দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে চসিকের উদ্যোগ

43

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকুলীয় এলাকা বন্যা, জলোচ্ছ্বাস লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, ভাঙনসহ নানা সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। বনায়ন ধ্বংস, মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, শিল্প কারখানা থেকে কার্বন নিঃসরণের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান ক্রমে নিম্নমুখি হয়ে পড়েছে।
নদী ভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে প্লাবিত অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বাস্তুসংস্থান হারাচ্ছে। এসব বাস্তুহারা মানুষগুলো জীবন-জীবিকার সন্ধানে নগরমুখি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মূল্যায়ন ও নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।
জানা গেছে, জাতিসংঘের ইউএনডিপি’র সহযোগিতায় ইউকে এইড’র অর্থায়নে এই উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১ ওয়ার্ডে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে স্থানীয় কাউন্সিলর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা দুস্থতা সমীক্ষা পরিচালনা করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ সমীক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ওয়ার্ড সমূহের বন্যা, নদী ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি, লবণাক্ততা, খাবার পানি সংকট, জলাবদ্ধতা, ভ‚মিধসের বাস্তব তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে উপদ্রুত বা ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হবে। সমীক্ষা পরিচালনা কার্যক্রমে স্ব স্ব ওয়ার্ডে জলবায়ু পরিবর্তনে দুস্থতার বিষয়ে ক্যাটাগরি ভিত্তিক স্কোরিং সহযোগিতা প্রদানের ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক। একই সাথে চিঠি প্রাপ্তির পর সাত কর্মদিবসের মধ্যে সমীক্ষার স্কোর প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জমা দেয়ার ব্যাপারেও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নগরীর অনেক অঞ্চলে নানামুখি দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্র উপক‚লীয় ওয়ার্ড এলাকা পতেঙ্গা এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও খনিজ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড এলাকা শুকনো মৌসুমেও জলপ্লাবিত হয়ে যাচ্ছে। আবার নগরীতে প্রায় ৪৭ শতাংশ এলাকা পাহাড়ি এলাকা। এই পাহাড়গুলোর বেশিরভাগই বালির। নদী ভাঙা বাস্তুহারা মানুষগুলো জীবিকার সন্ধানে নগরে এসে পাহাড়ে বসতি গড়ে তুলছে। আবার তারা অবৈধভাবে গাছপালা, পাহাড় কাটছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রতিবছর ভ‚মিধস হচ্ছে।
গতকাল সকালে কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে ‘জলবায়ু পরিবর্তনে দুস্থতা সমীক্ষা বিষয়ক কর্মশালায়’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে ও এলইউপিসি’র সিটি ম্যানেজার ড. সোহেল ইকবালের সঞ্চালনায় আলোচ্য কর্মশালার মতামত ও মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, মো. মোবারক আলী, ছালেহ আহমদ চৌধুরী, মো. শফিউল আলম, মনোয়ারা বেগম মনি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোডেকের প্রধান নির্বাহী কমল সেন গুপ্ত বক্তব্য রাখেন।
কর্মশালায় জলবায়ু পরিবর্তনের দুঃস্থতা সমীক্ষা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন এডিপিসি’র ফিজিক্যাল ভালনারেবল কো-অর্ডিনেটর মো. সাখাওয়াত হোসেন।
এ সময় মেয়র আরও বলেন, নগরীতে আগে ৫৮টি খাল ছিল। ভরাট, দখলের কবলে পড়ে এখন মাত্র ৩৬টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। এতে নগরে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা সমস্যা। এর সাথে রয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রথমে ওয়ার্ড এলাকাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার একটা সঠিক পরিসংখ্যান গুরুত্বপ‚র্ণ। ৪১ ওয়ার্ডে জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট দুস্থতা নিয়ে একটি সমীক্ষা কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইউকে এইডের অর্থায়নে ও ইউএনডিপি’র সহযোগিতায় সিটি কর্পোরেশন এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আগামী সাধারণ সভায় কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদেরকে সমীক্ষায় সহযোগিতা প্রদানের ব্যাপারে অবহিত করা হবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেককে স্ব স্ব ওয়ার্ড এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট দুস্থতার সমীক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক চিঠিও দেয়া হবে। কাউন্সিলররা স্ব স্ব ওয়ার্ডের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নিয়ে এলাকার সমস্যা বিষয়ে স্কোরিং করে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এই প্রতিবেদন বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
এ ব্যাপারে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো সামসুদ্দোহা বলেন, আমরা নগরের প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনসাধারণ নানামুখি সমস্যায় পড়েছে। এই বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই এদের উন্নয়ন করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সমীক্ষা চালানোর কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সমীক্ষা বিষয়ে চসিক গৃহীত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ড. সোহেল ইকবাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, নদী ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, সঙুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি, লবণাক্ততা, খাবার পানি সংকট, জলাবদ্ধতা ও ভ‚মিধস হচ্ছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নগর জুড়ে একটি সমীক্ষা চালানো হবে। সমীক্ষার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সৃষ্ট সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর একটি পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে। এই পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে নগরের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ শুরু হবে।