তামাকপণ্যে মূল্য বৃদ্ধির আহব্বান

30

গত ৩১ মে ছিল বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। তাছাড়াও অন্যান্য অনেক কারণে আজ বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে দিবসটি পালিত হবে। চলতি বছরের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘তামাকে হয় ফুসফুস ক্ষয়, সুস্বাস্থ্য কাম্য তামাক নয়’। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র‌্যালির আয়োজন করেছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানের সহায়তায় থাকছে চট্টগ্রামে কর্মরত বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন।
পৃথিবীর অনেক দেশের মত বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের চিত্রও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট ট্যোবেকো সার্ভে অনুযায়ী, তামাক ব্যবহারের কারণে দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে ১০ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ, যা একই সাথে তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যুর ২৮ শতাংশের জন্য দায়ী। আরো উদ্বেগের বিষয় হলো, বাংলাদেশে শিশু সক্ষা রোগী পাওয়ার হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৭ সালে এই হার বেড়ে ৪.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৩ সালে ছিল মাত্র ২.৮ শতাংশ। দেশে ৮১ লক্ষ মানুষ কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। এমনকি বাড়িতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে ৪ কোটি ৮ লক্ষ মানুষ এবং এক্ষেত্রে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছে অনেক বেশি।
তবে তামাকের কারণে শুধু জনস্বাস্থ্যই বিপর্যয়ের মুখে পড়েনি, বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে দেশের। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ (৩৫.৩%) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার অনেক বেশি। প্রায় ৪৮ শতাংশ অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করে। অতি উচ্চবিত্তের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ২৪.৮ শতাংশ। অন্যদিকে শহরের (২৯.৯%) তুলনায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর (৩৭.১%) মধ্যে তামাক ব্যবহারের উচ্চ হার এবং নারীদের (২৪.৮%) মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের উচ্চ প্রবণতা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। দরিদ্র মানুষ অসুস্থ হলে চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
তামাকের জন্য ব্যয়িত অর্থ শিক্ষা ও চিকিৎসা দারিদ্র্য তথা মানবদারিদ্র্য মোকাবিলায় ব্যয় করা গেলে পরিবারগুলোর জীবনমানের উন্নতি ঘটত এবং একই সঙ্গে তা এসডিজি (লক্ষ্য-১ দারিদ্র্য নির্মূল) পূরণে অবদান রাখত। তামাকখাত থেকে সরকার প্রতিবছর যে পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করে, তার তুলনায় তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় অনেক বেশি ব্যয় করতে হয়। তামাকখাত থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে রাজস্ব এসেছে ২২,৮১০ কোটি টাকা। অথচ একই সময়ে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৩০,৫৬০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে তামাকের কারণে জাতি অনেক অপূরণীয় ক্ষতির ভার বহন করে চলেছে। এ অবস্থায় তামাকের ব্যবহার হ্রাসে তামাকের দাম বৃদ্ধির দাম জানাচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। বিজ্ঞপ্তি