ঢাকার ৩ এলাকায় ওয়াসার পানিতে ক্ষতিকর ‘কলিফর্ম’

66

ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের মধ্যে তিনটি এলাকার পানিতে জনস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর ‘কলিফর্ম’ ব্যাকটেরিয়া পাওয়ার কথা জানিয়েছে হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত চার সদস্যের কমিটি। আরও একটি এলাকায় পাওয়া গেছে নন-প্যাথজেনিক ব্যাকটেরিয়া, যেগুলো নিজেরা ক্ষতিকর না হলেও ক্ষতিকর জীবাণুর আধার হতে পারে। দশটি বিতরণ জোনের পানিতেই মাঝারি বা অতি মাত্রায় পানি শোধনে ব্যবহৃত রাসায়নিকের উপস্থিত পাওয়া গেছে, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। খবর বিডিনিউজের
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চে রবিবার এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। পরে আদালত এ প্রতিবেদন সম্পর্কে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য দুই সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়। আগামী ২৪ জুলাই বিষয়টি পরবর্তী শুনানির জন্য আসবে।
কমিটির ওই প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান। ঢাকা ওয়াসার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এম মাসুম। আর রিটকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।
রাজধানীর ৩৪টি পয়েন্ট থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। চার সদস্যের কমিটিকে ২ জুলায়ের মধ্যে সেই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমানের মতামত শুনে হাই কোর্ট গত ২১ মে ওই আদেশ দেয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে রিজওয়ানা রহমান ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানি মনিরুল আলম, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম বদরুজ্জামানকে সদস্য করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসোলেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে পানির নমুনা পরীক্ষা করতে বলা হয় আদালতের ওই আদেশে।
সেই পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের বিভিন্ন এলাকা থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে এবং দূষণের অভিযোগ রয়েছে এমন ৩৪টি স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৮টি নমুনাতে ব্যাকটেরিয়া দূষণে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিতরণ জোন-১ এর পুরাণ ঢাকার পাতলাখান লেইন, জোন ৪-এর মিরপুরের কাজীপাড়া এবং বিতরণ জোন-৭ এর শনির আখড়া, ধনিয়া থেকে সংগ্রহ করা পানিতে কলিফর্ম পাওয়া গেছে। আর বিতরণ জোন-২ এর পানির নমুনায় পাওয়া গেছে নন-প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া। তবে যে চারটি উৎস থেকে ওয়াসা পানি সংগ্রহ করে, তার কোনোটিতেই ব্যাকটেরিয়া দূষণ পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
এর অগে গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি বিতরণ জোনের ৫৯ এলাকার পানিতে ময়লা থাকার প্রবণতা বেশি বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দেয় ওয়াসা। সেই প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয় গত ১৩ মে।
বাংলাদেশের পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি ও দরিদ্রতা নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন ও প্রতিবেদন নিয়ে প্রকাশিত খবর যুক্ত করে গত বছর ১৪ অক্টোবর হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন তানভীর আহমেদ। সে বিষয়ে শুনানি নিয়ে আদালত পানি পরীক্ষার নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করে।
ওয়াসার নিরাপদ পানি সরবরাহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং নিরাপদ পানি সরবরাহে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
স্থানীয় সরকার প্রশাসন, স্বাস্থ্য সচিব, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ অপরিচ্ছন্ন এবং অনিরাপদ উৎসের পানি পান করছে। পাইপলাইনের পানির ৮২ শতাংশেই রয়েছে ই-কোলাই, যা পাকস্থলী ও অন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে।