দম ফেলার ফুরসত নেই কামারদের

107

ঘনিয়ে এসেছে কোরবানির ঈদ। আর এ ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে টুংটাং আওয়াজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। সারা বছর অলস সময় পার করলেও কোরবানির ঈদ আসলে তাদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। ঈদে উট, গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া কোরবানির পশু হিসেবে জবাই করা হয়। এসব পশুর গোশত কাটতে দা-বটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। আবার জবাইয়ের পর রক্ত নির্দিষ্ট জায়গায় জমা করে রাখার জন্য কোদালও ব্যবহার করতে হয়।
সরেজমিনে গতকাল শনিবার সাগরিকা গরু বাজারের পাশে কামারের দোকানে গিয়ে তাদের এমন কর্মব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেছে। তারা নতুন দা, বটি, চাকু, চাপাতি তৈরি ও পুরনোগুলোতে শান দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দেখা গেলো গরম উত্তপ্ত কয়লার মধ্যে লোহার পাত ঢুকিয়ে প্রায় ১০ মিনিট ধরে পুড়িয়ে লাল করা হচ্ছে। তারপরে একটা লোহার পাটাতনের উপর সেটিকে রেখে পিটিয়ে দেয়া হচ্ছে দা, ছুরি ও চাপাতির আকার। আবার মোটরচালিত মেশিনে শান দেয়ার কাজও চলছে। যেন দম ফেলারও সময় নেই কামারদের। তবে কয়লার মূল্যবৃদ্ধির ফলে এবার দা, ছুরি ও চাপাতি তৈরিতে খরচ বেশি হচ্ছে বলে জানালেন কামাররা।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ধারে বসেছে দা-ছুরি-বটির অস্থায়ী দোকান। সেখান থেকে ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দেখা গেছে।
কয়েকজন কামারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদকে সামনে রেখে আগের তুলনায় অর্ডার এখন অনেক বেশি। তাই অনেক ক্রেতাকে আগে থেকে তৈরি দা-বটি নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন কামাররা। ঈদ উপলক্ষে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছু বাড়তি দাম নিচ্ছেন বলে জানান তারা। প্রতিটি মাঝারি আকারের দা তৈরি করে দিতে তারা নিচ্ছেন সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আবার লোহা যদি কামাররা দেন তাহলে দাম আরও বেশি নেয়া হচ্ছে। বটির ক্ষেত্রে দাম নেয়া হচ্ছে একটু বেশি। আকার ভেদে প্রতিটি বটির দাম তিনশ, পাঁচশ এবং এক হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।
কামাররা জানান, লম্বা ছুরির চাহিদা দা-বটি’র তুলনায় কম। সবচেয়ে বেশি চাহিদা দা-বটি এবং ছোট ছুরির। গোপাল কর্মকার নামে এক কামার জানান, বছরের অন্যান্য সময় তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদের প্রায় এক মাস আগে থেকেই কাজের চাপ বেড়ে যায়। ফলে সময়মতো জিনিস সরবরাহ করার জন্য কর্মচারি নিয়োগ দিতে হয়। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, তাই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। অনেকেই আসছেন মাংস কাটার পুরাতন জিনিসগুলো ধার দেয়ার জন্য। আগে আমরা এসব কাজ সহজে করে দিতে পারলেও এখন আর পারছি না।
মো. মোজাম্মেল নামে এক ক্রেতা জানান, বাজারে এসেছি গরু দেখতে। পাশাপাশি কয়েকটা ছুরি-বটি বানানোরও ইচ্ছে আছে। তবে লোহার দাম বৃদ্ধির অজুহাতে কামাররাও বেশি দাম চাইছে।
অহিদুর রহমান নামে এক ক্রেতা জানান, ঈদ এলে লোহার দাম না বাড়লেও কয়লার দাম বাড়িয়ে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর এর প্রভাব পড়ে দা-বটির ওপর।
সাগরিকা এলাকার ভাই ভাই কর্মকারশালার অমর কর্মকার পূর্বদেশকে বলেন, পুরোদমে কাজ চলার কারণে গত সাতদিন আগে থেকেই অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আরেক দোকানি প্রভাত কর্মকার বলেন, চাইনিজ দা, ছুরি এবং চাপাতি বাজার দখল করায় দেশীয় তৈরি দা-ছুরি-বটির চাহিদা আগের তুলনায় কমেছে। কারণ চাইনিজ জিনিসগুলো বাজারে অনেক কমমূল্যে পাওয়া যায়। তাই ক্রেতাদের আগ্রহও সেগুলোর প্রতি বেশি। এ কারণে প্রতিবছর এ মৌসুমটায় যতটা জমজমাট ব্যবসা হত এ বছর সে রকম নাও হতে পারে।