তিন দিনে পেঁয়াজের দামের দ্বিগুণ লাফ

54

মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি দ্বিগুণ বেড়েছে। তিনদিন আগের ৩০-৩২ টাকার পেঁয়াজ গতকাল পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকায়, খুচরায় তা বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকায়। ভারতে বন্যায় পেঁয়াজ নষ্ট হওয়া এবং কোরবানির সময় কিছুদিন পরিবহন বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিন্ডিকেট করে পাইকাররা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। দ্রæত আমদানি করা না হলে দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে খাতুনগঞ্জ ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
সরেজমিনে খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিনের ব্যবধানেই পেঁঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এদিকে সীমান্তে স্থলবন্দরে পেঁয়াজের কেজি ৪৬ টাকা বিক্রির খবরে কোনো কোনো ব্যবসায়ী দাম আরো একদফা বাড়িয়ে বিক্রি শুরু করেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে বন্যার কারণে সে দেশের বাজারে পেঁঁয়াজের দাম বেড়েছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই মসলা পণ্যটির দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে গত রবিবার প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। ঈদের পর সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রতিদিনই পেঁঁয়াজের দাম বাড়ছে।
খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঈদের আগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুদ করে রাখেন। এখন সুযোগ বুঝে তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাধারণ ভোক্তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ তুললেও তা মানতে নারাজ পরিবেশক ও আড়তদাররা। তারা বলেন, দেশীয় উৎপাদন কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এখানে কারও হাত নেই।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কোরবানির ঈদের আগে ও পরে যাত্রীদের সুবিধার জন্য মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে বাজারে পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান প্রবেশ করতে পারেনি। এসময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা আগের কেনা পেঁঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আসছিলো। কিন্তু ঈদের এক সপ্তাহ পরও সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হলো পেঁঁয়াজের দাম।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ভারতের কানপুর এবং দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগে প্রচুর পেঁয়াজ আসলেও এখন বন্যার কারণে শুধুমাত্র ভারতের নাসিক জেলা থেকে পেঁয়াজ আসছে। স্বাভাবিক সময়ে খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২২ ট্রাক পেঁঁয়াজ আসতো। কিন্তু কয়েকদিন ধরে পেঁঁয়াজ সরবরাহের পরিমাণ কমে গেছে। গত বুধ এবং বৃহস্পতিবার সকালে চার ট্রাক করে মাত্র আট ট্রাক পেঁঁয়াজ আসে। যার কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাড়তে শুরু করে পেঁঁয়াজের দাম। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স কাজী স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাবেদ ইকবাল বলেন, ভারতে বন্যার কারণে দাম বাড়তি হওয়ায় দেশের বাজারেও পেঁঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। সীমান্ত থেকে আমদানিকারকরা যে দর নির্ধারণ করে দিচ্ছে আমরাও সে দরে কমিশনে পেঁঁয়াজ বিক্রি করছি। দাম বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং সাব্বির ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী সৈয়দ ছগির আহমদ পূর্বদেশকে বলেন, ভারতে বন্যার কারণে সে দেশে পেঁঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া ভারতের স্বাধীনতা দিবস ও আমাদের কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ ছিলো। বর্তমানে শুধু একটি জেলার পেঁঁয়াজই রপ্তানি করছে ভারত। মৌসুম শেষ হয়ে আসা এবং বন্যার কারণে অন্যান্য রাজ্যের পেঁঁয়াজের সরবরাহ নেই। এদিকে বাংলাদেশের নিজস্ব উৎপাদিত পেঁঁয়াজের সংকট থাকায় দাম বাড়ছে।
আড়তদাররা মজুদ করে রেখে দাম বাড়াচ্ছে এমন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার মত নয়। এটি দ্রুত পঁচে যায়। তাই অল্প সময়ের মধ্যে বিক্রি করতে হয়। সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই দাম কমে যাবে।