ঢাকাকে ‘প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন’ ঘোষণায় হাইকোর্টের মত

38

দূষণ পরিস্থিতি বিবেচনায় মহানগরী ঢাকাকে ‘প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন’ ঘোষণা করা দরকার বলে মত দিয়েছে আদালত। বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধ সংক্রান্ত জনস্বার্থে করা এক রিট মামলার শুনানিতে বুধবার বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে। এ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আইনগত বিষয় বিবেচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন।
শিল্প মালিক সমিতির পক্ষে শুনানি করছিলেন আইনজীবী সিদ্দিকুর রহমান। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী আমাতুল করিম ও মনজিল মোরসেদ উপস্থিত ছিলেন। খবর বিডিনিউজের
শুনানির এক পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, পত্র-পত্রিকায় দেখলাম ঢাকা পৃথিবীর দূষণতম শহরে স্ট্যান্ড করে বসে আছে। দুই না তিন নাম্বারেই জানি আছে। এখন ‘প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন’ হিসেবে এটিকে ঘোষণা দেওয়া দরকার। আইনজীবী মনজিল এ মন্তব্যে সমর্থন জানালে বিচারক গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর বলেন, আপনি এ নিয়ে সম্পূরক আবেদন করতে পারেন। অথবা আলাদা আবেদনও করতে পারেন। তখন মনজিল মোরসেদ আদালতকে জানান, এ নিয়ে তার চিন্তা আছে।
আদালতের মন্তব্য উদ্বৃত করে পরে তিনি বলেন, আদালত বলেছে, ঢাকাকে বিশ্বের এক নম্বর দূষিত শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যদি এই রকম দুরাবস্থা হয়, সেক্ষেত্রে ‘ইকোলোজিক্যাল ক্রিটিকাল এরিয়া’ ঘোষণা করার বিধান আছে পরিবেশ আইনে।
এখন যেহেতু ঢাকা সবচেয়ে দূষিত নগরী, তাই গোটা ঢাকা শহরটাকেই ইকোলোজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষণার সময় এসেছে।
এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করবেন কিনা জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, আদালতের এ আলোচনাটা শুনলাম, নিশ্চয়ই এর আইনগত বিষয়গুলো বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেব।
এর আগে গত ২০ জানুয়ারি হাই কোর্ট বুড়িগঙ্গা নদী দূষণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ও বর্জ্য সংশোধনাগার ছাড়া চলা ২৩১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়।
সেই সঙ্গে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি পাবার পর ওইসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস ও ডিপিডিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতের নির্দেশনা কার্যকর করতে সহযোগিতা দিতে ঢাকা জেলা প্রশাসক, ডিএমপি কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দেয় আদালত।
এই আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আগামী ২০ ফেব্রæয়ারির মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০১০ সালের বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইনের ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা’ বিষয়ক ৫ ধারায় বলা হয়েছে:-
(১) সরকার যদি এই মর্মে সস্ত্তষ্ট হয় যে, পরিবেশের অবক্ষয়ের কারণে কোন এলাকার প্রতিবেশ ব্যবস্থা (ঊপড়-ংুংঃবস) সংকটাপন্ন অবস্থায় উপনীত হইয়াছে বা হইবার আশংকা রহিয়াছে তাহা হইলে সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (বড়ষড়মরপধষষু ঈৎরঃরপধষ অৎবধ) ঘোষণা করিতে পারিবে এবং অবিলম্বে উক্ত সংকটাপন্ন অবস্থা হইতে উত্তোরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত সকল প্রজ্ঞাপনে সংশ্লিষ্ট এলাকার সীমানা ও মানচিত্রসহ আইনগত বর্ণনার উল্লেখ থাকিবে এবং এই সকল মানচিত্র ও আইনগত বর্ণনা সংশ্লিষ্ট এলাকাতে প্রদর্শিত হইবে এবং তাহা উক্ত এলাকার দালিলিক বর্ণনা হিসাবে বিবেচিত হইবে।
(৩) কোন এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার পর সরকার সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ করিবে।
(৪) প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন বলিয়া ঘোষিত এলাকায় কোন্ কোন্ ক্ষতিকর কর্ম বা প্রক্রিয়া চালু রাখা বা শুরু করা যাইবে না তাহা সরকার উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত প্রজ্ঞাপনে নির্দিষ্ট করিয়া দিবে।