তারাচাঁদ চক্রবর্তী (১৮০৬-১৮৫৭)

65

ইয়ং বেঙ্গল দলের অন্যতম প্রগতিবাদী নেতা। ১৮০৬ সালে এক বরেন্দ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম। ডিরোজিওর অধীনে হিন্দু কলেজে তিনি শিক্ষা লাভ করেন। ইয়ং বেঙ্গলরা কোনো কিছু যাচাই না করে অন্ধ বিশ্বাসে গ্রহণ করতেন না। তারাচাঁদ এ দলেরই একজন বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি রামমোহন রায়ের অন্যতম সহকারী এবং তাঁর ব্রাহ্মসমাজের প্রথম সম্পাদক ছিলেন। সে সময় যে ক’জন বাঙালি ইংরেজি ভাষায় অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন এবং ইংরেজি সাহিত্যের ঐতিহ্য অনুযায়ী লিখন ক্ষমতা আয়ত্ত করেন, তারাচাঁদ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। সংস্কৃত, ফারসি ও হিন্দুস্থানী ভাষায়ও তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ছিল। তাঁর সাহিত্যিক ও আদর্শিক সহগামীদের মধ্যে ছিলেন রামগোপাল ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জন মুখার্জী, প্যারীচাঁদ মিত্র, রামতনু লাহিড়ী এবং রসিক কৃষ্ণ মল্লিক। তবে রামমোহন ছিলেন তাঁর গুরু। তারাচাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তিনি রামমোহন রায়, বেন্থাম, টম পেইন, হিউম এবং বেকনের ব্যক্তিত্ব ও চিন্তাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৮২২ সালে তারাচাঁদ Calcutta Journal-এ ইংরেজি অনুবাদক হিসেবে যোগদান করেন। এর এক বছর পর তিনি HH Wilson-এর সঙ্গে পুরাণের ইংরেজি অনুবাদ করেন। পরবর্তীকালে তিনি অনেক ইংরেজ ব্যারিস্টারের ড্রাফটসম্যান ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।
১৮৩৮ সালে তারাচাঁদ জ্ঞানানুশীলন সমিতি (Society for the Acquisition of General Knowledge) প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৮৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সোসাইটিরও তিনি একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি রামগোপাল ঘোষের বেঙ্গল স্পেক্টেটর পত্রিকার প্রধান লেখক ছিলেন। তারাচাঁদের নেতৃত্বে তখন আধুনিক সংস্কারবাদীদের একটি দল গঠিত হয়েছিল। এর মুখপত্র হিসেবে কাজ করত তাঁর নিজের পত্রিকা ছঁরষষ। তিনি সকলের সমানাধিকার এবং বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহসহ নানাবিধ সামাজিক কুপ্রথা বিলোপের আন্দোলন করেন।
সমসাময়িকদের মধ্যে তারাচাঁদই প্রথম ব্যক্তি যিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথার বিলোপ এবং রায়তের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ইংরেজি-বাংলা অভিধান (১৮৩২) সংকলন করে তারাচাঁদ এ বিষয়ে প্রথম বাঙালি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তাঁর এ গ্রন্থটিতখন বাঙালি তথা ভারতবাসীদের ফারসি থেকে ইংরেজি যুগে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে প্রবলভাবে সহায়তা করে। গ্রন্থটি কলিকাতা স্কুল-বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয়।
তারাচাঁদ ১৮৩২ সালে বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদসহ মনুসংহিতার মূল সংস্কৃত টেক্সট প্রকাশ করেন। তাঁর চিন্তা ও কর্মের ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির যে মিশ্রণ ঘটেছিল, সে কৃতিত্বের সমান অংশীদার তাঁর গুরু রামমোহন রায়। সূত্র : বাংলাপিডিয়া