দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড করেও হারল বাংলাদেশ

36

পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয় না পেলেও বুক চিতিয়ে লড়াই করে হেরেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এত বড় লক্ষ্য তাড়া করে জেতেনি কোনো দল। পুরো ওয়ানডে ইতিহাসেই দ্বিতীয় ইনিংসে এর চেয়ে বেশি রান করে জেতার রেকর্ড আছে মাত্র একটি। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে হলে রেকর্ডবুকে তোলপাড় করতে হতো বাংলাদেশ দলকে। যা একপ্রকার অসাধ্য সাধনের মতোই বলা চলে। তবু বাংলাদেশ দল বুকে অসীম সাহস নিয়ে আশার ভেলায় যাত্রা শুরু করে শেষ পর্যন্ত ৪৮ রানে পরাজিত হয়েছে। অজিদের ছুঁড়ে ৩৮২ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য টপকাতে গিয়ে আট উইকেটে ৩৩৩ রানে গিয়ে থেমেছে টাইগারদের ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ১০২ রান করেন।


৩৮২ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে শুরুতেই ৮ বলে ১০ রান করে দুর্ভাগ্যজনক রান আউট হয়ে ফিরে যান বাংলাদেশ দলের ওপেনার ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। এরপর হাল ধরেছিলেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। ব্যক্তিগত ৪১ রানের মাথায় সাকিব ফিরে গেলেও মুশফিককে নিয়ে এগুচ্ছিলেন তামিম। কিন্তু দলীয় ১৪৪ রানে ব্যক্তিগত ৬২ রানে তিনি ফিরে যাওয়ার পর থিতু হতে পারেননি আগের ম্যাচেই দুর্দান্ত ইনিংস খেলা লিটন কুমার দাসও।
ফলে দায়িত্ব বর্তায় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম ও তার ভায়রা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাঁধে। দুজন মিলে বেশ ভালোভাবেই টেনে নিয়ে যান ৩০২ পর্যন্ত। ৪৫.৩ ওভারে মাহমুদউল্লাহ প্যাট কামিন্সকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কোল্টার নাইলের হাতে ধরা দেন। যাওয়ার আগে ৫০ বলে ৬৯ রানের এক ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ সাজঘরের পথ ধরার পর স্থলাভিষিক্ত হওয়া বাংলাদেশের স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানের উপর বেশি আশা ছিল। কারণ তার যে মারমুখি ব্যাটিংভাব তার প্রতিফলন দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। কিন্তু তিনি সবার আশায় জল ঢেলে দিয়ে প্রথম বলে ডাক মেরে ফিরে আসেন। এক পাশের ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও অন্য প্রান্তে একাই লড়াকু ব্যাটিং চালিয়ে যান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। সাব্বির ফিরে গেলে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া মেহেদীকে নিয়ে ফের লড়াই চালিয়ে যান মুশি। কিন্তু ৪৮.২ ওভারে দলীয় ৩২৩ রানে মেহেদীকে (৬) ওয়ার্নারের ক্যাচ বানান স্টার্ক। এরপর ব্যাট হাতে নামেন শেষ ভরসা অধিনায়ক মাশরাফি। অপর প্রান্তে সেঞ্চুরির মাত্র কয়েক রান দূরে মুশফিক দাঁড়িয়ে। আর বেশিদুর যাওয়া সম্ভব হয়নি। মুশফিক তুলে নেন সেঞ্চুরি এবং শেষ বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মাশরাফি ধরা পড়ে ম্যাক্সওয়েলের হাতে। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ১০২ রানে। বাংলাদেশ থামল আট উইকেটে ৩৩৩ রানে যা টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে স্টার্ক, কোল্টার নাইল ও স্টয়নিস প্রত্যেকে দুটি করে এবং অ্যাডাম জাম্পা একটি উইকেট নেন।
এর আগে ট্রেন্ট ব্রিজে গতকাল দ্বাদশ বিশ্বকাপের ২৬ তম ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই টাইগার বোলারদের উপর চড়াও হয় অজি উদ্বোধনী জুটি। দুজনের জুটি ভাঙে ২০ ওভার ৫ বলের মাথায়। তার আগে অ্যারন ফিঞ্চ পূর্ণ করেন অর্ধশতক। ৫১ বলে ৫৩ রানের ইনিংসে ছিল ৫টি চার আর ২টি ছয়।
ফিঞ্চ ফিরলেও বাংলাদেশকে হতাশার সাগরে ভাসান ডেভিড ওয়ার্নার-উসমান খাজার জুটি। ১৯২ রানের এই লম্বা জুটি অস্ট্রেলিয়াকে এনে দেয় ৪৪ ওভার ২ বলে ৩১৩ রান। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্নারকে ফেরান সৌম্য সরকার। তার ১৪৭ বলে ১৬৬ রানের ইনিংসে ছিল ৫টি ছয় আর ১৪টি চার। ওয়ার্নারের বিদায়ের পর উসমান খাজাও ছুটেন শতকের পথে। সঙ্গে যোগ হয় গø্যান ম্যাক্সওয়েলের ৯ বলে ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস। ভাগ্যিস, ম্যাক্সওয়েলকে রান আউট করে বিদায় করেন রুবেল হোসেন। তবে শেষ পর্যন্ত খাজাকেও ফেরান সৌম্য সরকার। মাশরাফি মুর্তজা, রুবেল হোসেনরা থাকতে পার্ট-টাইম বোলার সৌম্য একাই তুলে নেন ৩ উইকেট!
ব্যক্তিগত ৮৯ রানের মাথায় সৌম্যর বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১১ রানের জন্য শতক বঞ্চিত হোন খাজা। ৪৯ ওভারের মাথায় বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে প্রায় কুড়ি মিনিট। এরপর খেলা শুরু হয়ে বাকি ১ ওভারে ১৩ রান যোগ করে ৫০ ওভারে মোট ৩৮১ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের হয়ে সৌম্য ৮ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। মোস্তাফিজ নেন ১টি, দিয়েছেন ৯ ওভারে ৬৯ রান। রুবেল হোসেন তার প্রথম ম্যাচে দিয়েছেন ৯ ওভারে ৮৩ রান, পাননি কোনও উইকেট। আজকের খেলা-ইংল্যান্ড- শ্রীলঙ্কা (বিকাল সাড়ে তিনটা)