তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু আইসিসির

38

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি-না, তার মূল তদন্ত শুরুর আগে প্রাথমিক যাচাই বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক আদালতের প্রতিনিধিরা। আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির পক্ষ থেকে তার একটি প্রতিনিধিদল এই কাজের জন্য গত বুধবার ঢাকায় পৌঁছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইসিসি প্রতিনিধিরা সপ্তাহখানেক বাংলাদেশে থাকবেন, এবং এ সময়ে তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যাবেন।
ব্রাসেলসে আন্তর্জাতিক আইনের বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দিন বলেন, আইসিসির এই উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্বকে এটি চিন্তায় ফেলে দেবে। কিন্তু এই যাচাই বাছাই কি বিচার নিশ্চিত করবে, বিশেষ করে মিয়ানমার যেখানে আইসিসির সনদেই সই করেনি, সেখানে এই বিচারের এখতিয়ার কি আন্তর্জাতিক আদালতের রয়েছে?
আহমেদ জিয়াউদ্দিন বলছেন, আইসিসির বিচারকদের প্যানেল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, মিয়ানমার সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ না হলেও সে দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার করার এখতিয়ার আদালতের রয়েছে। কারণ, মিয়ানমারে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে এমন একটি দেশকে যেটি আইসিসির সদস্য।
জোরপূর্বক দেশ থেকে নাগরিকদের বের করে দেওয়া এবং অন্যান্য অপরাধের কারণে পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে আইসিসির সদস্য দেশ বাংলাদেশকে। ফলে, মিয়ানমারের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার করার এখতিয়ার আইসিসির রয়েছে। আইসিসির সনদেই সেই ক্ষমতা বিচারকদের দেওয়া হয়েছে।
বিচারকদের সেই সিদ্ধান্তের পরেই আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি তদন্ত প্রক্রিয়ার সূচনা করেছেন। প্রাথমিক যাচাই বাছাইয়ের রিপোর্ট পাওয়ার পর আইসিসির কৌঁসুলি যদি মনে করেন পূর্ণ তদন্ত শুরু করার যথেষ্ট কারণ সেখানে রয়েছে, তিনি তখন তদন্ত শুরুর জন্য বিচারক প্যানেলের অনুমতি চাইবেন।
প্রধান বাধা আসবে মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে। গতবছর যখন আইসিসির কৌঁসুলি স্ব-উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন থেকেই মিয়ানমারের সরকারের পক্ষ থেকে বলা শুরু হয়, এরকম কোনো তদন্তের এখতিয়ারই আইসিসির নেই।
আইসিসি যদি পূর্ণ তদন্ত করে, মিয়ানমারের এক বা একাধিক নাগরিককে যদি অভিযুক্ত করা হয় এবং তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে তার জন্য মিয়ানমার সরকারের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আসামীদের ধরে আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা মিয়ানমার সরকারকে করতে হবে।
আহমেদ জিয়াউদ্দিন মনে করেন, মিয়ানমার সরকার তা করবে সেই সম্ভাবনা খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে আইসিসি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দ্বারস্থ হতে পারে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ একমত হয়ে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ, কারণ রাশিয়া এবং চীন রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে অনিচ্ছুক। ষ পৃষ্ঠা ৯, কলাম ৪
ষ শেষ পৃষ্ঠার পর

নিরাপত্তা পরিষদের এই দুই স্থায়ী সদস্য চায় বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিক-ভাবে এই সমস্যার সমাধান করুক।
আহমেদ জিয়াউদ্দিন মনে করেন, মিয়ানমার সরকার এবং নিরাপত্তা পরিষদের সহযোগিতা না থাকলেও আইসিসির বিচার প্রক্রিয়া মিয়ানমারের ওপর সাংঘাতিক চাপ তৈরি করতে পারে।
আগের বিভিন্ন বিচার প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ধরে নিতে পারি যে মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা বা সেনা নেতৃত্ব অভিযুক্ত হতে পারেন। তাদেরকে আইসিসি তলব করতে পারে। তারা না এলে আইসিসি আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে।
সে ধরনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে অভিযুক্তদের পক্ষে দেশের বাইরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে কারণ, ১২০টিরও বেশি আইসিসির সদস্য দেশের ওপর তখন ঐ পরোয়ানা বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। অভিযুক্ত হলে মিয়ানমারের ঐ সেনা কর্মকর্তাদের বিদেশে যাবার ব্যাপারে দশবার ভাবতে হবে। তারা বেকায়দায় পড়ে যাবেন।
তবে আহমেদ জিয়াউদ্দিন বলছেন, প্রাথমিক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া থেকে বিচার প্রক্রিয়া শুরু পর্যন্ত লম্বা সময় লেগে যায়। বহু দূরের ব্যাপার। এটি কীভাবে হবে, কত সময় লাগবে বলা কঠিন।