তাহলে জলাবদ্ধতাই কী নগরবাসীর নিয়তি

71

বৃষ্টি হলে পানি উঠে শহরে। সব সময় উঠে, এবারও উঠেছে। দু’তিনদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, জল তো জমবেই। জল জমে জলজট, তারপর জলাবদ্ধতা। বৃষ্টিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি না হলেই বরং আমরা হা পিত্যেশ করি। এখন তো ভরা আষাঢ়, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামার কথা। বৃষ্টির নিয়মে বৃষ্টি তো নামলো। কিন্তু আমাদের শহরে যে পানি চলাচল ব্যবস্থা, তাতে বৃষ্টির পানি সরে না, জমতে জমতে ভাসিয়ে দেয় চট্টগ্রাম শহর। প্রথমে রাস্তা, তারপর বাড়িঘর, অফিস-আদালত, দোকানপাট। ফলে শহর ভাসছে, আমরাও ভাসছি; চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের গুদামে পানি ওঠে ভাসছে পণ্য, বাড়িঘরে পানি ওঠে কত পরিবার যে পানির মধ্যে খাট-পালঙ, চেয়ার-টেবিল জড়ো করে উঁচু করে তার ওপর বসে বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছে-তার কোন ইয়ত্তা নেই। চুলা জ্বলছে না রান্নাও হচ্ছে না। অতএব পেট কুলহু আল্লাহু পড়লেও দানাপানি যে পড়বে না তা নিশ্চিত।
এখন চট্টগ্রামের মানুষের করণীয় কি? প্রতি বছর বর্ষা এলে জল জমে নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত হওয়া, এটা তো সংবাৎসরিক চিত্র। ‘রাজা যায় রাজা আসে’, কিন্তু জলাবদ্ধতার কোন প্রতিকার হয় না। শুধু সরকারের পরিবর্তন হয়। নগরবাসীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। কেউ কথা রাখেনি।
যারা এই সমস্যার সমাধান করবেন বলে গালভরা বুলি আউড়ে ভোট নেন; ভোট পেলে তাদের আর টিকিটিরও দেখা মেলে না। আম জনতাকে ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ভোটটা নিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারলেই হলো। তারপর তো পগার পার। পাঁচ বছরের জন্য তারা কুরসিতে আসীন হয়ে জনতার কথা ভুলে যান। কেউ কথা রাখে না। তাহলে জলাবদ্ধতাই কী আমাদের নিয়তি? এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কি কোন উপায় নেই চট্টগ্রামবাসীর?
তা-ই যদি হয়ে থাকে তাহলে এইসব ভোট, নির্বাচন এগুলির দরকার কি? সিটি কর্পোরেশনেরও দরকার কি? সিডিএরও দরকার কি? মানুষ যেভাবে পারে বাঁচার পথ বেছে নেবে।
কাজটা তো সিটি কর্পোরেশনেরই করবার কথা। সরকার যখন চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বড় একটা তহবিলের জোগান দিচ্ছে, তখন সেটা সিটি কর্পোরেশনকেই তো দেয়া উচিত ছিলো। যেহেতু মানুষের কাছে তাদেরকেই জবাবদিহি করতে হয়, সেহেতু ফান্ডটা তারাই পাক। তারা যদি করতে না পারে, মানুষ তাদেরকে ধরবে।
সিটি কর্পোরেশনকে ক্ষমতাহীন নিধিরাম সর্দার না করে চসিকের ক্ষমতা আরো বাড়ানো দরকার। সিটি গভর্ণমেন্ট-মহিউদ্দিন চৌধুরী যেটার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, সেটা এখন করা দরকার। তাহলে সিটি কর্পোরেশন নগর উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও দপ্তরকে নিয়ে বসে সমন্বিত উপায়ে জলাবদ্ধতা নিরসন সহ নগরীর সকল সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারে।