তাপমাত্রা বাড়ছে, আসছে বজ্রঝড়

195

শীতের বিদায়ে প্রকৃতিতে বাসন্তী হাওয়ার নাচনের সাথে পাল্লা দিয়েই যেন বাড়ছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ। তাও আবার কোনও এক প্রান্তে নয়, বরং দেশজুড়ে। ফাগুনের যাত্রাশুরুর প্রথম দশদিনেই তাপমাত্রার পারদ তিরিশের ঘর পেরিয়ে তেত্রিশেও চড়েছিল। তবে দিনশেষে তা ৩২ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই থিতু হয়েছে। গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর এবং বরিশালের পটুয়াখালীতে দেশের সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণকারী দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস বলছে, মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী বা বজ্রঝড়ের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টিবলয় তৈরি হয়েছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির ছিটেফোঁটারও দেখা মিলেছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এই বৃষ্টিবলয় দেশজুড়ে বিস্তার লাভ করতে পারে। তার ভেতরেই যে কোনও সময় আঘাত হানতে পারে মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড়। এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর বছরের প্রথম তিনমাসের (জানুয়ারি-মার্চ) আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে মার্চ মাসেই তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চড়ার কথা বলা হয়েছে। তার সাথে একই সময়ে হবে প্রবল কালবৈশাখী ও বজ্রঝড়। চলতি ফেব্রæয়ারির বাকি ক’দিনে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে পারে। এ সময়ে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুই দিন বজ্রঝড় হতে পারে। আর মার্চে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’দিন মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী কিংবা বজ্রঝড় এবং অন্যত্র দুই থেকে তিন দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী কিংবা বজ্রঝড় হতে পারে। এছাড়া, মার্চ মাসের দিনের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়ে প্রায় ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত চড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন জানান, প্রকৃতিতে এখন কালবৈশাখীর প্রাক-প্রস্তুতি পর্ব চলছে। নানা পরিবর্তনের আয়োজন চলছে। আবহাওয়ার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে তাপমাত্রা। তার সাথে কালবৈশাখী ঝড়ের আয়োজনও চলছে প্রকৃতিতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নামে বৈশাখ যুক্ত থাকলেও শীতের বিদায়ের পর ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, সমগ্র পূর্ব এবং উত্তরপূর্ব ভারতে যে ঝড় বয়ে যায় তাই কালবৈশাখী। বাংলা বর্ষের শুরুতে মানে বৈশাখ মাসে এ ঝড় তুলনামূলকভাবে বেশি হয় বলেই এ ঝড় কালবৈশাখী নামে পরিচিত লাভ করেছে। কালবৈশাখীর আসল নাম,‘নর-ওয়েস্টার।’ অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এই ঝড় ধেয়ে আসে বলে একে বলে ‘নর-ওয়েস্টার’। তাই বলে কালবৈশাখী শুধুমাত্র বৈশাখ মাসেই (মানে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত) দেখা যাবে-এমনটি নয়। কালবৈশাখী এবং সাধারণ ঝড়ের মধ্যে পার্থক্য বিচার করার কিছু মাপকাঠি রয়েছে। মোটা দাগে বলা যায়, ঝড়ের গতিবেগ ঘন্টার ৫০ কিলোমিটারের বেশি এবং স্থায়ীত্ব অন্তত একমিনিট হলে সেটাই কালবৈশাখী ঝড়।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল রবিবার সকাল ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার দৃশ্যপটে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানতঃ শুষ্ক থাকতে পারে। ভোরের দিকে কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি আর দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী দু’দিন বা ৪৮ ঘন্টার আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এশিয়া অঞ্চলের আবহাওয়াবিদরা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে গণনা করেন।