ত্রাণের আওতায় নেই অনেকেই

138

রিকশাচালক ইউসুফ। থাকেন নগরীর জঙ্গিশাহ মাজার এলাকায়। ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া এক মেয়েসহ চারজনের সংসার তার। বাসা ভাড়া দিতে না পেরে ফ্রিজ বিক্রি করেছেন। উঠেছেন ডিসি রোড়ের শ্বশুর বাড়িতে। দুর্যোগের এ সময় রিকশা চালিয়ে পোষায় না। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন, যে যা কাজ দেন, তাই করছেন ইউসুফ।
কারো কোনো সাহায্য পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো রাজনীতি করি না। তাই কোন সাহায্য পাই না। এখন বাসায়ও কাজ মিলছে না। জানি এভাবে কয়দিন ঠিকে থাকতে পারি।
সিটি কর্পোরেশনের হিসেবে নগরীতে সাড়ে ১৪ লাখ দরিদ্র জনগোষ্ঠী রয়েছে। বিপরীতে সরকারি বরাদ্দের ১ লাখ কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে। সিটি মেয়র প্রধানমন্ত্রীকে ভিডিও কনফারেন্সে বলেছিলেন, সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে লক্ষাধিক মানুষকে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়।
তারপরও বিশাল এক জনগোষ্ঠী এখনও ত্রাণের আওতায় আসেনি। মূলত দরিদ্র জনগোষ্ঠীরর সঠিক তথ্য না থাকায় এমনটা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে ত্রাণের মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের একজনকে সরকারি বরাদ্দের পাঁচ কেজি চাল ও নিজস্ব অর্থায়নে এক কেজি ডাল দিয়েছে। তাহলে এক লাখ কেজিতে ২০ হাজার মানুষ ত্রাণ পেয়েছে। তবে ব্যক্তি, সামাজিক সংগঠন ও শিল্প গ্রূপের পক্ষ থেকে বিতরণ হচ্ছে ত্রাণ। অনেকে চুপচাপ মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন, তারপরও কতটুকু ‘কভার’ হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তর নেই অনেকের কাছে।
হাসিনা আক্তার, থাকেন রহমান নগরের আবাসিকের ৬নং রোডের একটি কলোনিতে। বাসায় বুয়ার কাজ করে সামলাতেন পাঁচজনের সংসার। ওই বাসার সবাই গ্রামের বাড়ি যাওয়ায় কাজ বন্ধ, তাই আয় নেই। তাদের কলোনিতে কেউ ত্রাণ নিয়ে যায়নি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমরা নাকি চলতে পারি, তাই কেউ কোন সাহায্য করছে না। গত দুইদিনে সন্তানদের একবেলা খাবার দিতে পেরেছি। খানিক দূরেই কসমোপলিটন ১২নং রোডের সাথে বড় বস্তি। যেখানে হাজারের উপরে পরিবারের বাস। বেশিরভাগই রিকশা, ভ্যান চালিয়ে আর মহিলারা বাসা-বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। করোনা তাদের জীবন থমকে দিয়েছে। সেখানেও কেউ ত্রাণ নিয়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন মালেকা নামের এক বস্তিবাসী।
শুধু হাসিনা বা মালেকা নয়, আয় রোজগার বন্ধ হওয়ায় দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন প্রায় ১৪ লাখ দরিদ্র মানুষ।
চসিকের বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মইনুল হোসেন চৌধুরী পূর্বদেশকে জানান, চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশে মোট ২১টি বড় বস্তি রয়েছে। যেখানে বাস করছেন প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ শ্রমজীবী মানুষ।
প্রতিদিনই সরকারি বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলররা এ বিতরণ কাজ সারছেন। সাধারণ জনগোষ্টী নয়, রাজনৈতিক কর্মীদের তৈরি করা তালিকায় চলছে সরকারি বরাদ্দের বিতরণ। তবে অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে হাজারো মানুষকে ত্রাণ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তবে এ বরাদ্দ পর্যাপ্ত কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে বরাদ্দের কথা জানান চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী। তিনি পূর্বদেশে বলেন, মহানগরে চাল বিতরণ করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। সংস্থাটিকে ইতোমধ্যে তিন কিস্তিতে ৯০ মেট্রিক টন (৯০ হাজার কেজি) হস্তান্তর করেছে। নগদ টাকা দেয়া হয়েছে ৬ লাখ টাকা।
তবে চট্টগ্রামে কি পরিমাণ হতদরিদ্র-উপার্জনহীন পরিবার রয়েছে, তার কোন সুস্পষ্ট সংখ্যা নেই। তাই তা জানার জন্য প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
এছাড়া বরাদ্দ থেকে জেলা প্রশাসন ১০ মেট্রিক টন চাল ও ১৩শ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করছে বলে জানান। তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামে মোট জেলায় বরাদ্দ রয়েছে ৩৫ লাখ ৮০ হাজার নগদ টাকা, তার মধ্যে ৩০ লাখ ১০ হাজার বিতরণ হয়ে গেছে। চাল বরাদ্দ রয়েছে ১১শ ৩৮ মেট্রিক টন এবং বিতরণ করা হয়েছে ৬০৩ মেট্রিক টন চাল। অর্থাৎ আরও ৭৩৫ মেট্রিক চাল মজুদ রয়েছে। ১৫ উপজেলাসহ মহানগরে এসব চাল বিতরণ করা হবে।
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা জানান, আমরা তিন কিস্তিতে যেসব ত্রাণ পেয়েছি, তার দুই কিস্তি বন্টন হয়ে গেছে। তৃতীয় কিস্তির ৫০ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ টাকা বিতরণের কাজ চলছে। কি পরিমাণ হত দরিদ্র পরিবার রয়েছে জানতে চাইলে বলেন, পুরো সিটি কর্পোরেশনে উপার্জনহীন দরিদ্র পরিবারের তালিকা চেয়ে কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে আমরা জেনেছি, সবমিলিয়ে কমপক্ষে ১৪ লাখ দরিদ্র জনগোষ্ঠী রয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার কোন বিকল্প নেই। অন্যথায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনেক কষ্টে পড়বে। এ পর্যন্ত ১৩ হাজার মানুষকে ব্যক্তি উদ্যোগে খাবার সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি এবং নগদ টাকা দিয়েছি ১৫ লাখ টাকা। আমার সামর্থ্যের মধ্যে এ সহযোগিতা আরও অব্যাহত থাকবে।
সামনে রমজান আসছে, এ দুযোর্গের প্রভাব তখনও থাকবে। তাই সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।