তুচ্ছ ঘটনায় তালাক দেওয়ায় স্বামীকে খুন

36

সাতকানিয়ায় তুচ্ছ ঘটনায় তালাক দেওয়ায় বটি দিয়ে স্বামী নুরুল আমিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার (৩৪)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দে’র আদালতে হাজির করা হলে স্ত্রী ইয়াছমিন নিজবাড়িতে ঘুমন্ত স্বামীকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
সাতকানিয়া থানার এসআই আহসান হাবিব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে গত ২৮ আগস্ট রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা আশ্রয়ন প্রকল্প-৩ এ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তর্ক হয়। এক পর্যায়ে স্বামী নুরুল আমিন স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারকে তালাক দেন। ওই রাতে স্বামী নুরুল আমিন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এক রুমে আর স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার অন্যরুমে শুয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক ৩ টায় স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার নুরুল আমিনকে বটি দিয়ে মাথায় কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন। ভোর ৫ টার দিকে মেয়ে তাসমিনা সোলতানা তুহিন (৮) ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় খাটের মধ্যে পড়ে আছেন। আর মা পাশে বসে আছেন। মেয়েটি পরে তার মাকে বাবার এ অবস্থা কেন জানতে চাইলে কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
পরে মেয়েটি ঘরের বাইরে গিয়ে প্রতিবেশি ও মিনিট্রাকের হেলপার মনজুরকে ডেকে তার বাবার অবস্থা দেখান। পরে মনজুর প্রতিবেশি যুবক ইয়াছিন ও নজরুলকে সাথে নিয়ে নুরুল আমিনকে বাঁশখালী আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখান থেকে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। তখন তাকে সার্জিস্কোপ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ আগস্ট সকাল ১১টায় নুরুল আমিন মারা যান।
এ ঘটনায় ওইদিনই নিহত নুরুল আমিনের বোন সামশুন্নাহারসহ এলাকার লোকজন লাশ এনে আশ্রয়ন প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী মসজিদের পাশে পাহাড়ের উপর নুরুল আমিনের লাশ দাফন করেন। দাফনের সময় স্ত্রীসহ প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত এলাকাবাসী নুরুল আমিনের মৃত্যুর কারণ স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, নুরুল আমিন ঘরের বৈদ্যুতিক পাখায় আঘাত পান।
পরে স্থানীয়রা সাতকানিয়া থানার ওসি মো. সফিউল কবীরকে জানালে তিনি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নুরুল আমিনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ওই সময় ক্ষুব্ধ ইয়াছমিন আক্তার স্বামীকে খুন করেছেন বলে স্বীকার করেন। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গত সোমবার রাতে নুরুল আমিনের বোন সামশুন্নাহার বাদি হয়ে ইয়াছমিন আক্তারকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, ১৬ বছর আগে সাতকানিয়া পৌরসভার সামিয়ার পাড়ার আব্দুল মাবুদের কন্যা ইয়াছমিন আক্তারের সাথে এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা আশ্রয়ন প্রকল্প-৩ এর বাসিন্দা মিনিট্রাক চালক নুরুল আমিনের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে।
সাতকানিয়া থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেন, নিহতের বোন সামশুন্নাহার বাদি হয়ে মামলা করেন। ইয়াছমিনকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্ব-ইচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।