তীব্র শীতের সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে অসুখ সচেতনতাই নিরাময়

44

চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। ফলে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা নেমে এসেছে এক অঙ্কের কোঠায়। বাড়ছে শীতকালীন নানা রোগব্যাধি। গরমের তুলনায় শীত আরামদায়ক হলেও প্রতি বছর এ সময়ে বেশ কিছু বাড়তি রোগব্যাধি দেখা যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই সময়টা বেশ জটিলতা তৈরি করে। এ জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। চিকিৎসকরা বলছেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর শীতের তীব্রতা বেশি। স্বাভাবিক শীতকালীন রোগব্যাধির পাশাপাশি তীব্র শীতে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমনিতেই মানুষের শরীরের তাপ উৎপাদন ক্ষমতা কমতে থাকে। এছাড়া হাঁপানি, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশিসহ অন্যান্য রোগ তো আছেই। জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিবেদনে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় আট হাজারের অধিক রোগী। এদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। এ তথ্য ৩১০ টি উপজেলা থেকে পাওয়া। সারা দেশের সব হাসপাতালের হিসাব যুক্ত হলে এ সংখ্যা বাড়বে আরো। শীতজনিত রোগে উত্তরবঙ্গে শিশু ও বৃদ্ধ মিলে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে এসব মৃত্যুর বেশ কয়েকটি প্রচণ্ড শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে হয়েছে। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। জ্বর-সর্দি, কাশি, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ার (রোটা ভাইরাস আক্রান্ত) মতো রোগ বাড়ার খবর আসছে। শিশু ও বৃদ্ধরা সহজেই এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অপরদিকে বেড়ে গেছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই প্যারাসিটামলসহ বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি, যা উদ্বেগজনক। পৃথিবীর কোখাও এভাবে বিনা প্রেসক্রিপসনে ওষুধ বিক্রির নিয়ম না থাকলেও আমাদের দেশে এ অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে গেছে। এভাবে ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। না জেনে ওষুধ সেবনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে সচেতনতা ও সেবার মান বাড়ানো দরকার। প্রয়েজনে শীতকালীন রোগজনীত ট্রিটমেন্ট তরান্বিত করতে বিশেষ সেল খোলা যায় কিনা ভাবা দরকার। এর পাশিপাশি জনসাধারণকে ঠাণ্ডাজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।
আমাদের সমাজের বিত্তবানরা হত দরিদ্রদের মাঝে গরম কাপড় ছোপড় বিতরণের উদ্যোগ নিলে শীতের প্রকোপ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারবে ছিন্নহারা, বস্ত্রহারা অভাবী মানুষগুলো। হাসপাতালে যেসব বৃদ্ধ ও শিশু ভর্তি হচ্ছে তারা বেশির ভাগই দরিদ্র। তাদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ ও সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের চিকিৎসায় গুরুত্ব দিতে হবে এ সময়। শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই শীত এড়িয়ে চলতে হবে। শরীর গরম রাখতে গরম পোশাক পরতে হবে, গরম পানি খেতে হবে। এমনকি গোসলের ক্ষেত্রে গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু এসব রোগে বয়স্ক ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে তাই তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। এছাড়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আমরা মনে করি, আমাদের চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষ দায়িত্বশীল ও সচেতন হলে শীতের যেকোন মন্দ প্রকোপ থেকে নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব।