয়ের গোড়ানের একটি বাসা থেকে দুই মেয়ের জবাই করা লাশের সঙ্গে অগ্নিদগ্ধ পপিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পপি (৩৮) এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার দেহের ১৮ শতাংশ পুড়েছে। তিনি দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকারও করেছেন কর্তব্যরত নার্সদের কাছে।
ঘটনাস্থলে পাওয়া বিভিন্ন আলামত এবং পাওয়া নানা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ কর্মকর্তারা অনেকটাই নিশ্চিত, পপিই তার দুই সন্তানকে খুন করেছেন।
জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, “সরাসরি বলতে চাই না। তবে এ ধরনের ধারণা মাথায় নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।” খবর বিডিনিউজের
নিহত শিশু দুটি হল মেহজাবিন আলভী (১২) ও জান্নাতুল ফেরদৌস (৭)। আলভী খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে, জান্নাত একই স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।
গোড়ানের ওই বাসায় দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন পপি। তার স্বামী মোজাম্মেল হক বিপ্লব মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগরে থাকেন, সেখানে তার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকান রয়েছে। মোজাম্মেল প্রতি শুক্রবার মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতেন। তবে এই শুক্রবার আসেননি; ঘটনার সময়ও তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বিয়ের পর নয় বছর পপি বাবার বাড়িতেই ছিলেন; তিন বছর আগে গোড়ানোর ওই ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন।
হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বাসা থেকে শিশু দুটির রক্তাক্ত লাশ এবং পপিকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করলেও কোনো চুরি-ডাকাতি কিংবা ঘরে আগুন লাগার কোনো আলামত না পাওয়ার কথা জানায়।
পপির বাবা আবু তালেব বলেন, গোড়ানের ওই বাসাটির ভাড়া ১১ হাজার ১০০ টাকা। সব মিলিয়ে ২৫ হাজার টাকা মাসিক খরচ। কিন্তু বিপ্লব ২ হাজার ৩ হাজার টাকা পপিকে দিয়ে বলত, ‘চালিয়ে নাও’।”
জামাতা কোনো যৌতুক না চাইলেও এভাবে পপিকে তার কাছে টাকা চাইতে প্ররোচিত করত বলে মনে করেন আবু তালেব। তিনিও পূর্ব গোড়ান এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন।
পপির খালাত ভাই হেদায়েতুল ইসলাম অপু বলেন, তার খালু এক সময় বিডিআরে ছিলেন। অবসর নিয়ে লিভার ব্রাদার্সে কিছুদিন চাকরি করেছিলেন। এখন কিছু করেন না। এক ছেলে ইতালিতে থাকেন, তার পাঠানো অর্থে সংসার চলে। আবু তালেব বলেন, শিশু দুটিকে পড়ানো নিয়েও তার মেয়ের সঙ্গে জামাতার দ্বন্দ্ব ছিল।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পপি নার্সদের জিজ্ঞাসায় বলেন, তার স্বামী মেয়েদের গ্রামে নিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে চাইতেন। অর্থাভাবের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ঠিকমতো খোঁজ-খবরও নিত না। নয় বছরে বাবার সংসারে ছিলাম, তখন সমস্যার কথা বলত না। তিন বছর আগে আলাদা বাসা নেওয়ার পর ঠিকমতো টাকা-পয়সা দিত না। কয়েকদিন আগে ৪০ দিনের জামাতে (তাবলিগ) গেছেন, কিন্তু আমাদের কোনো খবর নেয়নি।
নার্সরা বলেন, পপি কখনও বলছেন বালিশ চাপা দিয়ে, কখনও বলছেন বটি দিয়ে সন্তানদের হত্যা করেন।
পপির স্বামী বিপ্লব দাবি করেছেন, তিনি পপিকে সংসারের ব্যয় নিয়মিতই পাঠাতেন। তিনি বলেন, পপিকে ভাড়ার টাকা একসাথে দেওয়া হতো। এছাড়া সংসার খরচও দিতাম। গতকালও (শুক্রবার) বিকাশে ১৫০০ টাকা পাঠিয়েছি। সে (পপি) নিজেকে বাঁচানোর জন্য এভাবে উলটপালট কথা বলছে।
বিপ্লব বলেন, প্রতি শুক্রবার তিনি ঢাকায় আসেন। কিন্তু বাড়িতে একটি জমি নিয়ে ঝামেলা থাকায় এবার তিনি আসতে পারেননি। তবে পপির সঙ্গে কথা হয়েছে।
এ নিয়ে নতুন করে কোনো কলহ হয়েছিল কি না- জানতে চাইলে বিপ্লব বলেন, “না, তার কথায় কোনো রাগ ছিল না। এ রকম একটা যে ঘটনা ঘটাবে, তার সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়নি।”
খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান বলেছেন, বাসায় একটি চিঠি তারা পেয়েছেন, যাতে সাংসারিক বিভিন্ন ঝামেলার কথা বলা হয়েছে। এটাকে সুইসাইডাল নোট বলা যায় না, কারণ সব লেখা সরাসরি লেখা নেই। তবে ইঙ্গিত বহন করে,” বলেন তিনি।