থানার ভেতরেই চলছে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম

49

থানার অবস্থান, জনসংখ্যা ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বিবেচনায় নিয়েই তাৎক্ষণিক পুলিশি সেবা নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হয় পুলিশ ফাঁড়ি। যার অন্যতম উদ্দেশ্য, ঘটনা-দুর্ঘটনায় থানার আগেই যাতে ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানো পারে। কিন্তু, নগরীর চারটি থানার কম্পাউন্ডের ভেতরেই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে চারটি পুলিশ ফাঁড়ির। এছাড়া পরের জায়গায় কিংবা ভবন ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চলছে আরও কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ির। একই স্থানে কিংবা অনতিদূরে থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থান হওয়ায় নিয়মিত কার্যক্রমে যেমন সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে পুলিশ ফাঁড়ি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।
নগর পুলিশের আবাসন ও দাপ্তরিক কার্যালয়ের স্থান সঙ্কটের এমন চিত্রের দেখা মেলে বেশ কয়েকটি থানায়। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পাথরঘাটা পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চলছে কোতোয়ালি থানা কম্পাউন্ড থেকেই। থানা ভবন সংলগ্ন পুরনো একটি টিনের চালার ঘরে চলছে পাথরঘাটা পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম। এ ফাঁড়িতে উপ-পরিদর্শক পদবির এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে তিন সহকারী উপ-পরিদর্শক ও ১৭ কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করছেন। একটি কক্ষে চেয়ার ও টেবিল নিয়ে নিজের বসার জায়গা করে নিয়েছেন ফাঁড়ির ইনচার্জ। পেছনের কক্ষে ছোট একটি খাট। পাশের একটি বড় কক্ষে রয়েছে পুলিশ সদস্যদের আবাসনের ব্যবস্থা। মোটামুটি এরকমই পাথরঘাটা পুলিশ ফাঁড়ির চিত্র। কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মহসীন পূর্বদেশকে জানান, মেরিনার্স রোডে বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি জায়গা বরাদ্দসাপেক্ষে পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণের প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে অনেক আগেই। ওই এলাকায় ফাঁড়ি স্থাপন করা গেলে তুলনামূলক অপরাধপ্রবণ পয়েন্টগুলোসহ পুরো থানা এলাকা মোটামুটিভাবে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
নগরীর উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের আরেক গুরুত্বপূর্ণ চারতলার পাহাড়তলী থানা ভবনটি নির্মাণ করা হয় ক’বছর অঅগে। এটির তৃতীয় তলায় কার্যক্রম চলছে উত্তর কাট্টলী পুলিশ ফাঁড়ির। এ ফাঁড়িতে একজন এসআই ও দুই এএসআইসহ ১৯ পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন। উত্তর কাট্টলী এলাকায় জায়গা না পাওয়ায় থানা ভবন থেকে নির্ধারিত এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। থানা পুলিশের আগেই ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর জন্য দূরবর্তী এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করার উদ্দেশ্য হলেও এক্ষেত্রে তা ব্যাহত হচ্ছে। উত্তর কাট্টলী এলাকায় ফাঁড়ির জন্য জমি না পাওয়ায় থানা ভবন থেকেই উত্তর কাট্টলী পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম চলছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, থানা কম্পাউন্ড কিংবা অনতিদূরে পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থান হওয়ায় থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের কাজে সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ফাঁড়ির কাজ করছে থানা আর থানার কাজ করছে ফাঁড়ি। বর্তমান সদরঘাট থানা একদা ছিল পুলিশ ফাঁড়ি। ২০১৩ সালে ফাঁড়িতেই প্রতিষ্ঠা করা হয় নতুন থানা। থানার কার্যক্রম চালু করতে গিয়ে আস্ত ফাঁড়িটাই যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে। বর্তমানে থানা কম্পাউন্ডের পেছনের দিকে পুরেনো টিনশেড কয়েকটি কক্ষে চলছে ফাঁড়ির কার্যক্রম। বাইরে থেকে দেখে অনেকের ভ্রমও হতে পারে। একজন এসআই ও দুই এএসআইসহ কয়েকজন কনস্টেবল এ ফাঁড়িতে কর্মরত আছেন। সদরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির জায়গায় থানা করা হলেও ফাঁড়ির জন্য এখন পর্যন্ত অন্য কোথাও জায়গা পাওয়া যায়নি।
প্রায় একইভাবে একদা যেখানে চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ি ছিল ২০১৩ সালে সেখানেই কার্যক্রম চালু করা হয় চকবাজার থানার। থানা কম্পাউন্ডে একটি টিনশেড ঘরে এক এসআই ও এক এএসআইসহ ১৭ পুলিশ সদস্য নিয়ে কোনোরকমে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। কেবল থানার ভেতরেই নয়, তিনটি থানার অনতিদূরেও স্থাপন করা হয়েছে তিনটি পুলিশ ফাঁড়ি। নগরীর ইপিজেড থানার অদূরেই রয়েছে ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থান। বন্দর থানার অদূরে স্থাপন করা হয়েছে বন্দর জেটি পুলিশ ফাঁড়ি। কোতোয়ালি থানার অদূরেই রয়েছে বক্সিরহাট পুলিশ ফাঁড়ি।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) মাসুদ-উল-হাসান পূর্বদেশকে বলেন, ‘থানা থেকে দূরবর্তী স্থানে পুলিশ ফাঁড়ি প্রতিষ্ঠা করার বিধান অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু প্রয়োজনীয় জায়গা বরাদ্দ না পাওয়ায় বেশ কয়েকটি ফাঁড়ি পৃথক স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে, থানা কম্পাউন্ডে অস্থায়ীভাবেই ফাঁড়ির কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। উপযুক্ত স্থানে জমি বরাদ্দ কিংবা ভাড়া বাড়ি পাওয়াসাপেক্ষে ফাঁড়িগুলো সেখানেই স্থানান্তরিত হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর ১০ লক্ষাধিক নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিএমপি দুই জোনে ছয়টি থানার সাথে ৩০ টি পুলিশ ফাঁড়ি ও ছয়টি পুলিশ বক্স নিয়ে যাত্রা শুরু করে। জনবল ছিল সাড়ে তিন হাজারের কিছু বেশি। প্রতিষ্ঠার ৪১ বছরে ৬০ লক্ষাধিক বাসিন্দার এ নগরীতে বর্তমানে চারটি জোনে বিভক্ত হয়ে থানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬টিতে। পুলিশ ফাঁড়ির সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ৫০-এ। আর পুলিশ সদস্যের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। বছর দেড়েক আগে সিএমপি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে লালদীঘি এলাকায় সদর দপ্তরের জায়গাটি জেলা প্রশাসন থেকে নামমাত্র মূল্যে (চার কোটি টাকা) কিনে নেয়। বর্তমানে সেখানে ২২ তলা ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।