ঢাকায় ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বইমেলার অনেক স্টল

69

ফাল্গুনের প্রথম ভাগে ঝড়-বৃষ্টিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলার হাজারো বই ‘পুরোপুরি নষ্ট’ হয়ে গেছে বলে প্রকাশকরা জানিয়েছেন। গতকাল রবিবার ভোর থেকে কয়েক দফায় বজ্রসহ দমকা হাওয়া ও ঝড়-বাদলে মেলার দুই ডজনের বেশি স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মেলার সহ-আয়োজক বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ জানিয়েছেন।
ঝড়ো বাতাসে মেলার বেশ কয়েকটি স্টলের ছাদ উড়ে গেছে। কোনো কোনোটিতে টিনের ফাঁক গলে পানি পড়ে সয়লাব হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে পর্দা উড়ে পানি ঢুকেছে স্টলে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেলার শিশু চত্বর। বিকাল পর্যন্তও সেখানে পানি জমে আছে।
ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘ঝড়ে বইমেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাজারো বই একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে দেখেছি আমি’। প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপনে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। খবর বিডিনিউজের
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ফাল্গুনের প্রথম ভাগে ঝড়ো বৃষ্টির আভাস থাকায় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই সতর্ক করে দিয়েছিল প্রকাশকদের। গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে মাইকিংও করা হয় গ্রন্থমেলা চত্বরে। প্রকাশকরা প্রস্তুতি নিলেও তা ‘পর্যাপ্ত ছিল না’ বলে মনে করেন প্রকাশ সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ। যেসব স্টল একেবারেই ধসে পড়েছে, তাদের স্টল নির্মাণে ত্রুটির কথা বলেছেন তিনি। ফরিদ আহমেদ জানান, ঝড়ো বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বইমেলার শিশু চত্বর। বাংলা একাডেমির ভেতরে বহেরা তলায় লিটল ম্যাগ চত্বরেও বেশ কিছু স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশ, অ্যাডর্ন, মাওলা ব্রাদার্স, ইউসিএল, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, অন্বেষা, মূর্ধন্যসহ অনেকগুলো স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঝড়-বাদলে।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের অন্যতম স্বত্বাধিকারী কামরুল হাসান শায়ক জানান, তার প্রকাশনীর ৩০০ বই ভিজে নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মেলায় বড় প্রকাশন (প্যাভিলিয়নগুলো) খোলা জায়গায় পড়েছে। দমকা হাওয়ার ঝাপটা তাই বেশি লেগেছে প্যাভিলিয়নে’।
উৎস প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মোস্তফা সেলিম বলেন, তার প্রকাশনীর চার শতাধিক বই একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। দু-তিন ফোঁটা পানি পড়লেই তো বই নষ্ট হয়ে যায়। সেখানে এতো পানি ঢুকেছে! আমার প্রায় ৪০০ বই একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির জন্য আগের রাতে সব ঢেকেঢুকেই গিয়েছিলাম। কিন্তু ঝড়ো বাতাসে ত্রিপল উড়ে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে!’
অন্যপ্রকাশের স্টলও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে সেখানকার বিক্রয়কর্মী টিপু। তিনি বলেন, ‘স্টলের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বই একেবারে ভিজে গেছে। প্যাভিলিয়নের অবস্থাও বাজে। সব ঢেকেঢুকে গিয়েছিলাম রাতে। সকালে এসে দেখি ত্রিপল উড়ে দূরে পড়ে আছে। বই ভিজে একাকার’।
‘বাবুই’ প্রকাশনীর পাঁচ শতাধিক বই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে বলে এর মালিক মুকুল মজুমদার জানিয়েছেন। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর বিকাল ৩ টায় মেলা শুরু হলেও গ্রন্থমেলার শিশু চত্বরে পানি জমেছিল বলে জানান শিশু চত্বরের বাবুই প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী কাদের বাবু। শিশু কিশোর প্রকাশনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা বাবু বলেন, ‘শিশু চত্বরের শিশু রাজ্য স্টলটি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া কালান্তর, মাহি, চিলড্রেনস কর্নার ও ফুলকিসহ অনেকগুলো স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’। বাবু বলেন, ‘প্রচুর বই ভিজে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শিশু চত্বরেই সবচেয়ে বেশি। দুপুর গড়িয়ে এখন বিকাল হয়ে গেছে। অথচ শিশু চত্বরে পানি জমে আছে’।
প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদও শিশু চত্বর নির্মাণে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘মেলার শিশু চত্বরটি অবহেলিত, তা প্রমাণিত হলো। সিসিমপুরের স্টলের সামনে ইট বসানো হয়নি। সেখানে পানি জমে আছে। মেলায় আগত কেউ সেখানে যেতে পারছেন না’।
লিটল ম্যাগ কর্নার দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা আমিনুর রহমান সুলতান বলেন, ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টিতে লিটল ম্যাগ চত্বরেও বেশ কিছু বই ভিজেছে। তবে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম।
নান্দনিকতার জন্য বইমেলায় উভয় অংশে সাঁটানো ব্যানার, ফেস্টুনগুলোও মাটিতে লুটিয়েছে।
অন্যান্যবারের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি কম : বাংলা একাডেমি
ঝড়-বৃষ্টিতে বইমেলায় ক্ষয়ক্ষতি অন্যান্যবারের তুলনায় কম হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ও গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ।
রবিবার বিকালে বাংলা একাডেমির মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে বইমেলা বিষয়ক সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এবার বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই প্রকাশকদের সতর্ক করে দিয়েছে বলে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ফাল্গুনের প্রথম ভাগে ঝড়ো-বৃষ্টির আভাস থাকায় আমরা মেলায় অংশগ্রহণ করা সকল প্রকাশকদেরই বলেছিলাম, ‘ঝড়-বৃষ্টি ও অগ্নি বীমা’ করতে এবং তা সকলেই করেছে। তাই বইমেলায় অন্যান্যবারের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি কম’।
কয়েকজন প্রকাশক স্টল নির্মাণে পুরনো টিন ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ নাকচ করে জালাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা এবার সবগুলো টিন নতুন দিয়েছি। এছাড়া লটারি হওয়ার দিন ২৩ জানুয়ারি পর্যন্তও এ ব্যাপারে তারা কোনো কথা বলেনি’।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যাণার্জী উপস্থিত ছিলেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ঝড়-বৃষ্টির আভাস রয়েছে। পূর্বাভাস বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘এটি মাথায় রেখে আমাদের পাশাপাশি প্রকাশকরাও যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তবে তা সকলের জন্যই ভালো হবে’।