তিনগুণ ব্যয় বাড়িয়ে চার বছরেও শেষ হয়নি কাজ

81

আটশ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় তিনগুণ বাড়িয়ে করা হয় ২৪শ কোটি টাকা। চার বছরেও শেষ করা হয়নি প্রকল্পের কাজ। কাজ শেষ করতে না পারলেও ক্রমান্বয়ে বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়। সর্বশেষ চাওয়া বরাদ্দ না মেলাতে আবারও একবছর পেছানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষা নগরীর পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ‘চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড’ নামক সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের চিত্র এটি। প্রকল্পের মূল কাজের ৯২ শতাংশ অগ্রগতি দেখানো হলেও এখনো শাখা রোডের কাজই শুরু করা হয়নি। তাছাড়া রয়ে গেছে ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা সমস্যা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় ১৭.৩৫ কিলোমিটার সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ করার কথা। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে চার লেনের এ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এখনো প্রকল্পের মূল ও শাখা সড়কের কাজ বাকি রয়েছে। সাগরিকা বিভাগীয় স্টেডিয়াম এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করার কোনো পদক্ষেপই নেই। তাছাড়া ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় ফিডার (শাখা) সড়ক নির্মাণ কাজও শুরু হয়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের জুনে ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে মিলেনি সর্বশেষ বরাদ্দের টাকা। এতে করে প্রকল্পের মেয়াদ আরো একবছর বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৮৬ দশমিক ০৪ শতাংশ, ভৌত অগ্রগতি ৯২ শতাংশ।
প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আউটার রিং রোডের সার্বিক অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। গত জুনের যে বরাদ্দ ছিল তা পাওয়া যায়নি। যার কারণে কাজ এগিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। প্রকল্পের মেয়াদ আরো একবছর বাড়ানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ দ্রæত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে।
বন্দর, বিভিন্ন শিল্প কারখানা এবং বিমানবন্দরগামী যানবাহন যাতে দ্রæত চলাচল করতে পারে সেজন্য ২০০৫ সালে এ বেড়িবাঁধ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। সাগরের তীর ঘেঁষা এ প্রকল্পটি পতেঙ্গায় নির্মাণাধীন দেশের প্রথম টানেলের সাথে জাতীয় অর্থনীতির লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ তৈরি করবে। একই সাথে উপকূলীয় এই বাঁধ বন্যা ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে বন্দরনগরী, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইপিজেডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ রক্ষা করবে। ২০১৬ সালে কাজ শুরু হওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। দুই বার সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের এক হাজার ৭২০ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার ও জাইকার সহায়তা ৭০৬ কোটি টাকা।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, ইতিমধ্যে আউটার রিং রোডে যান চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়ছে। করোনার কারণে কাজ বন্ধ ছিল। ফিডার রোড, ভূমিসংক্রান্ত জটিলতার সুরাহা না হওয়াতে কিছু কাজে হাত দেওয়া যায়নি। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ২০ লাখ মানুষ জলোচ্ছাস থেকে রক্ষা পাবে। আউটার রিং রোড ও কর্ণফুলী টানেলকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে উপশহর। পতেঙ্গা সৈকতের ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠবে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র।