তিন দশকেও বিচার সম্পন্ন না হওয়া দুঃখজনক

35

গতকাল ব্যাপক আয়োজনে পালিত হয়েছে চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস। ১৯৮৮ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভা বানচাল করতে পুলির নির্বিচারে গুলি চালালে তাৎক্ষণিক ২৪ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী নিহত হন। আহতের সংখ্যাও ছিল অনেক। এ ঘটনায় আহত আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদী হয়ে পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন। গুলি করে হত্যার নির্দেশদাতা তৎকালীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা, কনস্টেবল প্রদীপ বড়ুয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, মমতাজ উদ্দিন, শাহ আবদুল্লাহ, গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল, বশির উদ্দিন ও আবদুস সালামকে আসামি করা হয়। এই ৮ পুলিশকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়ার পর বিচার শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘ একত্রিশ বছর অতিক্রান্ত হলেও এই মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এটি শুধু চট্টগ্রামবাসী নয়, পুরো জাতির জন্যই দুর্ভাগ্যের।
১৯৮৮ সালের এই দিনে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় আয়োজিত জনসভায় সরকারের ইন্ধনে তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে এ হামলা চালানো হয় বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এসময় নেতাকর্মীদের মানবঢাল শেখ হাসিনা প্রাণ রক্ষা পেলেও ২৪জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। আমরা মনে করি, দেশ ও জাতির শোষণ মুক্তি আন্দোলনে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন ইতিহাসের পাতায় তাঁদের নাম চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। কিন্তু এ হত্যাকান্ড আমাদের জন্য কলঙ্ক হয়ে আছে, বিচার বিলম্ব এ কলঙ্ক আরো যেন ভারি হতে চলছে। আমরা এই কলংক থেকে মুক্তি পেতে চাই। এ জন্য প্রয়োজন দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। এ বিচারের দায়িত্ব অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। আমরা জানি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদের শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে বিশ্বে ন্যায় বিচারের নজির স্থাপন করেছে। এই মামলার বিচার কার্যক্রমেও তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করবেন বলে সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করেন।
বৃহস্পতিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখিত সূত্রে জানা যায়, মামলার প্রধান আসামি সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা বেঁচে নেই। কয়েক বছর আগে তিনি আমেরিকায় পালিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। মির্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে গুলি চালানো হয়েছিল বলে আদালতে দেয়া বিভিন্ন সাক্ষীর সাক্ষ্যে উঠে এসেছে। মির্জা রকিবুল হুদার আগে মামলার আরো এক আসামি মারা যান। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
শেখ হাসিনার জনসভায় গুলিবর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা গণহত্যা মামলায় ১৬৮জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাসহ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেনও রয়েছেন। ইতেমধ্যে ড. অনুপম সেনসহ ৪৬ জনের সাক্ষী নেয়া হয়েছে। বাকি যারা বেঁচে আছেন তাদের অনেককে সাক্ষী দেয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্রে জানা যায়। মামলাটি এখন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে বিচারাধীন। জানা যায় শিগগিরই এ আদালতে বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে মামলাটি দ্রæত নিস্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, এ জঘন্য হত্যাকন্ডের সাথে সরাসরি জড়িত এবং তৎকালন স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগী যারা সেইদিন হত্যাকান্ডের ইন্ধন দিয়েছিলেন তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে, ১৯৮৮ সালের চট্টগ্রাম গণহত্যার সময় যারা স্বৈরাচারের সহযোগী ছিল তাদের অনেকে পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দলে যোগ দিয়ে নেতা হয়েছেন। সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। আমরা মনে করি, দলে ভিড়লেও এরা জাতি ও মানবতার শত্রæ। এদের শাস্তি পাওয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে, ২৪ জানুয়ারির গণহত্যা ছিল সুপরিকল্পিত। সেদিন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করে স্বৈরশাসন চিরস্থায়ী করার পরিকল্পনা ছিল।
একইসাথে গণহত্যার দিন বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাঁরা আজ অনেকে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাঁদেরও পুনর্বাসন করার দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তায়।