তৃণমূলকে শক্তিশালী করার নির্দেশনা

48

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শুধু নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেওয়ার মধ্যেই কার্যক্রম সীমিত রেখেছে ঐক্যফ্রন্ট। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন এ ফ্রন্টের সবচেয়ে বড় বিএনপি।
জানা গেছে, ভোট কারচুপিসহ নির্বাচনে নানা অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ হাতে নিয়ে আগামীতে আন্দোলনে নামতে চায় ঐক্যফ্রন্ট। এজন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে দালিলিক তথ্যও চেয়েছেন ফ্রন্টের নীতি-নির্ধারকরা। একই সাথে তৃণমূলে বিএনপিকে আরো সংগঠিত করতে জোর দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে প্রত্যেক আসনের প্রার্থীদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর ধানের শীষের প্রার্থীদের নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বৈঠক করে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট। এতে ধানের শীষের প্রার্থীরা ৩০ ডিসেম্বর নিজ নিজ এলাকার ভোটের দিনের পরিস্থিতি এবং পরবর্তী করণীয় কী হতে পারে, তা বিস্তারিত তুলে ধরেন। বৈঠকের পর বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেয় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল। তবে বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি জোটের পক্ষ থেকে। যদিও এর একদিন আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ধানের শীষের বিজয়ী প্রার্থীরাও শপথ নিবেন না এবং প্রত্যেক প্রার্থী নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে নিজ নিজ আসনের হয়ে মামলা করবেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে যে নিষ্ঠুর প্রতারণা করা হয়েছে, সে নির্বাচনের ফলাফল আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। পাশাপাশি আমরা পুনরায় তফসিল চেয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দাবি করছি। আমরা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি, ফলে শপথ নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। পরিষ্কার করে বলছি, আমরা শপথ নেব না। নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে প্রত্যেক প্রার্থী নিজ নিজ আসনের হয়ে মামলা করবেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ঐক্যফ্রন্টের জরুরি বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে নির্বাচনে কারচুপি ও পরবর্তী করণীয় নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান উপস্থিত প্রার্থীরা।
বৈঠক থেকে নির্বাচনে কারচুপির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের মুক্তির প্রতি জোর দেওয়া হয়। নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি, এজেন্ট ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ও নিহতদের তালিকা, প্রতিটি কেন্দ্রের অস্বাভাবিক ভোটের হিসাবসহ তথ্য-প্রমাণ সহকারে রিপোর্ট করতে বলা হয়। একই সাথে ভোট কারচুপির ভিডিও ফুটেজ থাকলে তাও জমা করতে বলা হয়। এসব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে তা দেশি ও আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা এবং পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট।
বৈঠক থেকে প্রতিটি আসনের যে সব নেতাকর্মী ও সমর্থক কারাগারে রয়েছে তাদের তালিকা এবং জামিনের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সাথে কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া ও তৃণমূলে সাংগঠনিক শক্তি মজবুত করার দিকনির্দেশনা আসে বৈঠক থেকে।
নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মো. আবু সুফিয়ান বলেন, আন্দোলন সংগ্রাম করতে সে ধরনের কোন নির্দেশনা আসেনি। কেন্দ্র থেকে নেতাকর্মীদের জমিনের ব্যবস্থা করা, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, দল ও নেতাকর্মীদের সংগঠিত করা এবং তৃনমূলের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশনা এসেছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
একই বিষয়ে ধানের শীষের অন্য এক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আন্দোলন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ভোটে অংশগ্রহণটাও আন্দোলনের একটা অংশ ছিল। এখন কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক হবে। আপাতত নেতাকর্মীদের মুক্তি ও সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিএনপি ছাড়াও ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলও ছিল। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ ছাতা প্রতীকে এবং কক্সবাজার-২ আসনে ২০ দলীয় জোটের অপর শরিক জামায়াতে ইসলামীর হামিদুর রহমান আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় সেখানে কাউকেই ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়নি। নির্বাচনে ২৫৯টি আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা। জোটগতভাবে তাদের আসন সংখ্যা ২৮৮টি। এর বিপরীতে ধানের শীষের প্রার্থীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পেয়েছে। ফল ঘোষণার পরই তা প্রত্যাখ্যান করেছে ঐক্যফ্রন্ট।