‘ত্রাণচোর’ ধরতে মাঠে দুদক

80

করোনা সংকটকালীন জেলা প্রশাসকদের সাথে সমন্বয় করে এখন থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে দুদক। দেশের বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ নিয়ে হরিলুটের অভিযোগ উঠায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিশনের প্রতিটি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণকে স্থানীয় জেলা প্রশাসকদের সাথে সমন্বয় করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের সকল বিভাগীয় কার্যালয় ও সমন্বিত জেলা কার্যালয়সমূহকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কমিশন জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক যেকোনো কর্মসূচিতে দুর্নীতির মত অপরাধ প্রশ্রয় দিবে না। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অনুপার্জিত আয় ভোগ করার কোন সুযোগ নাই। দুদক কাউকে অনুপার্জিত আয় ভোগ করার সুযোগ দিবে না।
দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন বিভিন্ন গণমাধ্যম ও দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দাদের মাধ্যমে ত্রাণ
বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পায়। দেশব্যাপী সংকটকালীন সময়ে সরকারের ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে সরকার।
দুদকের কাছে তথ্য আছে, কতিপয় ব্যক্তি জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির ত্রাণসামগ্রী বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। দুদক বিষয়টি অবহিত হয়ে কমিশনের প্রতিটি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ স্থানীয় জেলা প্রশাসকদের সাথে সমন্বয় করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশনা দিয়েছে। কোন অবস্থাতেই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে দুর্নীতির ন্যূনতম সুযোগ দেওয়া হবে না। কমিশন আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি এজাতীয় ত্রাণসামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দুর্নীতি বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সবসময় কোথাও কোন দুর্নীতি হচ্ছে কিনা আমরা নজর রাখছি। আবার কোথাও দুর্নীতির অভিযোগ পেলেই তদন্ত করছি। এবার ত্রাণ বিতরণে কিছু কিছু জায়গায় অনিয়ম হওয়ায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে চাইছে কমিশন। এজন্য জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয় করে আমাদেরকেও ত্রাণ বিতরণ তদারকিতে মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সাফ জানিয়েছেন, সরকারের দেয়া ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম সহ্য করা হবে না। কেউ ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম করলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিজ দলের লোক হলেও কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চারধাপে চট্টগ্রামে ৭৪০ মেট্রি টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এছাড়াও ৩৬ লক্ষ নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে চতুর্থ ধাপের বরাদ্দগুলো বিভিন্ন উপজেলায় বন্টন করা হলেও এখনো বিতরন করা হয়নি। ইতোমধ্যে তিনধাপে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯ হাজার, মিরসরাইয়ে চার হাজার ২০০, সীতাকুন্ডে তিন হাজার ৮০০, ফটিকছড়িতে পাঁচ হাজার ৬০০, রাউজানে দুই হাজার ৮০০, রাঙ্গুনিয়ায় তিন হাজার ৪০০, হাটহাজারীতে দুই হাজার ৬০০, বোয়ালখালীতে দুই হাজার ৫০, পটিয়ায় তিন হাজার, আনোয়ারায় দুই হাজার ৬০০, চন্দনাইশে দুই হাজার ৩৫০, লোহাগাড়ায় তিন হাজার ৩০০, সাতকানিয়ায় তিন হাজার ৪০০, বাঁশখালীতে চার হাজার ৭০০, স›দ্বীপে পাঁচ হাজার ও কর্নফুলীতে এক হাজার ২০০ পরিবারে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগের তিনধাপে ৭২ হাজার পরিবারকে ত্রাণ দেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী।