ত্রাণ কেউ পাচ্ছে কেউ পাচ্ছে না

172

বাঁশখালী পৌরসভার মহাজন ঘাটার পশ্চিমে শুক্লদাশ (ধোপা) পাড়াটির অবস্থান। যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায়ের পর এ পাড়ার উপর বড় ধরনের ঝড় বয়ে যায়। নির্মমভাবে খুন হন বৃদ্ধ দয়াল হরি শীল। ঝড় সামলে উঠলেও সেখানে এখনো নিম্নবৃত্ত অল্প কয়েকটি গরীব পরিবার দুর্বিষহ জীবন পার করছেন। কিন্তু লকডাউনের ১৩ দিন পার হলেও সেখানে কোন ত্রাণ পৌঁছেনি। পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের একটি আংশিক তালিকাও এ প্রতিবেদকের হাতে আসে, সেখানেও এ পাড়ার কারো নাম নেই।
একইভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে সংসদ সদস্য ও পৌর মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন পৌরসভা ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাবলা ধর। তিনি বলেছেন, এ ওয়ার্ডের উত্তর বণিক পাড়া, দক্ষিণ পাড়া ও নাপিত পাড়ায় এখনো সরকারি কোন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়নি। এলাকার নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে ত্রাণ পৌঁছে দিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বাঁশখালী উপজেলা সদরের দুটি পাড়ার এই অবস্থা পায় সহজেই ফুটে উঠেছে দুর্গম এলাকার চিত্র। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে তিনধাপে ৫৯০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পছন্দের কিছু কিছু এলাকায় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও কাউন্সিলররা এসব চাল বিতরণও করেছেন। তবে শহর-গ্রামের বেশকিছু এলাকায় এখনো ত্রাণের ছোঁয়া লাগেনি। এমনকি ত্রাণ বিতরণের পূর্ণাঙ্গ তথ্যও জমা দিতে পারেননি জনপ্রতিনিধিরা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জানান, আমরা এখনো পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ নিয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। মানুষতো সত্য কথা বলে না। মানুষ তো আরো চায়। তিন থেকে চারবার পেলেও বলে আরো চায়। বাসায় গিয়ে পর্যন্ত ত্রাণ চায়। অথচ এ পর্যন্ত আমরা ৭২ হাজার ৪৮৭ পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছি। আরো বরাদ্দ আসলে আরো দিব।
জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯ হাজার, মিরসরাইয়ে চার হাজার ২০০, সীতাকুন্ডে তিন হাজার ৮০০, ফটিকছড়িতে পাঁচ হাজার ৬০০, রাউজানে দুই হাজার ৮০০, রাঙ্গুনিয়ায় তিন হাজার ৪০০, হাটহাজারীতে দুই হাজার ৬০০, বোয়ালখালীতে দুই হাজার ৫০, পটিয়ায় তিন হাজার, আনোয়ারায় দুই হাজার ৬০০, চন্দনাইশে দুই হাজার ৩৫০, লোহাগাড়ায় তিন হাজার ৩০০, সাতকানিয়ায় তিন হাজার ৪০০, বাঁশখালীতে চার হাজার ৭০০, স›দ্বীপে পাঁচ হাজার ও কর্নফুলীতে এক হাজার ২০০ পরিবারে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারের ১০ কেজি করে চাল দে পায়া হ পায়। আরোও ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ১৩ লক্ষ নগদ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। যা আজকে উপজেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেয়ার সম্ভাবনা আছে।
পাঁচটি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি উপজেলাতে স্থানী পায়ভাবে ব্যবসা পায়ী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ গরীবদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। বেসরকারিভাবে দফা পায় দফা পায় এসব ত্রাণ বিতরণ করা হলেও বিভিন্ন স্থানে সরকারি ত্রাণের দেখা মিলেনি। কিছু কিছু ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণ বিতরণ করলেও তা সরকারি নাকি ব্যক্তিগত উদ্যোগের ত্রাণ তা নিয়ে ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ে তিনবার বরাদ্দ দেয়া হলেও কিছু দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধির কারণে এমন উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ত্রাণ বিতরণ করায় ত্রাণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এক শ্রেণির মানুষ। অনেক জনপ্রতিনিধি সরকারি চাল বরাদ্দ নিয়ে বিতরণ না করে নিজের আয়ত্বে রেখেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি ত্রাণ নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা ভোটের রাজনীতি করছেন। সামনে আসছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এ নির্বাচনে যারাই জনপ্রতিনিধির পক্ষে থাকবেন এমন ব্যক্তিরা ত্রাণ পাচ্ছেন। অথচ ভিন্ন দলের সমর্থক অনেকেই ত্রাণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সাতকানিয়ার ঢেমশা ইউনিয়নের আশফাক নামে এক ব্যক্তি জানান, সরকার এত ত্রাণ দিচ্ছে, এগুলো যাচ্ছে কোথায়? যেখানেই খোঁজ নিচ্ছি, সেখানেই গরীব মানুষের মধ্যে ত্রাণ না পাওয়ার হতাশা বিরাজ করছে। প্রশাসনের উচিত মেম্বার চেয়ারম্যানরা যে তালিকা জমা দিয়েছেন তা যাচাই-বাছাই করা।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী পূর্বদেশকে বলেন, ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের কোন অভিযোগ পাইনি। তবে ত্রাণের জন্য জেলা প্রশাসনের হটলাইনে অনেকেই ফোন দিচ্ছে। প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে দেড়শ মানুষকে রাতে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ পাচ্ছে না বলছে এটা বড় সমস্যা। আমরা তালিকা পেলেই বরাদ্দ কোথায় যাচ্ছে জানতে পারবো। মানুষের মধ্যে চাহিদা অনেক।
অনেকে কয়েকবার করে ত্রাণ পেতে যোগাযোগ করছে। এখনো সিটি এলাকা ও বিভিন্ন উপজেলায় পূর্বের তিন দফা বরাদ্দ দেয়া চাল বিতরণ শেষ করতে পারেনি।