তীব্র শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা নামতে পারে চার ডিগ্রি সেলসিয়াসে

54

প্রবাদে বলা হয়- ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’। বাংলা বর্ষপঞ্জির পাতায় আজ মঙ্গলবার বিদায় নিতে যাচ্ছে পৌষ। কাল পথচলা শুরু করবে মাঘ মাসের। আর মাঘের প্রথম পক্ষেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহে ভর করে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ মাত্রায় দাপট দেখাতে পারে শীত। তাপমাত্রার পারদ নামতে পারে চার ডিগ্রির ঘরে। তার সাথে রয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আভাসও। সবমিলিয়ে মাঘে বাঘ পালানো শীতের আলামতই দেখছেন আবহাওয়াবিদরা।
পৌষের বিদায়বেলায় বিরাজমান আবহাওয়ার অবস্থায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামসহ অন্য বিভাগগুলোর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দুই অংকের ওপরেই অবস্থান করেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে ঊর্ধ্বাকাশে থাকা ঘন কুয়াশার স্তর ভেদ করে দিনের বেলা সূর্যকিরণ ভূ-পৃষ্ঠে প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছাতে না পারা আর ‘সাইবেরিয়ান উইন্ড’ বা হিমেল হাওয়ার যুগলবন্ধীতে দেশজুড়ে বেড়ে যাওয়া শীতের দাপট অব্যাহত রয়েছে।
বিশেষ করে, রাতে ও সকালে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। ঘন কুয়াশার স্তর রয়েছে রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের উপর। এ অবস্থায় তাপমাত্রার পারদের ফের নি¤œমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ছে। একইসময়ে দেশের কোথাও কোথাও বিকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ স্থানে দুপুরের পর সূর্যকিরণ উঁকি দিলেও তার স্থায়ীত্ব ও উষ্ণতা দুটোই কম। কিছু কিছু স্থানে সূর্যকিরণের দেখাই মিলছে না। তাপমাত্রার পারদ পতনমুখী হওয়ার ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার হিমালয়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী জনপদ রংপুরের বিভাগের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনি¤œ সাত দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে অধিদপ্তর। আগের দিন যা রাজারহাটে ছিল নয় দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অপরদিকে, টেকনাফে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আগের দিনের তুলনায় আরও বেড়েছে। গতকাল সোমবার সেখানে ২৬ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে অধিদপ্তর। আগের দিন যা ছিল ২৫ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত তাপমাত্রার অংকের হিসাবে শৈত্যপ্রবাহমুক্ত থাকা চট্টগ্রাম বিভাগের সর্বত্র সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক দুই থেকে ১৪ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করেছে। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সবজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে।
আবহাওয়াবিদ মো. রুহুল কুদ্দুস পূর্বদেশকে বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে জানুয়ারিতেই আমাদের দেশে সর্বোচ্চ মাত্রায় শীত অনুভ‚ত হয়ে থাকে। এবার জানুয়ারির তৃতীয় ও শেষ সপ্তাহ বেশি শীতপ্রবণ হতে পারে। বিশেষ করে মাসের শেষদিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এখন সাইবেরিয়ান উইন্ড বা হিমেল হাওয়ার কারণে যে ধরণের শীত অনুভ‚ত হচ্ছে, মাসের শেষদিকে তা আরও তীব্র হতে পারে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আর পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসহ রংপুর বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা দেশের পূর্বাঞ্চলে দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য এবং দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা বা দুদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা ল্ডমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে। আর বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় এ সময়ের শেষের দিকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের আলামত রয়েছে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে চলতি জানুয়ারি মাসের পূর্বাভাসে আবহাওয়া আধিদপ্তর জানিয়েছিল, সারা দেশে মোট তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে অন্তত দুটির ধরণ হতে পারে তীব্র। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষদিকে একটি এবং মাসের শেষ সপ্তাহে আরেকটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। আর মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে বিভিন্ন বিভাগের জেলাগুলোতে কনকনে শীত অনুভ‚ত হবে। বিশেষ করে, গ্রামীণ জনপদে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভ‚ত হবে। সারাদেশের মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের কিছু অংশ এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে এবার শীতের তীব্রতা বেশি থাকবে। পাশাপাশি রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি ও এর আশেপাশে তীব্র শীত অনুভ‚ত হবে। আর ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে।
অধিদপ্তরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তরে হাওয়ায় ডিসেম্বরের শুরু থেকেই তাপমাত্রার পারদের পতন শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ডিসেম্বর চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে। ওইদিন দেশের সর্বউত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরদিন আরও এক ডিগ্রি কমে তা আটের ঘরে নামে। কিন্তু এরপর থেকেই পারদের উর্ধ্বমুখী পথচলা শুরু হয়। টানা চারদিনে তিন ডিগ্রিরও বেশি চড়ার পর ফের পতন ঘটে পারদের। পারদের এই পতনমুখী প্রবণতার মধ্যেই আবহাওয়াবিদরা সারাদেশে শীত জেঁকে বসার আলামত দেখতে পান। এর জেরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বইতে শুরু করে মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে আসে চুয়াডাঙ্গায় সাত দশমিক নয় ডিগ্রিতে। সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন চার দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নেমে চড়তে থাকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী ৫০ বছরের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রূয়ারি। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং আট ডিগ্রির চেয়ে বেশি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।