ঢাকা যেতে ৩৮০টি ফ্রি টিকেট চায় কৃষক লীগ

19

আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের জাতীয় সম্মেলন হবে ঢাকায়। সেই সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১৯০ জন নেতাকর্মী। সে জন্যে তারা বাংলাদেশ রেলওয়েকে অনুরোধ করেছেন তাদের যেন বিনামূল্যে ৩৮০টি টিকেট দেয়া হয়। কৃষক লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এ নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। আগামী ৬ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক লীগের এই জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এতে চট্টগ্রাম থেকে ১৯০ জন প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক যোগ দেবেন। তারা মূলত ৫ নভেম্বর ঢাকা যাবেন এবং ৬ নভেম্বর সম্মেলন শেষে রাতে চট্টগ্রামে ফিরবেন।
তাদের এই যাওয়া আসার জন্যই রেলওয়ের কাছে তূর্ণা-নিশীথা এক্সপ্রেসের চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রামের প্রথম শ্রেণির ফ্রি টিকেট চেয়েছে সংগঠনটি। কৃষক লীগের এমন আবেদনে অনেকটাই বিব্রত বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে তারাও কৃষক লীগ নেতাদের লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে তাদের বিনামূল্যে টিকেট সরবরাহের কোন বিধান নেই। তাই তাদের ফ্রি টিকেট দেয়াও সম্ভব হয়নি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, কৃষক লীগের আবেদনটি আমরা পেয়েছি। রেলওয়েতে ফ্রি টিকেট দেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। টিকেট পেতে হলে টাকা দিয়ে কিনতে হবে।
রেলওয়ে সূত্রমতে, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের প্রথম শ্রেণির প্রতিটি টিকেটের দাম ৭৩৫ টাকা। সেই হিসেবে ক্ষেত্রে ৩৮০টি টিকেটের দাম আসে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩০০ টাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ অক্টোবর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (সিসিএম) উদ্দেশ করে চিঠি দেয় বাংলাদেশ কৃষক লীগ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটি।
সংগঠনটির প্যাডে সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই ফ্রি টিকেটের আবেদন জানানো হয়। আবেদনের সঙ্গে ১৯০ জন প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকের নাম, পরিচয় ও মোবাইল ফোন নম্বরও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে দলীয় একটি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কোন সহযোগী সংগঠন এভাবে কি রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনামূল্যে চাইতে পারে? এ ব্যাপারে কৃষক লীগের উত্তর জেলা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান তারা দরিদ্র কৃষক হিসেবে এই ফ্রি টিকেটের আবেদন করেছিলেন।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন, আমরা গরিব কৃষক। বেশিরভাগের আর্থিক অবস্থা ভাল না। ট্রেনের টিকেট কেনার টাকা নাই। তো এইজন্য আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি যে ফ্রি টিকেট দেয়ার কোন সিস্টেম আছে কিনা। আমরা চেয়েছি আমাদের ১৯০জনের যাওয়া আসার জন্য যেন একটা বগি দেয়া হয়।
এদিকে প্রতিনিধি তালিকায় থাকা অনেকেই ট্রেনের টিকেট ফ্রি চাওয়ার বিষয়টিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের দাবি যে তারা প্রত্যেকে ট্রেনের টিকেটের জন্য এক হাজার টাকা করে দিয়েছেন। তারপরও সংগঠনকে এভাবে হেয় করার ঘটনায় তারা ক্ষোভ জানান।
এ ব্যাপারে ইসলাম জানান, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যখন জানিয়ে দেয় যে তারা ফ্রি টিকেট দিতে পারবে না, তখনই তারা সংগঠনের প্রতিনিধিদের থেকে এই চাঁদা সংগ্রহ করেন। সম্মেলনে যাওয়া-আসার ভাড়া এবং খাওয়া বাবদ এই অর্থ নেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, যখন রেলওয়ে থেকে জানিয়ে দিল যে তাদের ফ্রি দেয়ার সিস্টেম নাই, তখন আমরা সবাইকে বললাম যারা যারা যেতে ইচ্ছুক তারা যেন চাঁদা দেয়। যেতে আসতে খাওয়া দাওয়া করার তো খরচ আছে। আগে আমরা ১৯০ জনের ফ্রি টিকেটের আবেদন করেছিলাম। সেটি নাকচ হওয়ার পর এখন ১৪০জনের জন্য আবার দরখাস্ত করেছি টাকা দিয়ে টিকেট কেনার জন্য।
তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে, একসঙ্গে এভাবে ১৪০ জন যাত্রীর জন্য টিকেট বিক্রি করা যাবে কীনা, সেটা তাদের দেখতে হবে। কারা বিনামূল্যে টিকেট পাবেন বা কাদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা থাকবে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের কিছু নিয়ম-নীতি আছে।
বাংলাদেশের কয়েকটি সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য মতে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে রেলওয়ের প্রথম শ্রেণিতে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে দেয়া কার্ড দিয়ে ট্রেনের সর্বোচ্চ শ্রেণিতে ভ্রমণ করতে পারবেন বিনামূল্যে।
এর জন্য তাদের কার্ডের নাম্বার স্টেশনের কম্পিউটারাইজড টিকেট কাউন্টারে দিলে টিকিট বের হবে এবং এতে কোন টাকাই দরকার হবে না। কিন্তু সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি ভ্রমণের সুযোগ নেই। তাদের জন্য কেবল অশ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকিট দেয়ার সুবিধা আছে। যদিও সেই টিকিটের পুরো দাম পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া প্রতিটি ট্রেনে চারটি আসন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
ট্রেনগুলোয় প্রতিবন্ধীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০টি টিকেট অর্ধেক মূল্যে সরবরাহের সুযোগ রয়েছে। কোটার মাধ্যমে এই টিকেট দেয়া হয়। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা ওয়ারেন্টের মাধ্যমে ফ্রিতে টিকেট সংগ্রহ করতে পারেন। ওই টিকিটের টাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পরে রেলওয়েকে পরিশোধ করা হয়। এছাড়া দাম পরিশোধ করলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যেকোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ বগির ব্যবস্থা করতে পারে।