ঢাকায় ভোটের আগেই কারচুপির প্রক্রিয়া শুরু

23

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোট কারচুপির প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই অভিযোগ করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের দিকে ইঙ্গিত করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমি একটু আগে দেখলাম, ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের যিনি প্রার্থী উনাকে অভ্যর্থনা দেওয়ার জন্য স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সারিবদ্ধভাবে ফুল নিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে। সোশাল মিডিয়াতে সংবাদটি চলে এসেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করছে, আপনারা কি জন্য দাঁড়িয়েছেন? তারা বলেছে, আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে অভ্যর্থনা দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছি। আপনাদের কে বলেছে? তারা বলছে, স্কুলের পক্ষ থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন বুঝে দেখেন নির্বাচনের অবস্থা। প্রি-ইলেকশন রিগিং তো শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অপেক্ষার আর প্রয়োজন নেই’।
এরপর কেন বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তার ব্যাখ্যাও দেন বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমরা তারপরেও নির্বাচনে যাচ্ছি। কারণ এজন্য যে, একেকটি নির্বাচন কারচুপির একেকটি মাইলস্টোন। একেকটি নির্বাচন একেকটি গণতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রমের মাইলস্টোন। একেকটি নির্বাচন এই সরকারের মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়ার মাইলস্টোন। এসব যোগ করে তাদেরকে বিতাড়িত করতে হবে’।
বাংলাদেশ জাসদের নেতা মইন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির দিক থেকে তোলা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের উপনির্বাচনের খবরাখবর আমার কাছে এসেছে। সেখানে প্রায় সকল কেন্দ্র সরকারি দল দখল করে নিয়েছে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভয়ভীতির মাধ্যমে এবং ইভিএমের মাধ্যমে তারা সুন্দরভাবে ভোট নিয়ে নিয়েছে। ভোটার ভোট দিক আর না দিক, সরকারি দল কেন্দ্র দখল করে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করেছে। খবর বিডিনিউজের
কেন্দ্র দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচন স্থগিত করে নতুন করে ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনকে ঘিরেও একই পরিস্থিতির অভিযোগ জানিয়ে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘প্রচারণার সময়ে গ্রেপ্তার করবে না বলেছে, নির্বাচন কমিশনে আমি নিজে গিয়েছিলাম, আমাকে ইসি ওয়াদা করেছে ৩০ তারিখ পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তার হবে না, কোনো অভিযান চলবে না। গ্রেপ্তারও চলছে, অভিযানও চলছে, আক্রমণ চলছে, হামলা চলছে এবং হামলার মাধ্যমে একটা ভয়ভীতির পরিবেশ তারা সৃষ্টি করেছে’।
‘ডিজিটাল ভোট চুরি করতেই ইভিএম’ : ‘নির্বাচনে ইভিএম চাপিয়ে দেওয়া ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় ইভিএমের বিরোধিতা করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা ইভিএমকে চিরতরে যদি বিদায় করতে না পারি, বাংলাদেশে আগামী দিনে নির্বাচনী ব্যবস্থা বলে আর কিছু থাকবে না। আমি মনে করি না, এই মেশিনের মাধ্যমে দেশের মানুষ কোনো দিন তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে। আজকে তাই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ইভিএম বন্ধ করতে হবে। নতুবা ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগামী দিনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে; সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে’। তিনি বলেন, ‘যেখানে সিংহভাগ নিবন্ধিত বিরোধী দলের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে এককভাবে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার পেছনে উদ্দেশ্য কি আপনার বোঝার তো বাকি নেই। তাদের একমাত্র পথ হচ্ছে এখন ইলেক্ট্রনিকালি ভোট চুরি করতে হবে, ডিজিটালি ভোট চুরি করতে হবে। নিরবে যেটা জনসমক্ষে ধরা পড়ে এই ধরনের ভোট চুরি থেকে সরে গিয়ে তারা এখন ডিজিটালি ভোট চুরির পথে গেছে’।
ভোট গ্রহণে ইভিএমের ব্যবহার বাতিলের দাবি জানিয়ে আামীর খসরু বলেন, ‘এই মেশিনের ভোট প্রমাণ করার কোনো সুযোগ নাই। সুতরাং এটা বন্ধ করা ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। সত্যিকার অর্থে যারা প্রযুক্তি জন্ম দেয়, যাদের প্রযুক্তির বিষয়ে গভীর জ্ঞান আছে, তারা কেন ইভিএম বাদ দিয়েছে? যদিও তাদের সরকার প্রশ্নবিদ্ধ নয়, তাদের নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ নয়, তাদের নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ নয়, তারপরেও তারা বাদ দিয়েছে। আর এখানে সব কিছু প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে সরকার প্রশ্নবিদ্ধ, নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ, নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট যারা আছে সবাই আজকে প্রশ্নবিদ্ধ, দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ’।
সংগঠনের সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান পলাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির আহমেদ আজম খান, খায়রুল কবির খোকন, শ্যামা ওবায়েদ, বিলকিছ ইসলাম, নাসির হায়দার, কাজী মনিরুজ্জামান মনির, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শোয়েব আহমেদ বক্তব্য রাখেন।