তিন দিনের ম্যাচেও ইনিংস পরাজয়ের মুখে বাংলাদেশ

34

ম্যাচের প্রথম দুই দিন ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। তৃতীয় দিনে খেলা হয়নি ২৫ ওভার। এই ম্যাচেও হেরে যাওয়ার পথ খুঁজে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুটা হয়েছে বাজে। মাঝে ঝড়ের গতিতে রান তুলে নিউ জিল্যান্ড নিয়েছে বড় লিড। বাংলাদেশের এখন ম্যাচ বাঁচানোই দায়! ইনিংস হারের শংকাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২২১ রানের লিড নিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। বাংলাদেশ সোমবার চতুর্থ দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ৮০ রানে।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২১১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর নিউ জিল্যান্ড প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ৬ উইকেটে ৪৩২ রানে। দিনের শুরু থেকেই নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে ছিল দ্রুত রান তোলার তাড়না। সকালে বাংলাদেশের ক্যাচ মিস আর পরে বাজে বোলিং কাজ সহজ করে দেয় কিউইদের। ২০ রানে দুইবার জীবন পেয়ে রস টেইলর করেছেন আগ্রাসী ডাবল সেঞ্চুরি। ওয়ানডের গতিতে সেঞ্চুরি করেছেন হেনরি নিকোলস। নিউ জিল্যান্ড রান তুলেছে ওভারপ্রতি পাঁচের বেশি।
প্রথম সেশনেই ৩২.৪ ওভারে কিউইরা তুলেছিল ১৬০ রান। দ্বিতীয় সেশনে ৩১ ওভারে এসেছে ১৭৪ রান। দুই সেশনে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে দুটি জুটি। একটিতে টেলরের সঙ্গী ছিলেন কেন উইলিয়ামসন, আরেকটিতে নিকোলস। আগের দিন বিকেলে দুর্দান্ত বোলিংয়ে নিউ জিল্যান্ডের দুই ওপেনারকে ফিরিয়েছিলেন আবু জায়েদ। এ দিনের শুরুটাও তার হতে পারত দারুণ। ১৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা টেইলর আর ২ রান যোগ করেই সুযোগ দিয়েছেন দুইবার। কাভারে আপাত সহজ ক্যাচটি নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। এক বল পর দ্বিতীয় সিøপ থেকে বাঁয়ে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নিতে পারেননি সাদমান ইসলাম।
তিন বলের মধ্যে দুবার জীবন পেয়ে টেইলর ছুটতে থাকলেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে, তাকে আর থামানো যায়নি। পেছন থেকে এগিয়ে অবশ্য আগে ফিফটি করেছিলেন উইলিয়ামসন, ৬৭ বলে। খানিক পর টেইলর ফিফটি পেয়ে যান ৬১ বলে। ফিফটির পর আরেকটি সুযোগ দিয়েছিলেন টেইলর। বোলার সেই আবু জায়েদ। তার কাট শটে বল উড়ে গেছে কিপার ও প্রথম সিøপের মাঝ দিয়ে। লাফিয়েও হাত ছোঁয়াতে পারেননি কিপার লিটন। সেখান থেকে টেইলর এগিয়েছেন ঝড়ের গতিতে। ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে লেগেছে কেবল ৩৬ বল!
টেইলের সেঞ্চুরির আগেই অবশ্য আউট হয়েছেন উইলিয়ামসন। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারার পরের বলে দিয়েছেন ফিরতি ক্যাচ। ফিরেছেন ১০৫ বলে ৭৪ রান করে। দুজনের জুটিতে ১৭২ রান আসে কেবল ১৮৬ বলেই। একসঙ্গে এটি তাদের অষ্টম শতরানের জুটি, নিউ জিল্যান্ডের রেকর্ড। পেছনে পড়েছে টম ল্যাথামের সঙ্গে উইলিয়ামসের সাত সেঞ্চুরি জুটি। নিউ জিল্যান্ডের প্রথম জুটি হিসেবে দুজনের জুটির রান ছুঁয়েছে তিন হাজার। উইলিয়ামসনের বিদায়ের পরপর তাইজুলকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলে টেইলর সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ৯৭ বলে। এটি তার ১৮তম সেঞ্চুরি, বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯ টেস্টে প্রথম। লাঞ্চের পর আরও গতিময় হয় নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস। বাংলাদেশের ধারহীন বোলিংকে তুলোধুনা করে টেইলর ও নিকোলস বাড়িয়েছেন লিড। সেশনে উইকেট পড়েনি একটিও। চা বিরতির পর দুই জনই দেখা পান কাক্সিক্ষত মাইলফলকের। ১২২ বলে নিকোলস স্পর্শ করেন পঞ্চম সেঞ্চুরি। টেইলরের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি এসেছে ২১১ বলে। দ্রæত রান তোলার তাড়ায় এরপর দুজনই আউট হয়েছেন। ১৯ চার ও ৪ ছক্কায় ২১২ বলে ২০০ টেইলর, ৯ চারে ১২৭ বলে ১০৯ নিকোলস। চা বিরতির আধ ঘণ্টা পর ইনিংস ঘোষণা করে নিউ জিল্যান্ড।
বোলিংয়ের হতাশা পরে প্রবাহিত হয়েছে ব্যাটিংয়ে। ইনিংসের প্রথম বলে বাউন্ডারিতে শুরু করেছিলে তামিম। পরের বলেই অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসাকে শেষ করে দেন বোল্ট। এই বাঁহাতি পেসারের আরেকটি দুর্দান্ত ডেলিভারি ফিরিয়েছে মুমিনুল হককে। দারুণ খেলতে থাকা সাদমান উইকেট হারিয়েছেন ম্যাট হেনরির শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে। সিরিজের টানা চার ইনিংসে বিশ পেরিয়েও চল্লিশে যেতে পারলেন না তরুণ ওপেনার। মিঠুন (২৫) ও সৌম্য (১২) কোনোরকমে কাটিয়ে দিয়েছেন দিনের বাকিটুকু। তাতে নিরাপদে শেষ করার স্বস্তি হয়তো মিলেছে। কিন্তু শেষ দিন নিয়ে শঙ্কা ও অস্বস্তির উপস্থিতি এখনও আছে প্রবলভাবেই।