তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা শুরু

132

দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বসেছে মিলনমেলা। ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ইজতেমা ময়দানে তাবুর নিচে জড়ো হয়েছেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। ফলে ইজতেমা ময়দান পরিণত হয়েছে বিশ্ব মুসলিমদের মিলনমেলায়। এতে চলছে ইসলামের জ্ঞান-গরিমা, দাওয়াত-তাবলিগ, ভালোবাসা ও প্রীতির আদান-প্রদান। প্রতি বছর তুরাগ তীরে এ বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ। বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিক বয়ান গতকাল শুক্রবার শুরু হলেও বিপুল সংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার বাদ আসর আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় মূল কার্যক্রম।
এদিন (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাদ আসর পাকিস্তানের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশিদ বয়ান শুরু করেন। বাংলাদেশের মাওলানা মো. জাকির হোসেন এ বয়ানের অনুবাদ করেন। বাদ মাগরিব বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমবয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমেদ লাট। এ বয়ানের অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক। খবর বাংলানিউজের
গত বছর ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির বিভিন্ন বক্তব্যের জেরে এবং তার বাংলাদেশে আসা না-আসা নিয়ে বিবাদ-বিভক্তি দেখা যায়। কিন্তু পরে বাংলাদেশ সরকার ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ মোট চারদিন দুই পর্বে ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম পর্বে (১৫-১৬ ফেব্রুয়ারি, শুক্র ও শনিবার) কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা জুবায়ের আহমদ নেতৃত্ব দেবেন। পরের দুই দিন সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম নেতৃত্ব দেবেন।
বিগত কয়েক বছর যাবত ইজতেমায় মুসল্লিদের বিপুল সমাগমের কারণে স্থান সংকুলান হতো না। তাই গত কয়েক বছর ধরে দুই পর্বে ইজতেমা করা হচ্ছিল। সেখানে দেখা গেছে, ইজতেমার প্রথম পর্বেই ঐতিহ্যবাহী আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হতো। তবে দ্বিতীয় পর্বেও অনানুষ্ঠানিক মোনাজাত পরিচালনা করা হতো।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির সূত্রে জানা গেছে, এ বছরও ইজতেমার মূল ‘আখেরি মোনাজাত’ শনিবার (আজ) সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত হবে। তবে মোনাজাত কে পরিচালনা করবেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দুই গ্রæপের আলাদা আয়োজনে শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে আজ শনিবার ও আগামী সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি)।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১৬০ একর বিস্তৃত বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা অবস্থান নিয়েছেন তাবুর নিচে। বয়ান শুনছেন, আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করছেন। অন্যদিকে কেউ কেউ রান্নাবান্না, কাপড়-কাচা ও গোসল করাসহ দৈনন্দিন কাজও সেরে নিচ্ছেন।
ময়দানের আশেপাশে বসেছে হরেক রকমের দোকান। এর মধ্যে অনেকেই সেরে নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় কেনা-কাটা। এসব মিলিয়েই টঙ্গীর তুরাগ তীরে যেন মুসল্লিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর ও তরুণসহ সকল বয়সের মুসল্লিরা পায়জামা-পাঞ্জাবী পড়ে ও টুপি মাথায় ইসলামের এ মেলায় শরিক হয়েছেন। তাবুর নিজে সবুজ ঘাসে বিছানাপত্র বিছিয়ে রাত্রীযাপনসহ ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হয়ে পড়েছেন ধর্মপ্রাণ লাখ লাখ মুসলিম।
রাজধানীর মিরপুর থেকে ইজতেমায় আসা মুসল্লি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, এবার বিশ্ব ইজতেমা বিবাদমান হওয়ায় সকলের মধ্যে সংশয় ছিল এবার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে কি না? তবে শেষ পর্যন্ত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতি বছর ইজতেমায় অংশ নিয়ে থাকি। এবারও সে লক্ষ্যে এসেছি। মুসল্লিদের উপস্থিতি এবার অনেক বেশী। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মো. আবু হানিফ জানান, আমলের জন্য বিশ্ব ইজতেমায় এসেছি। এখানে বিশ্ব মুরুব্বিদের কাছ থেকে আখেরাতের ও ধর্মীয় কথাবার্তা শুনবো। যেন সঠিকভাবে আল্লাহ’র পথে চলতে পারি, সেই দিক নির্দেশনা এখানে পাবো। ইজতেমায় ইসলামের জ্ঞান অর্জন করা যায়। পরিবার-পরিজন রেখে কয়েক দিনের জন্য এখানে এসেছি। দেশ-বিদেশের সব মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকুক এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হোক- এটাই কামনা করছি।