দাবি পূরণের আশ্বাসে আন্দোলনে যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা

31

ঢাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে চট্টগ্রামে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একাংশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। শিক্ষার্থীদের যেকোনো দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে তাদের চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল না করার অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে জেলা প্রশাসকের দাবি পূরণের আশ্বাসে আন্দোলনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালে ‘নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে’ নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একাংশ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চট্টগ্রামের সংগঠক মিনহাজ চৌধুরী রিফাত জানান, ঢাকার মতো আমরাও চট্টগ্রামে মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু এর আগেই জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় আমরা ১০ দফা দাবি দিয়েছিলাম। এর মধ্যে চারটি দাবি পূরণ হয়নি। জেলা প্রশাসক যত দ্রুত সম্ভব সব দাবি প‚রণের আশ্বাস দিয়েছেন এবং চট্টগ্রাম অস্থিতিশীল হয় এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি না করার অনুরোধ করেছেন।
শিক্ষার্থী এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, নগর পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাত থেকেই চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো প্রস্তুতি আছে কি-না সে ব্যাপারে জানার চেষ্টা করা হয়। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি সেসময় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যান।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিব নিহত হন। এ ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে রাস্তায় নেমে আসেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রামে আন্দোলন থামাতে তখন নুরুল আজিম রনি শিক্ষার্থীদের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বসান। সেসময় শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রæত মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক। এরপর গত মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর প্রগতি স্মরণিতে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় আবরার আহমেদ চৌধুরী নামে আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালে (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়তেন। এ ঘটনার পর গত দুইদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে নেমে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ঢাকাতে যে ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে, সেটার সাথে চট্টগ্রামের মিল নেই। চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা এখনও পর্যন্ত কোনো প্রোগ্রাম দেয়নি। তারা বরং কিছু দাবি নিয়ে আমার কাছে এসেছে। দাবিগুলো যত দ্রুত সম্ভব পূরণের উদ্যোগ নেব। আশা করি তারা নিয়মিত পড়াশোনা করবে এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না। বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে স্কুল-কলেজের জন্য বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু, রাস্তার প্রতিটি মোড়ে ‘সাইন’ (দিকচিহ্ন) ব্যবহার করা, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং ও স্পিড ব্রেকারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জেলা প্রশাসক বলেন, বিআরটিসি’র জন্য নতুন বাস আমদানি করা হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে চট্টগ্রামে যেন কিছু বাস দেওয়া হয়, সেই চেষ্টা করব। কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণাধীন আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলব কাজ দ্রুত করতে। সিডিএ এবং সিটি করপোরেশন কিছু ফুটওভার ব্রিজ করছে। জেব্রা ক্রসিং ও স্পিড ব্রেকার সিটি করপোরেশন করছে। সড়কও জনপথ বিভাগকে দিয়েও কাজ করাব। রোড সাইনের বিষয়টাতে শিক্ষার্থীদের বলেছি, তারাও যেন আমাদের সঙ্গে কাজ করে।
শিক্ষার্থী মিনহাজ চৌধুরী রিফাত জানান, ঢাকায় যে নিরাপদ সড়কের আন্দোলন হয়েছিল, এর সঙ্গে আমাদের আন্দোলনের পার্থক্য আছে। ঢাকার আন্দোলন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা প্রতিমাসে সিএমপি কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করি। আমাদের দাবি পূরণের অগ্রগতি জানার চেষ্টা করি। ডিসি সাহেব অনুরোধ করেছেন, আমরা যেন আন্দোলন না করে যে কোনো দাবি বা সমস্যা কথা বলে সমাধান করি।