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য মো. ইলিয়াস জানান, গত বছর ইজতেমা শুরু হওয়ার আগে এতো মুসল্লি হয়নি। এবার মুসল্লিদের সংখ্যা অনেক বেশী। মুসল্লিদের আগমনে ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হূমায়ূন কবীর জানান, বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের মধ্যে কয়েক লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসে পৌঁছেছেন। এছাড়াও মুসল্লিদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। এখানে বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরাও রয়েছে। মুসল্লিদের সুবিধার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে এবারের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হোক এটাই সকালের প্রত্যাশা।

যেভাবে স্থায়ী হলো তাবলীগের
বিশ্ব ইজতেমা

বিবিসি বাংলা
ঢাকার উত্তর দিকে টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে প্রতি বছর তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় শীতের সময়টায়। সাধারণত ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারি মাসে এই জমায়েত হয়ে আসছে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এতে অংশ নেন, যাদের মধ্যে বিদেশীদের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো।
সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত হজের পর এই বিশ্ব ইজতেমাকে বলা হয় মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় জমায়েত। এর গোড়াপত্তন হয় ভারতে, কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটা অর্ধশতকের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশে হয়ে আসছে।
তথ্য বলছে, ‘১৯২৬ সালে হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ভারতের উত্তর প্রদেশের মেওয়াত এলাকায় তাবলীগী আন্দোলনের গোড়াপত্তন করেন এবং একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক সম্মিলন বা ইজতেমার আয়োজন করেন। কালক্রমে তাবলীগ সমগ্র উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করে এবং উপমহাদেশের বাইরেও এর প্রভাব পড়ে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সূত্র ধরে উপমহাদেশের ভারত, পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান-এ তিনটি অঞ্চলে মুসলমানদের অবস্থান সাপেক্ষে তাবলীগের তিনটি কেন্দ্র স্থাপিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক এ কে এম খাদেমুল হক বলেন, ১৯২০ সালের দিকে যখন এটি শুরু হয়েছিল তখন এটা একটা আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিল ভারতে। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে এটা শুরু হয়েছিল। তখন হিন্দুদের মধ্যে একটা সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। যারা অন্য ধর্মে চলে যাচ্ছিল তাদেরকে আবারো হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নেয়ার একটা চেষ্টা ভারতবর্ষে বিভিন্ন প্রদেশে শুরু হয়। তখন মুসলমানদের সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এসময় দেওবন্দ কেন্দ্রীক মুসলমানেরা চিন্তা করলেন, মুসলমানদের ইসলাম সম্পর্কে আরো সচেতন করে তুলতে হবে। এটাকে আন্দোলন বলা হয় এই অর্থে যখন একটা গোষ্ঠী অনেক লোক নিয়ে একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সংগঠিত করে তখন সেটা আন্দোলনের রূপ নেয়।
খাদেমুল হক বলেন, যখন এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল তখন ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ শাসন করছে। তাবলীগ জামাত কখনোই নিজেদেরকে ব্রিটিশ বিরোধী হিসেবে প্রচার করতে চায়নি।
ইজতেমার বাংলাদেশ পর্ব শুরু যেভাবে: বাংলাদেশে এর সূত্রপাত হয় চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে। চট্টগ্রামের সমুদ্রবন্দর দিয়ে হজে যাওয়ার জন্য মানুষ সেখানকার হজ ক্যাম্পে জড়ো হতেন, আর সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল আঞ্চলিক ইজতেমার প্রক্রিয়াটা।
বাংলাদেশে প্রথম তাবলীগের জামাত নিয়ে আসেন তাবলীগ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ। ভারতের বাইরে বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচারের কাজ করছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। ভারত এবং পাকিস্তান দুটি আলাদা দেশ হওয়ার পর মোহাম্মদ ইউসুফ দুই দেশেই জামাত পাঠানো শুরু করলেন ইজতেমা আয়োজনের জন্য। তবে তখন ছোট আকারে ইজতেমা হত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুর রশিদ বলেন, ১৯৪৬ সালে ঢাকার রমনা পার্কের কাছে কাকরাইল মসজিদ-যেটা সে সময় মালওয়ালি মসজিদ নামে পরিচিত ছিল, সেখানে এই সম্মেলনটা হয়। এরপরে হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে।
বাংলাদেশ যখন পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত ছিল, তখন ১৯৬৫ সালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে একটি জামাত আসে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মো. খান শাহাবুদ্দিন নাফিস। তখনকার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খান শাহাবুদ্দিন নাফিস বর্তমানে তাবলীগ জামাতের শুরা কমিটির একজন উপদেষ্টা।
এখন যেভাবে বিদেশ থেকে প্রচুর মুসলমান ইজতেমায় অংশ নেন, সেই সময়ে অবশ্য অন্যান্য দেশ থেকে লোবজন আসেনি বলে জানান খান শাহাবুদ্দিন নাফিস। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছিল, আর ছিল গ্রামের মানুষ।
ঢাকার পর মোহাম্মদ ইউসুফ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করেন। খান শাহাবুদ্দিন নাফিস বলেন, তাবলীগের জমায়েতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকার কারণে এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৬ সালে ইজতেমা হয় টঙ্গীর মনসুর জুট মিলের কাছে। এর পরের বছর ঠিক করা হয় ইজতেমা হবে টঙ্গীর তুরাগ নদের কাছে। আরো পরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমান টঙ্গীতেই ১৬০ একর জমি নির্ধারণ করে দেন ইজতেমার জন্য।
বিশ্ব ইজতেমা নাম কীভাবে হল: গবেষক ড. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমা’ তাবলীগের দেয়া নাম নয়, বরং তাবলীগের লোকজন এটাকে বার্ষিক সম্মেলন বলতেন।
খান শাহাবুদ্দিন নাফিস জানান, তাবলীগ জামাতের পক্ষ থেকে বিদেশীদের পাঠানো শুরু হয় এক সময়। যখন বিদেশ থেকে লোক আসা শুরু করলো, তখন গ্রামের লোক এটাকে বিশ্ব ইজতেমা বলা শুরু করলো। শুরার একজন প্রবীণ ব্যক্তি বললেন, জনগণের চাহিদার উপর আল্লাহতায়ালা বিশ্ব ইজতেমা করে দিয়েছেন।
‘বিশ্ব ইজতেমা’ নাম নিয়ে তাবলীগ জামাতের মধ্যেই শুরুতে বিতর্ক ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে বিশ্ব ইজতেমা নামটি প্রচলিত হয়ে যায়।
কেন বাংলাদেশ বিশ্ব ইজতেমার স্থান হিসেবে নির্ধারিত হল: ইজতেমার ধারণা শুরু হয়েছিল ভারতে। ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে ইজতেমা হতো। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এটি ভারত, পাকিস্তান বা অন্য কোন দেশে না হয়ে বাংলাদেশেই স্থায়ী হয়েছে।
খান শাহাবুদ্দিন নাফিস বলেন, এর একটা কারণ ছিল। সে সময়ে বাংলাদেশের ভিসা পাওয়া সহজ ছিল। ইজতেমার নামে কেউ ভিসা আবেদন করলে কেউ ফেরত যেত না। এটা সরকারের একটা ভালো পলিসি ছিল। বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার এই ইজতেমাকে সমর্থন করেছে।
শিক্ষক একেএম খাদেমুল হক বলেন, যে দুটো কারণে বিশ্ব ইজতেমার স্থায়ী ঠিকানা বাংলাদেশে হয়েছে তার একটি বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণ। আরেকটি তাবলীগ জামাতের যে আন্দোলন সেটা পুরো দক্ষিণ এশিয়াকেন্দ্রীক। যদিও ভারতে এর শুরু কিন্তু ভারতে মুসলিম-প্রধান দেশ না হওয়ার কারণে অনেক দেশের মুসলিমরা সেদেশে যেতে কমফোর্ট ফিল করেননি। আবার পাকিস্তানকে নিয়ে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে।
তিনি আরও বলেন, তাবলীগের জমায়েত বাংলাদেশে শুরু থেকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা যতটা পেয়েছে ততটা ভারত বা অন্য কোথাও পায়নি। এছাড়া সবচেয়ে কম খরচে মানুষ বাংলাদেশে আসতে পারতো।
গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা হওয়ার পিছনে কিছু রাজনৈতিক কারণও ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুর রশিদ বলেন, ভারতের কিছু স্থানে তখনো মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নি মতবিরোধ ছিল। সে তুলনায় বাংলাদেশে মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল, যাকে একটা নিরাপদ পরিবেশ বলে মনে করেছিলেন তারা।
তবে তিনি এও বলেন যে, তাবলীগের এক সম্মেলনে ইজতেমার স্থান হিসেবে লটারির মাধ্যমে বাংলাদেশের নাম উঠে আসে বলে অনেকে উল্লেখ করেন। অবশ্য এই তথ্য নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ভারত এবং পাকিস্তান-এই দুটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তুলনামূলক নিরপেক্ষ একটা স্থান ছিল। কারণ হিসেবে বলা হয়, রাজনৈতিক কারণে তখন ভারতের নাগরিকরা যেমন সহজে পাকিস্তানে যেতে পারতেন না, তেমনি পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভারতে পাওয়া ছিল কঠিন একটি বিষয়। ফলে বাংলাদেশই ছিল ওই দেশ যেখানে সহজে সবাই আসা-যাওয়া করতে পারতেন।
তবে তাবলীগের ইজতেমা যে বিশ্বের অন্য কোথাও হচ্ছে না তা নয়। পাকিস্তানের রাইবেন্ড এবং ভারতের ভোপালে বড় আকারে ইজতেমা হয় বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমার ঠিক আগে ও পরে। যে সংখ্যায় বিদেশীরা বাংলাদেশের ইজতেমায় আসেন, তাতে করে তুরাগ তীরের ইজতেমাই ‘বিশ্ব ইজতেমা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে।